স্টাফ রিপোর্টার- বঙ্গবাজারে ‘আওয়ামী লীগ আগুন দিয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ আনলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, নিরপেক্ষ তদন্ত হলে ওই ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশীল লোকেদের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসবে।
বঙ্গবাজারসহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না, আন্দোলনের ব্যর্থ হয়ে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি এবং তা তদন্ত করা দরকার- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পরদিন শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন বিএনপি মহাসচিব।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে ফখরুল বলেন, প্রকৃত নিরপেক্ষ তদন্ত যদি হয়, তাহলে সম্ভাবনা আছে এটা বেরিয়ে আসার যে, এটা সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের দ্বারাই হয়েছে।
কেন আওয়ামী লীগ এই ঘটনা ঘটাবে বলে মনে করছেন ফখরুল? তিনি বলেন, বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগের শাসকগোষ্ঠীর কিছু অত্যন্ত প্রভাবশালী লোক বঙ্গবাজারকে দখল করার জন্য চেষ্টা করছিলেন, কাজ করছিলেন। আমরা যেটা চেয়েছি যে, একটা নিরপেক্ষ তদন্ত।
দেশে কাপড়ের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি এই মার্কেটে গত মঙ্গলবার আগুন লাগে। ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়।
বঙ্গবাজারের উত্তর পশ্চিম কোণে সাততলা এনেক্সকো টাওয়ার, তার পূর্ব পাশে মহানগর কমপ্লেক্স মার্কেটও পুড়ে যায়। আগুন বঙ্গবাজারের পশ্চিম পাশের সড়কের অপর প্রান্তের দুটি মার্কেটেও ছড়ায়। এ কয়েকটি মার্কেট মিলিয়ে ৫ হাজারের মত দোকান ছিল; পুড়ে যায় তার অধিকাংশ। এতে ৫ হাজারের মত ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে একটি হিসাব দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইয়েস- আমি সেই কথাটাই বললাম। আমি কথা তো সেখানে বলেছি যে, প্রকৃত নিরপেক্ষ তদন্ত যদি হয়, তাহলে বেরিয়ে আসবে যারা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী, তারাই এটার সঙ্গে জড়িত এবং আমরা …. এই পর্যন্ত বলতে চাই।
বঙ্গবাজারে আগুন এবারই প্রথম নয়। বিএনপি সরকারে থাকার সময় ১৯৯৫ সালেও আগুনে ছাই হয়েছিল সে সময়ের মার্কেটটি। ২০১৮ সালেও সেখানে আগুন লাগে।
এদিকে, বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য লোক হাসানোর জন্য বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, আরে ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য ধরে আপনি (সাংবাদিক) প্রশ্ন করার সময়ে অন্যরা (সাংবাদিকরা) যেভাবে হাসতেছিল, আমার মনে হয় রোজার দিনে কষ্টে থাকা মানুষকে হাসানোর জন্য উনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। আর কিছু না।
রানা প্লাজা (সাভারে গার্মেন্টস কারখানার ভবন) ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল, বুঝেন নাই? সেই একই কথা এখানে ওরা বলছে…।
আগের দিন ঢাকার আজিমপুরে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ইফতার সামগ্রী বিতরণের অনুষ্ঠানে বঙ্গবাজারে আগুন প্রসঙ্গে কাদের বলেন, দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে না দাঁড়িয়ে, বিএনপি ও ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উপর দোষ চাপাচ্ছে। বঙ্গবাজারসহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না, আন্দোলনের ব্যর্থ হয়ে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি এবং তা তদন্ত করা দরকার।
শুক্রবার ১২ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে সরকার পদত্যাগসহ ১০ দফা আদায়ে ‘যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আগের কায়দায় নির্বাচন দেখিয়ে আবার ক্ষমতায় যাবে, সেভাবে তারা পরিকল্পনা করেছে।
সব দলের অংশগ্রহণ না থাকলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের একটি মন্তব্য ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হলে এবং বিএনপি যদি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে তা নির্বাচনের লেজিটিমেসি (বৈধতা) থাকবে না।
আমরা মনে করি, সরকার আগের মত একতরফা নির্বাচন করতে চায়। সেজন্য তারা জাতিসংঘের প্রস্তাব (নির্বাচনে সহযোগিতার প্রস্তাব) রিজেক্ট করেছে।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “একটা গণআন্দোলন একইভাবে সমগতিতে সমধারায় চলতে পারে না। তার আপস অ্যান্ড ডাউনস, তার তীব্রতা এবং বিভিন্ন পশ্চাৎপদতা থাকে। সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।
আমাদের সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রয়াস নিশ্চয়ই আমাদেরকে আগামীতে জয়যুক্ত করবে, কামিয়াব করবে, এই সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী করে তুলবে। বঙ্গবাজারে আগুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকারের দায়-দায়িত্ব বলতে কিছু নাই। তারা নির্বিকার-নিশ্চুপ।
বৈঠকের ১২ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপির আবু তাহের, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম ও জাগপার ইকবাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানও ছিলেন দলের মহাসচিবের সঙ্গে।