আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বিএনপির সন্ত্রাসী বাহিনী পুলিশ হত্যা করে, পুলিশের ওপর আক্রমণ করার পর, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণের পর সমাবেশ পণ্ড হওয়ার কারণে তারা হরতাল দিচ্ছে। নিজেরা অপকর্ম করে তার দায় অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। এবার আর রক্ষা হবে না। এই অপকর্মের দায় মির্জা ফখরুল সাহেবদের বহন করতে, এদেরকে আর ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, কালকে যারা অশুভ কর্মকাণ্ড করেছে, আজকে যারা গাড়িতে আগুন দিয়েছে এদের কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।রবিবার বিকেল তিনটায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন হানিফ।
বিএনপি দেশে এবং বিদেশে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত উল্লেখ করে হানিফ বলেন, বাংলাদেশ বিএনপি নামক দলটি ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি এদের চরিত্র কখনোই পাল্টায় না। গতকালকের (২৮ অক্টোবর) সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে তাদের স্বরূপ উন্মোচন হয়েছে। আবারেও প্রমাণ হয়েছে তারা উন্নয়ন চায় না, দেশ ধ্বংস করতে চায় সেটা আবার প্রমাণিত হয়েছে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। বাংলাদেশে বহু আন্দোলনে হয়েছে। আমরাও বহু আন্দোলন করেছি
হানিফ বলেন, এই স্বাধীন বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বহু আন্দোলন হয়েছে। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছিল, ১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করেছেন আমরা আন্দোলন করে পতন ঘটিয়েছিলাম। এরপর ২০০৬ সালে আবার অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা আঁকড়ে চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাদেরকে অগণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ প্রতিহত করেছিলাম তখনও পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়নি। বরং বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে আমরা বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
ঢাকার রাজপথে আমাদের প্রয়াত নেতা সাহারা খাতুন, প্রয়াত নেতা নাসিম, আজকের সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সাবের হোসেন চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নুরের মতো সিনিয়র নেতাদের রাজপথে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছিল তারপরও আমরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেনি-বলেন হানিফ।
তিনি বলেন, অথচ আমরা দেখছি ২০১৩ সালে পর থেকে প্রত্যেক আন্দোলনে মূল টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৩ সালে গাইবান্ধায় পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে পিটিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা দেখেছিলাম রাজশাহীতে। কিভাবে পুলিশ পিটিয়ে রাজপথে ফেলে রেখেছিল।
তিনি বলেন, বিএনপি যখনই আন্দোলনে নামে তখনই দেখা যায় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করে। তারা এদেশকে ধ্বংস করতে চায়, দেশের প্রশাসনযন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। গতকালকে আবার আমরা দেখলাম পুলিশ সদস্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পুড়িয়ে দিতে চায়। আমরা এসব কর্মকাণ্ডের ধিক্কার জানাই। এসব ঘটনা আমাদেরকে একাত্তর মনে করিয়ে দেয়।
হানিফ বলেন, একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী যেভাবে বাড়ি ঘর পুড়িয়েছে, মা-বোনদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে, পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। এই জামায়াতের সহযোগী বিএনপি। এদের মধ্য হত্যা, খুন ছাড়া কিছু নেই।
হানিফ বলেন, এই বিএনপির নেতৃত্বে গতকাল যেভাবে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আক্রমণ করে গাড়ি জ্বালানো হয়েছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেট ভেঙে আগুন দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড, নাশকতার দায় মির্জা ফখরুল আপনাদের বহন করতে হবে। কারো রেহাই হবে না। বিএনপি সিনিয়র নেতাদেরকে দায়ভার নিতে হবে। প্রত্যকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক, আমরা এই দাবি জানাই।
দেশের মানুষ উন্নয়ন শান্তি চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে বারবার সামনে আসে বিএনপি। আমরা বলেছিলাম, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করলে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা আসবে না কিন্তু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে অশান্তি, নাশকতা করা হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন আমরা নিধারিত সময়ে করতে চাই। এই নিবাচন বানচালের জন্য অপশক্তি তৎপর হয়েছে। এই বিএনপি জামায়াত তাদের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করছে। গতকাল তা প্রমাণিত হয়েছে।
আমাদের পক্ষ থেকে কোনো উসকানি ছিল না। আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে আহত করেছে, দেড়শ’ পুলিশ সদস্যকে আহত করেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তারা আজ থেকে আর যদি কোনো কর্মকাণ্ড করে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে পতিহত করা হবে-বলেন হানিফ।
সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতের এই অপকর্মের কিছু সুশীল সমাজ টেলিভিশনে বসে তাদের পক্ষে সাফাই গান। এরা কারা? এরা তথাকথিত সুশীল সমাজের নামে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। এই দালালদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। এরা সুশীলের নামে বসে দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কথা বলে দেশের রাজনীতি উত্তপ্ত করতে চায়। এদেরকেও আইনের মুখোমুখি করতে হবে।
বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি জমায়াতের পৈশাচিক, নৃশংস আক্রমণে নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তাফ জালাল মহিউদ্দিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন প্রমুখ।