স্টাফ রিপোর্টার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার ও দেশ গঠনের যে রূপকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন তা দ্রুত জাতির সামনে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি- (এবি পার্টি)। পাশাপাশি প্রশাসনের সর্বস্তরে যে শ্লথগতি তা দূর করে অবিলম্বে সরকারের কার্যক্রমকে গতিশীল করারও আহ্বান জানান দলের নেতারা।
সোমবার (২৬ আগস্ট) চারটায় রাজধানীর বিজয় নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত “জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ: মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার ও অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
এবি পার্টির নেতারা বলেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে যে শ্লথগতি তা অবিলম্বে দূর করতে হবে। পুলিশ, বিচারাঙ্গণ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদসমূহে যোগ্য লোকদের পদায়ন করে সরকারের কার্যক্রমকে গতিশীল না করলে মানুষের মাঝে হতাশা ও অনাস্থার পরিবেশ তৈরি হতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করেন তারা।
দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, কিছুটা বিলম্বে হলেও জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রদত্ত ভাষণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এবি পার্টি। বর্তমান সরকার একটি ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। যা অতীতের সব ধরনের সরকারের চেয়ে ভিন্নতর। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দেশকে সামগ্রিকভাবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার কারণে এই সরকারের ওপর যে দায় দায়িত্ব এসেছে তা খুবই চ্যালেঞ্জিং। রাষ্ট্র মেরামত ও সংস্কার নিয়ে ছাত্রজনতার দেখা স্বপ্ন যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে জাতি আমাদের কখনও ক্ষমা করবে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, একদিকে ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি, সমন্বিত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাব, অন্যদিকে প্রতিদিনই নিত্য নতুন দাবি নিয়ে বিভিন্ন রকমের রহস্যজনক সহিংস আন্দোলনের বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। মনে হচ্ছে সরকারকে বিব্রত ও ব্যর্থ করার জন্য পর্দার অন্তরালে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এবি পার্টি মনে করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সমন্বয় না থাকলে গভীর সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টাকে দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা একটি ভিশনারি বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা আশা করি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তিনি বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। আপনারা আন্দোলন করেন কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু শত শত জীবনের বিনিময়ে আমরা যে স্বৈরাচারকে হটিয়ে একটি বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছি, তাদেরকে বিব্রত করে বা ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা ভুলুণ্ঠিত করে প্রতিবিপ্লবের কোনো ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা হলে সেটা আমরা ভালো ভাবে নেব না। আমরা জানতে পেরেছি ইতোমধ্যেই পল্লীবিদ্যুতের কর্মচারীরা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। তারা শাটডাউনের হুমকি দিয়েছেন। সরকারকে আমরা বলব সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা গণতান্ত্রিক পন্থায় দাবি দাওয়া করেন, কিন্তু পতিত স্বৈরাচারের লক্ষ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হওয়ার চেষ্টা করবেন না। ছাত্র-জনতা এখনো মাঠে আছে। আমাদের লক্ষ্য অর্জনের আগ পর্যন্ত মাঠে থাকব ইনশাআল্লাহ। কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না।
আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, সরকার উদারতার পরিচয় দিয়েছে। তারা কাজ করার চেষ্টা করছে। আমরা সমর্থন করছি। আশা করি তারা বন্যার্তদের পুনর্বাসনে যথাযথ ভূমিকা রাখবে। তিনি উপস্থিত সব সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন সমাপ্ত করেন।
এসময় এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান ও মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, এবি পার্টির সহকারী সদস্য সচিব এম আমজাদ খান, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, ছাত্রপক্ষের আহবায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স, যুবপার্টির আহবায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, যুবপার্টি মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব কেফায়েত হোসেন তানভীর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমেনা বেগম, সুমাইয়া শারমিন ফারহানা, রুনা হোসাইন, শাহিনুর আক্তার শীলা, মশিউর রহমান মিলু, ফেরদৌসী আক্তার অপি, পল্টন থানার আহবায়ক আব্দুল কাদের মুন্সি সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।