মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তার জীবনযাপন ও ইবাদতের পদ্ধতি ছিল অনুপম। তিনি দিনের পাশাপাশি রাতেও অধিক সময় ইবাদত করতেন। রবের সান্নিধ্যের সৌরভে ডুবে থাকতে পছন্দ করতেন। প্রথমে তার ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ ছিল। এ প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে, হে বস্ত্রাবৃত! রাত জাগরণ কর কিছু অংশ ব্যতীত। অর্ধরাত কিংবা তদপেক্ষা কিছু কম। অথবা তদপেক্ষা বেশি। আর কোরআন তিলাওয়াত কর ধীরে ধীরে স্পষ্টকরে সুন্দরভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। (সুরা মুযযাম্মিল: ১৫)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘুমের আগে ও পরে দোয়া করতেন। এছাড়া যেকোনো কাজ করার আগেও তিনি দোয়া করতেন। যা আমাদেরও শিখিয়ে গেছেন। শুধু যে দোয়া করতেন, তা না। তিনি রাতে অনেক বেশি নফল আমলও করতেন। নবীজি (সা.) ঘুমের আগে যে দোয়া ও আমল করতেন
দোয়া পড়া: রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি শোয়ার পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা নেমে আসবে। (আবু দাউদ ৪৮৫৬)
হাদিস শরিফে ঘুমানোর আগে কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সব দোয়া পড়তে না পারলেও ছোট এই দোয়াটি পড়া যায়, ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া’, অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনরায় জাগ্রত হব।’
সুরা ইখলাস, নাস ও ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যতদূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।’ (বুখারি ৫০১৭)
আয়াতুল কুরসি
রাসুল (সা.) বলেন, তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত) পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। (বুখারি ২৩১১)
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
কোনো ব্যক্তি ঘুমানোর আগে এ দুই আয়াত পড়লে তা তাদের গোটা রাতের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট। (বুখারি ৫০৪০)
সুরা মুলক
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)।(তিরমিজি ২৮৯১)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রতি রাতে নবীজি (সা.) বিছানায় যাওয়ার আগে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে দুহাত একত্র করে তাতে ফুঁক দিতেন এবং যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বোলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তার দেহের সম্মুখভাগের ওপর হাত বোলাতেন। তিনি এভাবে তিনবার করতেন। (বুখারি ৫০১৭)
নবীজি (সা.) ঘুমের পরে যে দোয়া ও আমল করতেন
শেষ রাতের আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে শেষ রাতে বিভিন্ন আমলের ওপর উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাতে জাগরণ প্রবৃত্তি দমনে অধিক সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণে অনুকূল’ (সুরা মুজ্জাম্মিল ৬)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ রাতে বেশকিছু আমল করতেন তা এখানে তুলে ধরা হলো।
দোয়া ও ইসতিগফার করা
শেষ রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, দোয়া করা ও কোনো কিছু চাইতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
আমাদের রব প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। তিনি বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দেব; কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি ১১৪৫)
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, রাতে আল্লাহ তার দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার কাছে তওবা করে। এমনিভাবে দিনে তিনি তার হাত প্রসারিত করেন, যেন রাতের অপরাধী তার কাছে তওবা করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস : ৬৮৮২)
সাধ্যমতো নফল নামাজ পড়া
শেষ রাতের নামাজ পড়ার প্রশংসা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করো তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল ৭৯)
কোরআন পাঠ করা
কোরআন একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। আর রাতের বেলা এ আমলের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বস্ত্রাবৃত, রাতে নামাজে দাঁড়ান, কিছু অংশ ছাড়া, রাতের অর্ধেক কিংবা তার চেয়ে কিছুটা কম। অথবা তার চেয়ে বাড়াও আর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে কোরআন পাঠ করো।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল ১-৪)
তাসবিহ ও জিকির করা
রাতের ইবাদত শুধু নামাজ ও কোরআন পাঠেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং কিছু সময় আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করাও অনেক সওয়াবের। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং রাতের একাংশেও তুমি তার তাসবিহ পাঠ করো এবং নামাজের পরও।’ (সুরা কাফ ৪০)