স্টাফ রিপোর্টার- আগামীকাল সোমবার খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচন। তার আগে উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজন, কর্মী-সমর্থক সবাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে নামেন শেষ প্রচারে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সব প্রার্থীই ছুটেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক দিনভর গণসংযোগ করেন নগরীর খালিশপুর থানার ১২, ১৩ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায়। রাতে প্রচার চালান ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বান্দা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। গণসংযোগকালে তিনি নগরীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও তাঁকে বিজয়ী করার জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নির্বাচিত হতে পারলে স্মার্ট নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। দিনভর তাঁর পক্ষে প্রচার চালান আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রী সংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বিকেলে নগরীর খালিশপুরে গণসংযোগ করেন।
ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল সকালে নগরীর বড় বাজার ও স্টেশন রোড, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রূপসা বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ ছাড়া কয়েকটি পথসভাও করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, নগরবাসীর দুর্ভোগ নিরসনের জন্য প্রয়োজন নতুন নেতৃত্ব।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু গণসংযোগ করেন হাজী মহসীন রোডসহ বিভিন্ন এলাকায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সহিদুর রহমান টেপা। বিকেলে পথসভা করেন ডাকবাংলো মোড় এলাকায়। তিনি বলেন, মানুষ চায় পরিবর্তন, তাই ভোটাররা এবার তাঁকেই বেছে নেবে বলে আশা তাঁর।
জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন নগরীর দৌলতপুর বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিলি করেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিকও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যান।
প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করেন সাধারণ ২৯টি ওয়ার্ডের ১৩৪ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। সরেজমিন দেখা যায়, বিকেলে নগরীর অলিগলি-বাড়ি বাড়ি প্রচার চালান বিপুলসংখ্যক নারীকর্মী। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা প্রচার চালান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও।
দীর্ঘদিন পর বরিশালে ফিরেছে হারিয়ে যাওয়া ‘ভোট উৎসব’। সিটি নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন উৎসবে মাতোয়ারা ছিল নগরী। শনিবার বিকেলে ছোট-বড় অসংখ্য মিছিলে সয়লাব হয় নগরের প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলি। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন বরিশালের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সমর্থকদের নিয়ে মিছিল-শোডাউন করে তাঁদের শক্তির জানান দেন। প্রার্থীর প্রতীকের প্রতিকৃতি বহন ও ট্রাকে প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় শিল্পীদের সংগীত পরিবেশন ছিল মিছিলের অন্যতম আকর্ষণ। শেষ বিকেলে একের পর এক মিছিলে নগরীর প্রধান সড়কে যান চলাচল থমকে যায়।
বিকেল ৪টার দিকে অশ্বিনী কুমার হল সংলগ্ন সদর রোডে পাশাপাশি অবস্থান নেন ইসলামী আন্দোলনের ‘হাতপাখা’ ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের শত শত সমর্থক। পরে লাঙ্গল সমর্থকের একটি বড় মিছিল নগরীর প্রদক্ষিণ করে। বিপুলসংখ্যক নারী ওই মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। প্রার্থী জাপা নেতা ইকবাল হোসেন তাপস গাড়ির খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে সড়কের দু’পাশের ভোটারদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। হাতপাখার সমর্থনে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে পথসভা হয়। প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এতে বক্তৃতা করেন। সমাবেশে শেষে হাতপাখার সমর্থনে একটি বড় মিছিল নগরী প্রদক্ষিণ করে।
নৌকার সমর্থনে সম্মিলিত বড় শোডাউন হয়নি। তবে সারাদিনই নৌকার অসংখ্য খণ্ড খণ্ড মিছিল বিভিন্ন এলাকা থেকে বের হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিনের নেতৃত্বে ১৪ দল নেতাকর্মীর একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেলে খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে বিশাল সমর্থকদের নিয়ে নগরীতে শোডাউন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার। এ ছাড়া নগরের ৩০টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলদের বেশিরভাগ নিজ নিজ ওয়ার্ডে সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করেছেন।