মিথুন আশরাফ – আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এরপরই ২০ নভেম্বর থেকে কাতারে ফুটবল বিশ^কাপ শুরু হয়ে যাবে। এ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হবে, দলের সমর্থকরা তাই মনে করছেন। কিন্তু আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার ও অধিনায়ক লিওনেল মেসি কিন্তু নিজের দলকেই ফেবারিট মনে করছেন না। ‘ইউনিভার্সো ভালদানো’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, ‘এখন সব দলের বিপক্ষে খেলাই কঠিন। (বিশ্বকাপে) সব দলকে হারানোই কঠিন হবে।’
মেসি এরপর যুক্তি দেন, ‘(অপরাজিত থাকার পথে) ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে আমরা খুব বেশি ম্যাচ খেলিনি। যদিও ওরা আমাদের বিপক্ষে খেলতে পছন্দ করে না। তবে লাতিন দলগুলোকে হারানোও কঠিন। আর আমরা ভালো ফর্ম নিয়েই বিশ্বকাপে খেলব। কিন্তু আমরা ফেবারিট তকমার ফাঁদে পা দিয়ে বিশ্বাস করতে পারি না, ফেবারিট হওয়ায় এমনিতেই জিতব। আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে এবং ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে।’
২২ নভেম্বর সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বে ২৬ নভেম্বর মেক্সিকো ও ৩০ নভেম্বর পোল্যান্ডকে হারিয়ে নকআউট পর্বের সব ম্যাচ জিতবে আর্জেন্টিনা, সেই আশাই করা হচ্ছে। সেরা ১৬, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল পেরিয়ে ১৮ ডিসেম্বরের ফাইনালেও জিতে শিরোপা উচিয়ে ধরবেন মেসি, সেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তাই কী হবে?
এবারের আর্জেন্টিনা দলটা অনেক দিন ধরে একসঙ্গে খেলছে। ২০১৯ সাল থেকে টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত আছেও। এরপরও ফেবারিট-তত্ত্বে বিশ্বাস করতে নারাজ মেসি। তাঁর মতে, বিশ্বকাপ জিততে চাইলে আর্জেন্টিনাকে সবার আগে যে কাজটা করতে হবে, ফেবারিট তকমা গায়ে লাগানো যাবে না।
সেই ১৯৮৬ সালের পর আর বিশ্বকাপ জিততে পারেনি দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছর হয়ে গেল। এরআগে ১৯৭৮ সালে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৯০ সালের পর ২০১৪ সালে ফাইনালে খেলে আর্জেন্টিনার। রানার্সআপ হয়। শেষবার মেসির তত্বাবধানেই রানার্সআপ হয় আর্জেন্টিনা। চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে এক জয় দুরে ছিল। কিন্তু হয়নি। এবার আর্জেন্টিনাই চ্যাম্পিয়ন হবে, সেই আশা করা হচ্ছে। লিওনেল মেসিও যে এবারই সেরাটা দিতে পারবেন। এরপর আর সেরার ধারাবাহিকতা থাকে কিনা কে জানে।
মেসি অবশ্য নিজের দল নয়, ব্রাজিল ও ফ্রান্সকেই ফেবারিট তকমা দিতে চান। তিনি বলেছেন, ‘ফ্রান্স ভালো দল। তাদের কয়েকজন খেলোয়াড় চোট পেলেও ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো দল গড়েছে। দলে সেরা খেলোয়াড়েরা আছেন এবং এমন এক কোচ আছেন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করে গত বিশ্বকাপও জিতেছেন। ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরাও বেশ ভালো। বিশেষ করে আক্রমণভাগে। তাদের ভালো ৯ নম্বর আছে, নেইমারও আছে।’
প্রথম ম্যাচটি নিয়েই ভাবছেন মেসি, ‘আমরা (শিরোপার জন্য) লড়াই করব। এটাই লক্ষ্য। তবে সবার আগে প্রথম ম্যাচটা জিততে হবে।’ ফেমাস তকমা নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি জানান, ‘মেসি হওয়ার কিছু খারাপ দিক আছে, আমার কখনও কখনও মনে হয় যদি এত জনপ্রিয় না হতাম। আমি আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করি না অথবা মনে হয় না মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে থাকুক। কিন্তু আমি এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।’
অনেক অল্প বয়সেই মেসিকে ছেড়ে আসতে হয়েছিল আর্জেন্টিনা। তবুও নিজের দেশ ছেড়ে আসার আগে অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘রাস্তা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি আর্জেন্টিনা অনেক অল্প বয়সে ছেড়ে এসেছি। কিন্তু এর আগেই অনেক কিছু শিখেছি। আমি আমার বাবাকে বলেছিলাম আমাদের এমন কিছু করতে হবে যেন আর্জেন্টিনার মানুষ জানে এখানে (বার্সেলোনায়) আছি। আমি বয়সভিত্তিক দলের হয়ে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছি আর তারা আমাকে জেনেছে। আমি সেখানে থাকতে চেয়েছি, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সঙ্গে।’
পেলে থেকে ডিয়েগো ম্যারাডোনা হয়ে এখনকার লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ফুটবল বিশ্ব অনেক ব্যক্তিগত নৈপুন্য দেখানো ফুটবলারকেই খুঁজে পেয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এমন কিছু দেখা যাবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে খোদ লিওনেল মেসিরই। তিনি বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস ফুটবল অনেক বদলে গেছে। এখন ভিন্ন ধাচের ফুটবলার দেখা কঠিন, অথবা সাধারণ কিছুর বাইরের। কারণ অল্প বয়সেই তারা আপনাকে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডিতে খেলতে বাধ্য করবে। আমার মনে হয় খেলা অনেক বদলে গেছে। ফুটবল সামনে আরও টেকটিক্যাল খেলা হবে। ’
বিশ^কাপ মিশনে বিশ্বকাপ মিশনে আর্জেন্টিনা দলে যোগ দিয়েছেন মেসি। চলছে পুরোদমে প্রস্তুতিও। মেসির আগে সোমবার দলের সঙ্গে যোগ দেন আনহেল দি মারিয়া ও তার ইউভেন্তুস সতীর্থ লেয়ান্দ্রো পারেদেস এবং লিওঁর ডিফেন্ডার নিকোলাস তাগলিয়াফিকোও। ২৬ জনের স্কোয়াডের ১৩ জন এরই মধ্যে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। এমিলিয়ানো মার্তিনেস, পাওলো দিবালাসহ বাকি ১৩ জন দ্রুতই দলের সঙ্গে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আমিরাতের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। আর তাই আবুধাবীতে আছে আর্জেন্টিনা দল। এ ম্যাচটি খেলে কাতারে উড়াল দেবে আর্জেন্টিনা দল।