Search
Close this search box.

ফাইনালই বিশ্বকাপে আমার শেষ ম্যাচ – লিওনেল মেসি

ফাইনালই বিশ্বকাপে আমার শেষ ম্যাচ - লিওনেল মেসি

মিথুন আশরাফ – কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেছে আর্জেন্টিনা। আর মাত্র একটি ম্যাচ। ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতে জিতলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। মেসির হাতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা শোভা পাবে। আর এখানেই বিশ্বকাপে মেসির খেলারও ইতি ঘটে যাবে। যদি আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়, তাহলে একদিকে যেমন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উল্লাস হবে, আরেকদিকে বিষাদও মিলবে। মেসি যে আর বিশ্বকাপে খেলবেন না। মেসি যে নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘অবশ্যই এটা আমার শেষ বিশ্বকাপ। ফাইনাল ম্যাচই আমার শেষ ম্যাচ।’

এবার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে যখন সৌদি আরবের কাছে হোচট খায় আর্জেন্টিনা, ১-২ গোলে হেরে যায়, তখনই হায় হায় রব উঠে। কিন্তু মেসির আর্জেন্টিনা বলে কথা। এরপর যে একটি করে ম্যাচ সামনে আসে, আর্জেন্টিনা যেন আগের চেয়েও বেশি জ্বলে ওঠে। যে দলই সামনে এসেছে তাদেরকে উড়িয়ে দিয়েছে। মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারানোর পর পোল্যান্ডকেও একই ব্যবধানে হারিয়ে গ্রুপ পর্বের সেরা দল হয়ে শেষ ষোলতে ওঠে। শেষ ষোলতে অস্ট্রেলিয়াকেও পাত্তা দেয়নি। ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে।

এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ২-১ গোলে জেতা নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ দিকে, শেষ মিনিটে গিয়ে গোল খেয়ে নির্ধারিত ওভারের খেলা ২-২ গোলে ড্র হয়ে যায়। অতিরিক্ত সময়ও ড্র থাকলে টাইব্রেকার হয়। তাতে আর্জেন্টিনা ৪-৩ গোলে জিতে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। সেমিফাইনালে তো ক্রোয়েশিয়াকে একদম উড়িয়ে দিয়েছে। ৩-০ গোলে হারিয়ে ২০১৪ সালের পর আবার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেয় আর্জেন্টিনা। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা কখনোই হারেনি। বিশ্বকাপে এরআগে আর্জেন্টিনা চারবার সেমিফাইনাল খেলে। ১৯৭৮ সালে প্রথম, ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯০ সালে তৃতীয় ও ২০১৪ সালে চতুর্থবার সেমিফাইনালে খেলে আর্জেন্টিনা। প্রতিবারই ফাইনালে খেলে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়। বাকি দুইবার হয় রানার্সআপ। কখনোই আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে হারেনি। এবারও তাই হল। ফাইনালে উঠে গেল আর্জেন্টিনা।
সবচেয়ে বড় বিষয়, এবার মেসি যেন ফর্মের তুঙ্গে আছেন। এরআগে নকআউটে কখনোই গোল করতে পারেননি মেসি। এবার প্রতিটি ম্যাচেই গোল করছেন। আর গোল তো করানোই মহা পারদর্শী তিনি। ৫টি গোল এই বিশ^কাপে করে ফেলেছেন। আবার বিশ^কাপে ১১টি গোল করে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করার কৃতিত্বও গড়েছেন মেসি। সাবেক সতীর্থ গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে পেছনে ফেলে সবার আগে চলে গেছেন মেসি।

যেভাবে মেসি উড়ছেন, আর্জেন্টিনাকেও ওড়াচ্ছেন, তাতে ফাইনালেও মেসিকে আটকানো কঠিন হয়ে পড়বে। আর তা হলে মেসির হাত ধরে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু মেসি আর বিশ^কাপে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলবেন না। আরো একবার স্বপ্নের ফাইনালে লিওনেল মেসি। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালেও তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে লড়াই করেছিলেন, কিন্তু দলকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি। এরপর জাতীয় দলের হয়ে ৩টি ফাইনাল খেলেছেন।

বয়সটা বর্তমানে ৩৫। আগামী বিশ্বকাপে তার বয়স হবে ৩৯। মেসির জন্য সেই বিশ্বকাপ খেলা কঠিনই হবে। ফর্ম বিবেচনায় তবু অনেকে আশা দেখছিলেন। তবে নিজের অবস্থান এবার পরিষ্কার করে দিলেন সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী ফুটবলার। জানালেন, এবারের ফাইনালটিই হবে বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ।

মঙ্গলবার রাতে ম্যাচ শেষে মিডিয়া বক্সে আর্জেন্টাইন পত্রিকা ‘দারিও ওলেকে’ দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, ‘আমার দারুণ অনুভূতি হচ্ছে, আমাদের দল ফাইনালে পৌঁছে গেছে। ফাইনালে আমি আমার শেষ খেলা খেলে নিজের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ করব। পরবর্তী বিশ্বকাপ আসতে অনেক দেরি। আমার মনে হয় না আমি সেটি খেলতে পারবো।’

বিশ্বকাপের শুরুতেই মেসি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এটিই তার শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। আর সেটার শেষ যদি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার মাধ্যমে হয়, সেটি তো সোনায় সোহাগা। মেসি বলেন, ‘এটাই সঠিক সময়।’

মেসি বলেন, ‘অবশ্যই এটা আমার শেষ বিশ্বকাপ। ফাইনাল ম্যাচই আমার শেষ ম্যাচ, এটা ভাবলেও মনের ভেতর শান্তি কাজ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলাম সেটি অর্জন করা থেকে আর এক ধাপ দূরে আমরা। আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করবো তা অর্জন করতে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ