স্পোর্টস রিপোর্টার – বাংলাদেশ যখন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটি খেলতে নামে এবং টস হয়ে যায়, তখনই বাংলাদেশ রেকর্ড গড়ে। একমাত্র দল হিসেবে টেস্ট খেলুড়ে সব কটি দলের বিপক্ষে খেলা হয়ে যায় বাংলাদেশের। এই রেকর্ডের পর তাইজুল ইসলাম স্পিন ভেল্কি দেখান। তাইজুলের ৫ উইকেট শিকারে আয়ারল্যান্ডও ২১৪ রানেই অলআউট হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশ মিরপুর টেস্টের প্রথমদিনে ১০ ওভার খেলে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান করে ১৮০ রানে পিছিয়ে থাকে।
আইসিসির টেস্ট স্ট্যাটাস রয়েছে ১২টি দেশের। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফয়গানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড টেস্ট খেলে। প্রথম দেশ হিসাবে বাকি ১১টি দেশের বিরুদ্ধেই টেস্ট খেলা হয়ে গেল সাকিব আল হাসানদের। মঙ্গলবার টস হওয়ার পরই নতুন রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে এর আগে টেস্ট খেলেছিল আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান। অর্থাৎ, বাকি আটটি দেশ আইরিশদের বিরুদ্ধে লাল বলের ক্রিকেট খেলেনি। তারা এখনও পর্যন্ত ১০টি দেশের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলেছে। অন্য দিকে আফগানিস্তান এখনও ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলেনি। ফলে এই তিন দেশেরও সব দেশের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলার নজির নেই। একমাত্র বাংলাদেশই বাকি ১১টি দেশের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব অর্জন করল মঙ্গলবার।
আগের দিনই বলা হয়েছিল আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলাদেশ। একাদশেও তার নমুনা দেখা গেল, ৬ বোলার নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, মিরপুরে এইদিন ছয় স্লিপ ফিল্ডার নিয়ে বল করেন পেসাররা। তবে দিনশেষে টাইগারদের সেরা বোলার তাইজুল ইসলাম। ঘূর্ণি জাদুতে পাঁচ উইকেট তুলে নেন তিনি। সুবাদে ২১৪ রানেই থামে আইরিশদের ইনিংস।
মঙ্গলবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের পেস বোলারদের আগ্রাসনের মুখোমুখি হয় আইরিশরা। ফলও আসে দ্রুত, দলীয় ১১ রানে ভাঙে আইরিশদের উদ্বোধনী জুটি। ম্যারি কামিন্সকে ফেরান এবাদত হোসেন। পরের দুটো উইকেটও দ্রুত তুলে নেয় বাংলাদেশ। দলীয় ২৭ রানে শরিফুল ইসলাম ফেরান জেমস ম্যাককালামকে, ৩৪ বলে ১৫ রান করে শান্তকে ক্যাচ দেন তিনি।
খানিক বাদে অধিনায়ক এন্ডি বালবির্নি ফেরেন ৫০ বলে ১৬ রান করে, তাকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। ৬৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় আইরিশরা। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় আয়ারল্যান্ড। লাঞ্চ থেকে ফিরে উল্টো বাংলাদেশের বোলারদের পরীক্ষা নিতে শুরু করেন ক্যাম্ফার ও ট্যাক্টর। দেখে শুনে খেলে দ্রুতই দলকে তিন অংকের ঘরে পৌঁছে দেন দু’জনে। সাথে ট্যাক্টর তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।
তবে এরপর আর এগোতে পারেননি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। মেহেদী হাসান মিরাজের চমৎকার এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ৫০ রানেই ফেরেন টেক্টর। পরের ওভারে ক্রিজে আসা পিটার মুরকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তাইজুল। পরের ওভারে এসে ক্যাম্ফারকেও ফেরান এই স্পিনার। ৩৪ রান করেন ক্যাম্ফার।
ফলে ধস নামে তাদের ব্যাটিং লাইনআপে। ১২২-৩ থেকে মুহূর্তেই স্কোরবোর্ড দাঁড়িয়েছে ১২৪-৬! অর্থাৎ ২ রান যোগ করতেই আয়ারল্যান্ড হারিয়েছে ৩ উইকেট। চা বিরতিরে যাবার কালে সফরকারীদের সংগ্রহ ১৪৬/৬।
এরপর লরকান টাকার ও মাকবির্নি মিলে অপরাজিত ৩৫ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন, তবে ১৯ রান করে এবাদতের শিকার হন ম্যাকবির্নি। এরপর মার্ক অ্যাডায়ারের সাথে ৪০ রানের জুটি গড়েন টাকার। টাকারকে ৩৭ রানে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন তাইজুল। এরপর ৩২ রান করা মার্ক অ্যাডায়ারকেও ফিরিয়েছেন তিনি। আর শেষ উইকেট তুলে নেন মেহেদি মিরাজ।
২১৪ রানে থামে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস। তাইজুল ইসলামের ৫ উইকেট ছাড়াও এবাদত হোসেন ও মেহেদী মিরাজ নেন দুটো উইকেট। ১টি উইকেট যায় শরিফুল ইসলামের ঝুলিতে।
আয়ারল্যান্ডের ইনিংস শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ প্রথমদিনে ১০ ওভার ব্যাটিং করে। তাতেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে। দলের ২ রানের সময় নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন। আর দিনের শেষ বলে গিয়ে ওপেনার তামিম ইকবাল (২১) সাজঘরে ফিরেন। তামিমের আউটের পর দিনের খেলাও শেষ হয়।