ছবি, ভিডিও ও নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান প্রদানের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ। অনেকেই ব্যক্তিগত বা অফিসের প্রয়োজনীয় কাজে এটি নিয়মিত ব্যবহার করেন। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও জনপ্রিয়তার কারণে প্রতারণার ঘটনাও বাড়ছে। তাই নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে এবং সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পেতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের সময় কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো কী কী:
অপরিচিতদের সামনে প্রোফাইল ছবি প্রদর্শন
অনেকেই নিজেদের পরিচিতি ভালোভাবে প্রকাশ করতে প্রোফাইল ছবি ব্যবহার করেন হোয়াটসঅ্যাপে। আর এসব ছবির স্ক্রিনশট বা ছবি তুলে সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করেন। তাই অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে নিজের প্রোফাইলের ওক ছবি প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বাড়বে। হোয়াটসঅ্যাপের সেটিংসে গিয়ে চাইলেই নিজের প্রোফাইল ছবি অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে লুকিয়ে রাখা যায়।
তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ স্টোর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ নামানো
গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল স্টোর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ না নামিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপ নামিয়ে থাকেন অনেকে। তৃতীয় পক্ষের তৈরি ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপগুলোর নাম ও চেহারা আসল হোয়াটসঅ্যাপের কাছাকাছি হওয়ায় অনেকেই না বুঝে সেগুলো ব্যবহার করেন। কিন্তু অ্যাপগুলো নামালেই মুঠোফোন থেকে তথ্য চুরি করে সাইবার অপরাধীদের কাছে পাঠাতে থাকে। আর তাই থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ নামানোয় থেকে বিরত থাকতে হবে।
নিশ্চিত না হয়ে কোনো বার্তা ফরওয়ার্ড করা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ যুগে গুজব বা মিথ্যা তথ্য খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও গুজব ছড়ায়। কিন্তু অনেকেই যাচাই না করেই অন্যদের পাঠানো মিথ্যা বার্তা বা ছবি অন্যদের ফরওয়ার্ড করেন। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের আইনি জটিলতার পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এ ধরনের সমস্যা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য অন্যদের পাঠানো বার্তার সত্যতা যাচাই না করে ফরওয়ার্ড করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
উপহার পাওয়ার বার্তায় ক্লিক করা
অনেক সময় জনপ্রিয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে ভুয়া উপহার কার্ড ও গিফট ভাউচার পাওয়ার প্রলোভনে বার্তা পাঠিয়ে থাকে সাইবার অপরাধীরা। এ ধরনের বার্তায় সাধারণত একটি লিংকে ক্লিক করে বিভিন্ন তথ্য জমা দিতে বলা হয়। তবে এসব লিংকে ক্লিক করলেই ব্যবহারকারীর যন্ত্রে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে। এসব ম্যালওয়্যার গোপনে স্মার্টফোন থেকে বিভিন্ন তথ্য চুরি করে সাইবার অপরাধীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। পরে এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার পাশাপাশি তথ্যগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য অর্থ দাবি করে সাইবার অপরাধীরা। আর তাই হোয়াটসঅ্যাপে অন্যদের পাঠানো উপহার দেওয়া বার্তায় ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
যাচাই না করে গ্রুপে যুক্ত হওয়া
বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলেন অনেকেই। কেউ আবার অন্যদের খোলা গ্রুপে যুক্ত হন। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের সব গ্রুপের ধরন এবং আলোচনার বিষয় একরকম নয়। ফলে অপরিচিতদের খোলা গ্রুপে যোগ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়ার পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আর তাই অপরিচিতদের চালু করা গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আগে গ্রুপটির সদস্য ও আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
অনুমতি ছাড়া অন্যকে গ্রুপে যুক্ত করা
বন্ধু বা সহকর্মীদের পাশাপাশি পরিচিত ব্যক্তিদের না জানিয়েই হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলেন অনেকে। এতে তাদের গোপনীয়তা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বিরক্তও হন কেউ কেউ। আর তাই গ্রুপ খোলার সময় আগে থেকে তাদের সম্মতি নিয়ে গ্রুপে যুক্ত করতে হবে।
যাচাই না করে লিংকে ক্লিক
অপরিচিত কোনো নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে লিংকসহ বার্তা এলে সতর্ক থাকতে হবে। এসব লিংকে ক্লিক করা যাবে না। উৎস যাচাই না করে লিংকে ক্লিক করলে ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ডাউনলোড হতে পারে। এর ফলে ছবি, পাসওয়ার্ডসহ ব্যক্তিগত তথ্য চলে যেতে পারে সাইবার অপরাধীর দখলে।
দুই স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার
প্রতারণা ও জালিয়াতি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য অবশ্যই হোয়াটসঅ্যাপে দুই স্তরের নিরাপত্তা–সুবিধা ব্যবহার করতে হবে। দুই স্তরের নিরাপত্তা-সুবিধা চালু থাকলে কেউ গোপনে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করলেই জানা যায়। এর ফলে সাইবার অপরাধীরা সহজে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না।