স্টাফ রিপোর্টার:- আসন্ন কোরবানীর ঈদকে ঘিরে মহাসড়কে ডাকাতির পরিকল্পনা চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সাভারের হেমায়েতপুর-বালিয়ারপুর মহাসড়ক এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি চলছিল। এমন সময়ে দুর্ধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্র ‘ঠান্ডা-শামীম বাহিনী‘র সর্দার মো:শামীম’কে তার ১০ সহযোগী সহ দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো:- ১। মোঃ শামিম ওরফে সব্দুল (৩০), ২। মোঃ আনিসুর রহমান ওরফে ঠান্ডা (৪৫), ৩। মোঃ সালাউদ্দিন (২৩), ৪। মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন (৩১), ৫। মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩৫), ৬। মোঃ জাহাঙ্গীর সরকার (৪০), ৭। মোঃ সজিব ইসলাম (২৫), ৮। মোঃ জীবন সরকার (৩৪) ৯। শ্রী স্বপন চন্দ্র রায় (২১), ১০। মোঃ মিনহাজুর ইসলাম (২০) এবং ১১। শ্রী মাধব চন্দ্র সরকার (২৬)।
র্যাব-৩ এর অভিযানে গ্রেফতারের সময় ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ১টি বিদেশি পিস্তল, ১ টি পাইপগান, ২ টি ওয়ান শুটারগান, ৬ রাউন্ড গুলি, ১ টি ম্যাগাজিন, ১ টি শাবল, ৩ টি রশি, ১ টি লোহার রড, ১ টি চাপাতি, ২ টি রামদা, ১ টি চাইনিজ কুড়াল, ১ টি করাত, ১ টি হাউজ কাটার, ২ টি ছুরি, ২ টি টর্চ লাইট, ১১ টি স্কুল ব্যাগ, ২ টি হ্যাক্সো ব্লেড , ১ টি দা, ২ টি লেজার লাইট, ২ টি প্লাস, ১ টি দেশি কুড়াল এবং ১ টি হাতুরি উদ্ধার করে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের সদ্যস্যরা ঈদকে টার্গেট করে বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি সংঘটিত করে আসছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে ডাকাতি, সড়কে ডাকাতি, গাছ কেটে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাত্রীবাহী বাস, গরুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন মালামালের গুদামে ডাকাতি করে আসছিল। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধির উপর নজরদারি রেখে ডাকাতি করে দ্রুত ঐ স্থান থেকে পালিয়ে অন্যত্র আত্মগোপন করত। তিনি আরও জানান এই বাহিনী এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ডাকাতি ঘটনা ঘটিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন আরও বলেন, ঠান্ডা-শামীম বাহিনীর সদস্যরা অন্ধকার রাস্তায় ওৎ পেতে থাকত। ডাকাতি করার জন্য তারা পূর্ব পরিকল্পিত নির্ধারিত স্থানের নিকটবর্তী বাস স্টেশনে ডাকাত দলের সদস্যরা টার্গেটকৃত বাস/ট্রাক/মাইক্রোবাস সম্পর্কে সংকেত দিত। অনুকূল সংকেত পাওয়া মাত্রই ডাকাত দলের মধ্যে গাছ কাটার দায়িত্ব প্রাপ্ত সদস্যরা দ্রুত গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে দিত।
ডাকাত দলের অপর সদস্যরা বাস/ট্রাক/মাইক্রোবাসের চালক ও যাত্রীদের অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যেত। যেখানে গাছ কাটার সুযোগ থাকেনা সেখানে তারা চালকের চোখে আলো ফেলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডাকাতি করত। এসব ডাকাতির ঘটনায় শামীম এবং আনিসুর ওরফে ঠান্ডা একাধিকবার আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেফতার হয়েছিল।
জেল হাজতে থাকার সময় তাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন অপরাধীদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে জামিনে বের হয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলে। তাদের বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। এছাড়াও, তারা যে এলাকায় ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে উক্ত এলাকার স্থানীয় অপরাধী ,মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও পরিবহন শ্রমিক, গোডাউনের কর্মচারী, নৈশ প্রহরীদের সাথে যোগসাজশ করে ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করে থাকে।
ডাকাতিই হচ্ছে তাদের মূল পেশা। তাদের দলে ৫ থেকে ৬ জন সবসময় ডাকাতি কাজের সাথে জড়িত থাকে । বাকী সদ্যস্যরা বিভিন্ন পেশায় জড়িত। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাদের দলে নেয়া হয়। এদের মধ্যে কেউ ইট ভাটার শ্রমিক, কেউ গার্মেন্টস কর্মী, কেউ অটোরিক্সা চালক। তারা এসব পেশার আড়ালে ডাকাত দলের সাথে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। ডাকাতি শেষে তারা আবার নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত হয়ে পড়ে। তাদের একজন ডাকাতির চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন সরবরাহ করে, কেউ ডাকাতির পূর্বে ঘটনাস্থল রেকি, ডাকাতির সময় ও ডাকাতি শেষে ঘটনাস্থল হতে পলায়ন এবং ডাকাতির মালামাল পরিবহনের দায়িত্ব পালন করে ,কেউ ডাকাতি করার সময় সে তালা ভাঙ্গা, দেওয়াল ভাঙ্গা, গাড়ীর দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করাসহ ডাকাতির মালামাল বিক্রির দায়িত্ব পালন করে থাকে।
ডাকাত চক্রের সেকেন্ড ইন কমান্ড গ্রেফতারকৃত আনিসুর ওরফে ঠান্ডা বিগত ২০০৪ সালে গরু চুরির মাধ্যমে ডাকাতি শুরু করে। গত ২০১৬ সালে বাহিনীর প্রধান শামীম এর সাথে তার পরিচয়ের সূত্রে তারা একসাথে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে। এছাড়াও ঠান্ডা-শামীম বাহিনী তাদের ডাকাতির ধরণ এবং চাহিদা অনুযায়ী ভাড়ায় লোকবল সংগ্রহ করে। এই বাহিনী ইতোমধ্যে গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল এলাকায় বহু ডাকাতি সংঘটিত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের ১২ টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।