Search
Close this search box.

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ : নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ : নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

মিথুন আশরাফ ॥ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের সোনাইছড়িতে কাশেম জুট মিল গেট এলাকায় অবস্থিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হাসপাতালে ভর্তি অগ্নিদগ্ধ আরও কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীও রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অগ্নিকাণ্ডে হতাহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বাসস জানায়, তিনি আহত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে সরকারের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এক শোকবার্তায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি দুর্ঘটনায় আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন।

উদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য কাজ করছেন। উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও নিরাপত্তা দলও নিয়োজিত রয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিস্ফোরণের কারণে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক সামগ্রী সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া রোধে এ দল কাজ করছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশও সহায়তা করছে। সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম শনিবার রাত থেকে কাজ করছে। আইএসপিআর জানায়, আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল ও সিএমএইচে স্থানান্তরে সেনাবাহিনীর অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা করেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে আশপাশের জেলার ফায়ার সার্ভিসের ২৫ ইউনিট। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের লক্ষ্যে নগদ এক কোটি টাকা এবং এক হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা সহায়তা দেবে সরকার। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আর এর দূরবর্তী প্রভাব পড়েছে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, কনটেইনার ডিপোটিতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ছিল। হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি যদি উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে।

ঘটনার পরপরই হতাহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া শুরু হয়। অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আহত ব্যক্তিদের সেখানে আনা হয়। হাসপাতালে মানুষ আহত ব্যক্তিদের রক্ত দিতে ভিড় করছেন। সেখানে চিকিৎসক ও নার্সদের জড়ো করা হয়েছে। হাসপাতালে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা ভিড় করছেন। স্বজনদের খোঁজ করছেন। তাঁদের কান্না ও আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

বিস্ফোরণে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। রবিবার সকালের মধ্যেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কেউ দগ্ধ, কেউ মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

বিস্ফোরণে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সীতাকুন্ড থানা পুলিশের কনস্টেবল মো. তুহিনের। তার সঙ্গে একই থানার কনস্টেবল কামরুলও গুরুতর আহত হন। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এরইমধ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আরও পাঁচ কনস্টেবল, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতাহার হোসেন এবং শিল্প পুলিশের একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, গুরুতর আহত তুহিন ও কামরুলকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসান বলেন, মরদেহগুলো হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সব ইউনিটে সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান নাজমুল হাসান বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমরা প্রথমে ওই কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার খবর পাই। আগুন নেভানোর জন্য একটি টিম ঘটনাস্থলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণে কনটেইনার ডিপোর আশপাশের ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক কম্পনের সৃষ্টি হয়। মসজিদ ও আশপাশের শতাধিক ঘরবাড়ির জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। আশপাশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। কনটেইনারে রাসায়নিক দ্রব্য থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।

আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। পানির পাশাপাশি কেমিকেলের আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য যা করা দরকার তা করা হয়েছে। আগুন নেভাতে একটানা কাজ করে গেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। একটানা কাজ করতে গিয়ে পানির সংকটেও ভুগতে হয়েছে। এজন্য চট্টগ্রামের আশপাশের জেলা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আনা হয়। আগুন নেভাতে চেষ্টা চালিয়ে যায় ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলের কাছে যেতে না পারায় ওপর থেকে পানি ছিটানোর কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ