Search
Close this search box.

আর ১৬ দিন : পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দুই পারে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ

আর ১৬ দিন : পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দুই পারে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ
ফিরোজ মান্না :
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নয়নমূলক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন ব্যবসায়ীরাও চালু করেছে নতুন নতুন গাড়ি। রাজধানী থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে দক্ষিণের ২১ জেলা। বেনাপোল, ভোমরা, মংলা, পায়রা বন্দর পৌঁছানো যাবে সহজেই। এ ছাড়াও, কুয়াকাটা-সুন্দরবনসহ পর্যটনখাতেও অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উদ্বোধনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে উৎসবের ততই বেড়েই চলেছে। দেশের মানুষের মনে আনন্দের বন্যা বইছে। ২৫ জুনের আগে যারা পদ্মা পার হয়ে বাড়ী যেতে চেয়েছিলেন তারা যাত্রা স্থগিত করেছেন। কারণ দুদিন পরেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে যাবে। সেতুর উপর দিয়ে যাবেন বলে তাদের এই যাত্রা পেছানো। কবি শারমিন সুলতানা রিনা’র সঙ্গে কথা হলে তিনি এমন অনুভূতির কথাই জানালেন। তিনি বললেন, আমার মেয়ের পরীক্ষা শেষ হবে ২২ জুন। ২৩ জুন তার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। বাড়ি তার গোপালগঞ্জে। কিন্তু তিনি তিনদিন পিছিয়ে ২৬ জুন পদ্মা সেতু পার হয়ে বাড়ি যাবেন বলে মনস্থির করেছেন। তার মতো হাজারো মানুষ স্বপ্নের পদ্মা সেতু পার হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
এদিকে, শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। সেতু উন্মুক্ত করার আনন্দের বার্তা এখন এ অঞ্চলের সব মানুষের মনেই বিরাজ করছে। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা যাওয়ার স্বপ্ন শরীয়তপুরবাসীর বহুদিনের। শরীয়তপুরবাসীর স্বপ্ন পুরণে আমরা শরীয়তপুর টু ঢাকা ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামে বাস সার্ভিস চালু করেছি। এছাড়া এসি বাস সার্ভিসও চালু করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের প্রথম বৃহৎ সেতু প্রকল্প যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের অন্যতম সদস্য ছিলেন প্রফেসর জাতীয় আধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। ওই সেতুর কাজে সরাসরি যুক্ত থাকার সুবাদে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তাকে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। এ প্যানেল সেতুর ডিজাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, ডিজাইন পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করেন।
সেতু বিভাগ জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর ভৌত কাজকে মূলত পাঁচটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। মূল সেতু, নদী শাসন, জাজিরা অ্যাপ্রোচ রোড, টোল প্লাজা ইত্যাদি। প্রকল্পে নিয়োজিত ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মনসেল-এইকম’ ভৌত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রি-কোয়ালিফিকেশন বিড ডকুমেন্ট প্রস্তুত, টেন্ডার আহ্বানের পর টেন্ডার ডকুমেন্ট মূল্যায়ন, টেন্ডার কমিটিকে সহায়তাসহ যাবতীয় কাজের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারকি করত। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের প্রকৌশলীর সমন্বয়ে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী।
জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী জীবিদ্দশায় লিখেছিলেন, ‘একটি সেতু বদলে দেবে দেশ’। তিনি বলেছিলেন পদ্মা বহুমুখী সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে দেবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এই সেতু আসলেই দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু হয়ে উঠবে। আজ অধ্যাপক জামিলুর রেজার কথাই সত্যি হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সিন্ধান্তে এমন একটি সেতু এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ২৫ জুন সেতু উদ্বোধন করবেন তিনি। পর দিন থেকেই সেতুর উপর দিয়ে দেশের মানুষ চলাচল শুরু করবেন। বদলে যাবে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক চিত্র। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে সামনে রেখে অনেক আগে থেকে নানা ধরণের কাজ শুরু হাতে নিয়েছেন। কৃৃষির সঙ্গে জড়িত কৃষক, ব্যবসায়ী ও খামারিরা। সব ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করেছে। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও ওই অঞ্চলে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে এত সব কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ