মোল্লা জালাল \ ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১২২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করা বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে সিলেট। এই পানিতে আরো তলিয়ে যাবে নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জসহ ভাটি অঞ্চল। এই সময়ে দুর্গত অঞ্চলের মানুষ নিয়ে রাজনীতি করাটা শুধু অমানবিকই নয় দেশদ্রোহিতার সামিল। দুর্যোগ নিয়ে তামাশা কেউ প্রত্যাশা করেনা। গোটা বিশ্ব এখন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে। বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। এমনিতেই ঝড়, বন্যা,জলোচ্ছাস, মহামারিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে চলতে হয়। তার ওপর অতিবৃষ্টির কারনে সিলেটের দুর্যোগ। এই দুর্যোগ মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে প্রচলিত সব পন্থা বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ।
ত্রাণ ও উদ্ধারে শৃঙ্খলা
ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কাজে সরাসরি কারো কোন সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। যা করার সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা করছে এবং করবে। প্রয়োজন হলে বিমানবাহিনীও যোগ দিবে। মোদ্দাকথা হচ্ছে, সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষা করা সব সাফল্যের পূর্বশর্ত। তাই মানবিক কারনে যারা সহযোগিতার হাত বাড়াতে চায় তারা সেনা সদস্যদের চাহিদা মোতাবেক কাজ করলেই হবে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠনসহ রাজনৈতিক দলের লোক যারা দুর্গতের ত্রাণ সহায়তা দিতে আগ্রহী তাদের ত্রাণ সেনা সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিলে অথবা কোথায় ত্রাণ সমাগ্রি রাখা হয়েছে তা জানিয়ে দিলে সেনা সদস্যরাই তা সংগ্রহ করে নিয়ে বিতরণ করতে পারবে।
ফটো সেশন
ত্রাণের নামে দুর্গত এলাকায় ফটো সেশন কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানের ইউটিউব ভাইরালে যুগে প্রশাসনকে খুবই সতর্ক থাকার দরকার আছে। কারণ কিছু কান্ডজ্ঞানহীন লোক এই দুর্যোগকে পূঁজি করে ‘ভাইরাল” হওয়ার জন্য বড় ধরণের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন সিলেটকে দুর্গত এলাকা ঘোষনা করে ওই অঞ্চলের সকল কিছু নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে প্রদান করা। যে বা যারা যা কিছু করতে চাইবে দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে করবে।
অবাধ যাতায়ত বন্ধ
সিলেট অঞ্চল তলিয়েছে। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ ভাটি অঞ্চল ডুবতে যাচ্ছে। এই পানি সরে যেতে কতদিন লাগেবে কে জানে। আবহাওয়া দফতর বলছে, এই বৃষ্টি আরো কয়েকদিন ধরে চলবে। অপরদিকে বর্ষা আসন্ন। ফলে বাদল, ঝড়, বৃষ্টি বন্যা হবেই। সুতরাং সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগবে। হাওর অঞ্চলে পানি আসলে এমনিতে ‘আফাল‘ হয়। তখন চলাচল করতে হয় সাবধানে। এটা কেবল ওই অঞ্চলের বাসিন্দারাই ভাল জানেন। কিন্তু ‘ভাইরাল‘ জেনারেশন তা জানেনা। এই ইউটিউবার ভাইরাল জেনারেশন নানা দিক থেকে যাবে দুর্গত এলাকায় গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করবে।
ত্রাণ সামগ্রি
ত্রাণ সামগ্রির ধ্যান-ধারনা বদলানো দরকার। এখন আর কোন মানুষ পুরোন ছেঁড়া ফাঁড়া কাপড়-চোপড় নিজেরাও পড়েনা কাউকে দেয়ও না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি কেউ কেউ পুরোন কাপড়-চোপড় জোগার করার জন্য হাঁক-ডাক শুরু করেছে। এরা মূলতঃ দুর্গত এলাকায় ফটো সেশন করে ভাইরাল হওয়ার জন্য এসব করছে। তাই দুর্গত এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করতে চাইলে চাল, ডাল, তেল, নূন,গুড়, চিড়া-মুড়ি,আটা-ময়দা বাজর থেকে কিনে নিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিন। আইসপিআর ব্রিফিং করে সবার নাম এবং কে কি দিয়েছে বলে দিতে পারবে।
নতজানু নয়
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফসল নয়। স্কুলে পড়তাম চেরাপুঞ্জিতে সারা বছর বৃষ্টি হয়। নতজানু বলনেওয়ালা নিজেও স্কুলে তা পড়েছেন। কারণ আমার চেয়ে তার বয়স বেশি নয়। সুতরাং শিক্ষিত লোকদের চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলা উচিৎ। নইলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। আর মানুষকে বিভ্রান্ত করা আইনের দৃষ্টিতে দেশদ্রোহীতা।
পদ্মা সেতুর উৎসব শুধু সরকার বা আওয়ামী লীগের নয়, গোটা জাতির। এটা এখন ঈদ উৎসবেরমত হয়ে যাচ্ছে। তাই ব্যাঙ্গ বা কটুক্তি করে কোন লাভ হবেনা। মানুষ ধিক্কার দিবে। সেসব কিছু বিবেচনায় রেখে সবাইকে দেশে ও জাতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে বলতে হবে , চলতে হবে, করতে হবে।