Search
Close this search box.

যৌতুকের জন্য অন্তঃসত্বা স্ত্রীকে হত্যা করে সিরাজুল

অন্তঃসত্বা স্ত্রীকে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার \ মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইরে জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুল (৩৯)’কে ১৯ বছর পর নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানার চর সৈয়দপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সিরাজুল (৪০)’কে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার সকালে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সঙবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক(ডিআইজি পদোন্নতি প্রাপ্ত)।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক(ডিআইজি পদোন্নতি প্রাপ্ত)
     অধিনায়ক র‌্যাব-৪ মোজাম্মেল হক  (ডিআইজি পদোন্নতি প্রাপ্ত)

তিনি জানান, গত ২০০২ সালের জুলাই মাসে গ্রেফতারকৃত আসামী সিরাজুল ইসলাম এর সাথে নিহত জুলেখা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশকিছু নগদ অর্থ, গহণা এবং আসবাবপত্র বরপক্ষকে প্রদান করে জুলেখার বাবা। বিয়ের পর থেকে আসামী সিরাজুল জুলেখা‘কে আরো যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে এবং যৌতুক না দিতে পারলে তালাক দেয়ার  ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। নিহত জুলেখা তখন ০৮ মাসের অন্তঃসত্বা। ভয়ভীতি দেখানোর পরও পর্যাপ্ত যৌতুক না পাওয়ায় তাদের পারিবারিক কলহ আরো বেড়ে যায়।

উপায়ন্তর না দেখে বাড়ির পাশের মোশারফ নামে এক যুবকের সাথে জুলেখার পরকীয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে নির্যাতন করে।  সিরাজুলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে জুলেখার বাবা ও ভাইসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গ্রামে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিশি বৈঠকে পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আসামি সিরাজুল কে গালিগালাজ করে এবং জুলেখা‘কে নির্যাতন না করার জন্য সতর্ক করে।

পরবর্তীতে সিরাজুল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে জুলেখাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৫ ডিসেম্বর জুলেখাকে নিয়ে শশুর বাড়ি সিংগাইরের উত্তর জামশা গ্রামে যায়। গত ৬ ডিসেম্বর আসামী সিরাজুল স্ত্রী জুলেখাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মানিকগঞ্জ শহরে নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন অজুহাতে ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করে গভীর রাতে শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে মানিকগঞ্জ শহর থেকে রওনা হয়। মানিকগঞ্জ শহর থেকে আসামী সিরাজুল জুলেখাকে নিয়ে শশুর বাড়ি না গিয়ে কৌশলে তার শ্বশুর বাড়ির নিকটবর্তী কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি তার ব্যাগে থাকা গামছা বের করে স্ত্রী জুলেখার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে নিহতের বাবা মোঃ আব্দুল জলিল বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় আসামি সিরাজুলসহ তার বড় ভাই রফিকুল, মা রাবেয়া বেগম, খালু শামসুল, চাচা ফাইজুদ্দিন ও তাইজুদ্দিন এবং মামা আবুল হোসেন সহ সর্বমোট ০৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত শেষে এজাহারনামীয় আসামী ভিকটিমের স্বামী সিরাজুল, ভাসুর রফিকুল, শাশুরী রাবেয়া এবং খালু শশুর শামসুলসহ সর্বমোট ০৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় এবং এজাহারনামীয় বাকি ০৩ জন আসামী ফাইজ উদ্দিন, তাইজুদ্দিন ও আবুল হোসেন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশীট থেকে অব্যাহতি প্রদান করে।

পরবর্তীতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে জুলেখাকে হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০০৫ সালের শেষের দিকে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মোতাহার হোসেন আসামী সিরাজুল’কে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে এবং অপর ০৩ জন আসামি ভাসুর রফিকুল, শাশুরী রাবেয়া এবং খালু শশুর শামসুল’কে বেকসুর খালাস প্রদান করে। ঘটনার পর থেকে আসামি সিরাজুল প্রায় ১৯ বছর পলাতক ছিল। পলাতক থাকা অবস্থায় আসামী পালিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে যায় এবং নিজেকে আড়াল করার জন্য সিরাজ নাম ধারন করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার চর সৈয়দপুর গ্রাম’কে বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মানিকগঞ্জ, বাড়াইল চর ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ