স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরায় ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিনজন নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। এরমধ্যে জঙ্গিদের নিক্ষেপ করা গুলি ও বোমায় দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং পুলিশের অনেকে আহত হন। হামলার ছয় বছর পূর্তি ছিল আজ শুক্রবার। নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।
সকালে হলি আর্টিসান ভবনের সামনে অস্থায়ী বেদিতে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। সকাল সাড়ে ৭টায় প্রথম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। তারপর ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, হলি আর্টিসান রেস্তোরায় নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের সবাইকে স্মরণ করছি। বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আমরা খুবই ব্যথিত। এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এ ধরনের ঘটনা কেন এবং কীভাবে ঘটছে। একসঙ্গে কাজ করে এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরায় না ঘটে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ছয় বছর আগের হামলায় মেট্রোরেল লাইন ওয়ান প্রকল্পের গবেষণায় নিয়োজিত সাতজন জাপানি নাগরিক নিহত হয়েছেন। যাদেরকে আমরা কখনোই ভুলব না। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে যে ভূমিকা দেখিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। হলি আর্টিসানে হামলার পর যেভাবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ২০১৬ সালের ১লা জুলাই হলি আর্টিসান বেকারি হামলার ষষ্ঠ বার্ষিকী স্মরণে এবং এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত ২০ জনের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্রদূত হাস বাংলাদেশে জাপান, ইতালি ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়, আমরা স্মরণ করছি অবিন্তা কবীরকে যিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক এবং এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আরও স্মরণ করছি, তার সহপাঠী ফারাজ হোসেনকে যিনি নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তার বন্ধুদের সঙ্গে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
‘আমরা আরও স্মরণ করছি বার্কলির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ঢাকাস্থ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী তারিশি জৈনকে যিনি গ্রীষ্মকালীন ইন্টার্নশিপের জন্য ফিরে এসেছিলেন। গভীর শ্রদ্ধাভরে আমরা স্মরণ করছি, চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও আহত ২৫ কর্মকর্তার সাহসিকতাকে।’
‘শোকাবহ এই বার্ষিকী অনুষ্ঠানে আমরা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। যারা প্রাণ দিয়েছেন, তারা সবাই শান্তিতে সমাহিত থাকুন।’
দুপুরে গুলশানে নিহত দুই পুলিশ সদস্যের স্মৃতিতে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। এ সময় আরও শ্রদ্ধা জানান ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এসবি (বিশেষ শাখা) প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির পক্ষ থেকে কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, র্যাবের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ বিভিন্ন ইউনিটের পুলিশ সদস্যরা।