মিথুন আশরাফ : কমনওয়েলথ গেমসের পর্দা উঠে গেছে। বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন ভারত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ও বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা। এখন লড়াই শুরু হওয়ার পালা। আজই শুরু হচ্ছে লড়াই। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম শহরে ২২তম কমনওয়েলথ গেমসের উদ্বোধনের পর খেলা শুরুর প্রথমদিনেই চার ডিসিপ্লিনে খেলতে নামছে বাংলাদেশ।
বার্মিংহামে উৎসবের আমেজ লেগেছে। তবে উৎসবটা মুলত সিটি সেন্টারের আশপাশে। বার্মিংহাম শহরের কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থিত এই সিটি সেন্টার। তার চারপাশের বিভিন্ন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে এই গেমস। আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে মার্চপাস্টের মাধ্যমে পর্দা উঠেছে গেমসের। তাতে ৭২ দেশের ৫০৫৪ জন মার্চপাস্টে অংশ নেন।বাংলাদেশের ৩০জন ক্রীড়াবিদও ছিলেন।
একযোগে ১১ ডিসিপ্লিন মাঠে গড়াবে প্রথম দিনে। যেখানে চার ডিসিপ্লিনে লড়াই করবে বাংলাদেশের ১২ অ্যাথলেট। এরমধ্যে সম্ভাবনার জিমন্যাস্টিকে প্রথম দিনেই দুই ইভেন্টে রিংয়ে নামবে বাংলাদেশ।খুব জোর গলায় না হলেও ব্যক্তিগত কিছু ইভেন্টে ভালো কিছুর প্রত্যাশা আছে বাংলাদেশের। বিশেষ করে জিমন্যাস্ট আলী কাদের হক ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্প্রিন্টার ইমরানুরকে নিয়ে আশা দেখছেন অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের কর্তারা। এছাড়া হাই জাম্পে মাহফুজুর রহমান ও উম্মে হাফসারাও আশা দেখাচ্ছেন।
গেমসে ১৯ ডিসিপ্লিনের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা এবার অংশ নেবেন সাতটি ডিসিপ্লিনে। দুই মাদার ইভেন্ট অ্যাথলেটিক্স ও সাতার ছাড়াও ভারোত্তোলন, জিমন্যাস্টিকস, কুস্তি, বক্সিং ও টেবিল টেনিসে থাকবে বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব। এই সাত ডিসিপ্লিনের মধ্যে আজ চারটিতে নামছে বাংলাদেশ। বক্সিয়ে মো. হোসেন আলী, সুরু কৃষ্ণ চাকমা ও সেলিম হোসেন রিংয়ে দাড়াবেন। এদের মধ্যে হোসেন আলী ৬৩.৫-৬৭ কেজি ওজন শ্রেণীতে, সুরু কৃষ্ণ ৬০-৬৩ কেজিতে এবং ৫৪-৫৭ কেজিতে সেলিম হোসেন লড়াই করবেন।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কমনওয়েলথ গেমস বাংলাদেশকে দিয়েছে অন্যরকম পরিচিতি। যদিও সেটা এসেছে শ্যুটারদের কল্যাণে। এই আসরে এ পর্যন্ত পাওয়া আটটি পদকের সবক’টিই এনে দিয়েছেন শুটাররা। ১৯৯০ অকল্যান্ড কমনওয়েলথ গেমসে দুই শ্যুটার আতিকুর রহমান ও আব্দুস সাত্তার নিনি ১০ মিটার এয়ার পিস্তল দ্বৈত ইভেন্টের ফাইনালে ফেভারিট অস্ট্রেলীয় জুটিকে হারিয়ে রীতিমতো বিখ্যাত বনে যান। কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে দেশ পায় প্রথম পদকের দেখা। আতিক-নিনির সোনায় মোড়ানো সাফল্য সাহস দিয়েছিল অনুজদের।
এরপর থেকে তাদের পথ অনুসরণ করে শুটাররা। ব্যতিক্রম কেবল এবার। নিরাপত্তা ভাবনায় এবার শুটিং রাখেননি আয়োজকরা। বাংলাদেশের আরেক সম্ভাবনাময় খেলা আরচারিও জায়গা পায়নি ১৯টি খেলার তালিকায়। নারী ক্রিকেটের স্বপ্ন বাছাইয়েই সমাধি হয়ে গেছে।
এনইসি হলের চার নম্বর ফ্লোরে হবে বক্সি। বাস্তবতার নিরিক্ষে বক্সার সুরু কৃষ্ণ চাকমা বলেন, ‘বৈশ্বিক এসব আসরে ভালো করতে হলে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দরকার তার ধারে কাছে নেই আমরা। সত্যি বলতে আমরা এটাকে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ হিসেবে ধরে নিয়ে রিংয়ে দাড়াবো। চেষ্টা করবো নিজেদের সর্বোচ্চটা দেয়ার। এরপর যদি কিছু হয়।’
গেমসের মূল ভেন্যু বার্মিংহামের আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সকালেই অনুশীলন করেছে বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। সকালে অনুশীলনের ভেন্যু থেকে আক্ষেপ করে ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত বলেন, ‘গোলকোস্ট কমনওয়েলথ গেমেস আমি ষষ্ঠ হয়েছিলাম। এবার তার চেয়ে ভালো করার সম্ভাবনা কম।’ এর কারণ হিসেবে এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ী এই ক্রীড়াবিদ বলেন, ‘আমরা মাত্র চার মাসের অনুশীলনে এখানে খেলতে এসেছি। অন্য যারা প্রতিযোগী আছে তারা চার বছর প্রস্তুতি নিয়ে এখানে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমরা কিভাবে কুলিয়ে উঠবো?’ আশা খুব বড় নয়, এরমধ্যে যদি বিশাল কিছু অজন হয়ে যায়। তাহলেই তো হয়ে গেল।