Search
Close this search box.

র‌্যাবের অভিযানে ভুয়া ভিসা ও ভুয়া টিকেট তৈরি চক্রের দুইজন গ্রেফতার

পল্টনে সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্র

স্টাফ রিপোর্টার \ রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের দই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় গ্রেফতারকৃতদের হেফাজত থেকে ভুয়া ভিসা ,সিল,টিকেট জব্দ করে র‌্যাব সদস্যরা।

র‌্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার(অপস ও ইন্ট) বীনা রানী দাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন । তিনি বলেন, বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল  রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচার চক্রের মূলহোতা  মোঃ জাবেদ হোসেন রকি (৩৩), এবং তার অন্যতম সহযোগী মোঃ আবির ওরফে শুভ (২৭)কে  গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের হেফাজত থেকে ১ টি সিপিইউ, ৫ টি পাসপোর্ট, ২০ টি খালি স্ট্যাম্প, ১০ টি ট্রেনিং সার্টিফিকেট, ২ টি ভূয়া ওমান কনস্যুলেটর ও দূতাবাসের সীল, ১ টি মোবাইল ফোন, ১ বক্স ভিজিটিং কার্ড,  প্রায় শতাধিক ভূয়া ভিসার ফটোকপি, ৫০ টি কোভিড-১৯ এর ভূয়া রিপোর্ট এবং ৩ টি চেকের পাতা উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ  মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানির প্রলোভন দেখিয়ে ভূয়া ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক যুবতীদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে সর্বশান্ত করেছে। সহজ সরল বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ওই ভূয়া ভিসা ও টিকেট বিমানবন্দরে প্রদর্শন করার পর ইমেগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা ও টিকেট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর হতে ফিরিয়ে দেয়।

প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামী জাবেদ হোসেন রকির মাতা সেলিনা বেগম চক্রের সাথে জড়িত। সে ২০০৪ সাল থেকে ওমানে অবস্থান করছে। সে ওমানের একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে কর্মী হিসেবে কাজ করে। সে  ২০১৮ সাল থেকে চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে  তাদের সহযোগিতা করে আসছে। জনশক্তি রপ্তানির কোন লাইসেন্স নেই রকির । কিন্তু সে দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক প্রেরণ করে আসছে। এছাড়াও চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যে উচ্চ বেতনে জনশক্তি প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক যুবতিদের নিকট থেকে ৩ হতে ৪ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভূয়া ভিসা এবং ভূয়া টিকেট ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়।

এসপি বীনা রানী দাশ আরও জানান, ২০১৮ সাল থেকে উক্ত চক্রটি জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স ছাড়া গত ৪ বছরে অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে প্রেরণ করে। যারা বিদেশ গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে এই চক্র শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৩ হতে ৪ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভূয়া ভিসা এবং ভূয়া টিকেট সরবরাহ করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

চক্রের মূলহোতা মোঃ জাবেদ হোসেন রকি ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া ২০১২ সালে জাবেদ হোটেলের ওয়েটার ভিসায় দুবাই গিয়ে সেখানে ৪ বছর অবস্থান করে। দেশে ফেরার পর ২০১৮ সাল থেকে সে প্রতারণা এবং মানবপাচারকে তার পেশা হিসেবে বেছে নেয়। তার ট্রাভেল এজেন্সির কোন লাইসেন্স নেই। কিন্তু সে জাবেদ ট্রাভেল এজেন্সি নামে তার অফিস পরিচালনা করে আসছে। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রথমে সে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে নারী কর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে প্রেরণ করে। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের পর সে পুরুষ কর্মীদের বিদেশ প্রেরণের জন্য পাসপোর্ট ও টাকা সংগ্রহ করে প্রতারণামূলকভাবে জনপ্রতি ৩ হতে ৪ লক্ষ টাকা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। তারপর সে তার অফিসের কম্পিউটার ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের ভূয়া ভিসা তৈরী করে এবং উক্ত ভিসায় উদ্ধারকৃত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের নকল সিল ব্যবহার করে ভূয়া ভিসাটি আসল হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে। অতপর ভুয়া ভিসা, নকল টিকেট ও নকল বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ভিকটিমকে সরবরাহ করে। ভুক্তভোগীরা ওই ভিসা এবং টিকেট নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের  ভিসা এবং টিকেট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিলে সে ভিকটিমদের পুনরায় নতুন ভিসা ইস্যু করার জন্য সময় প্রার্থনা করে। ভিকটিমদের কেউ কেউ তার কথায় আশ্বস্থ হয়ে পুনরায় নতুন ভিসা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।

অন্যদিকে ভিকটিমদের মধ্যে কেউ টাকা ফেরত চাইলে সে ভিকটিমদের ব্যাংক চেক প্রদান করে। কিন্তু উক্ত চেক ব্যাকে জমা দিতে গেলে ভিকটিমরা জানতে পারেন তার একাউন্টে কোন টাকা নেই। এভাবে সে ভিকটিমদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে। এর আগেও  তার নামে মানবপাচার ও প্রতারনার দুইটি মামলা রয়েছে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ