স্টাফ রিপোর্টার – পদ্মা সেতুর ষড়যন্ত্রকারীদের ধরতে কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সেতুর দুর্নীতি অপ্রচারের সাথে সম্পৃক্ত প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে ১৯৫৬ সালের ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্ট’র তৃতীয় অনুচ্ছেদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন অনুযায়ী কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত একটি সার-সংক্ষেপ পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তির বিষয়ে গত ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ইউনুসের বিচার দাবি : বিশ্বব্যাংক ও টিআইবি’র প্রতি ক্ষমা চাওয়ার আহবান’ শীষক সংবাদটি নজরে এনে হাইকোর্ট বিভাগ সুয়োমোটোর রুল জারি করেন।
পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি সংক্রান্ত অসত্য তথ্য সৃজন করে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার লক্ষে কমিশন গঠনের আদেশ কেন প্রদান করা হবে না সে মর্মে রুলটি জারি করা হয়। গত ২৮ জুন উক্ত মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ের কপি গত ২৮ আগষ্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পেয়েছে। আদেশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন গঠন এবং দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সার-সংক্ষেপে আরো বলা হয়, ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ (৩ ধারা)’ অনুসারে কমিশন গঠন হতে পারে এবং এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতিপূর্বে সেতু বিভাগ এবং আইন, বিচারও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত সংগ্রহ করা হয়। সেতু বিভাগ থেকে বলা হয়েছে বর্ণিত কমিশন গঠনের কার্যক্রম উক্ত বিভাগ থেকে গ্রহণ করা সমীচীন হবে না মর্মে অবহিত করে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মতামত প্রদান করে যে, বিষয়বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট বা কর্মপরিধিভুক্ত সে মন্ত্রণালয় বিভাগ ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ এর অধিনে কমিশন গঠন এবং উক্ত কমিশনে তদন্তের বিষয় ও প্রকৃতি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ এক বা একাধিক সদস্য নিয়োগ করা যেতে পারে।
আইনের ধারা ৪ ও ৫ অনুযায়ী কমিশন একটি দেওয়ানি আদালত হিসেবে গণ্য হবে এবং আদালতের ন্যায় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। তদন্ত কমিশনে কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে সদস্য/সভাপতি হিসেবে নিয়োগের প্রয়োজন হলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে মর্মে উক্ত বিভাগ মতামত প্রদান করেছে।
হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত কোন বিচারপতির নেতৃত্বে ইনকোয়ারি অ্যাক্ট অনুসারে কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত আইন ও বিচার বিভাগকে অনুরোধ করা যেতে পারে বলা হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে সুয়োমোটো রুল সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন প্রশ্নে জারি করা রুল কার্যতালিকায় আসলে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। হাইকোর্ট বলেছেন, পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটা আমাদের অহঙ্কার। এ ধরনের জাতীয় স্বার্থ উন্নয়নের বিরুদ্ধে যারা থাকেন, তারা জাতির শত্রু, দেশের শত্রু, তাদের চিহ্নিত করা দরকার।
২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং পরদিন ওই প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদের কথা উল্লেখ করে এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, আইন ও যোগাযোগ সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান এবং আইজিপিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পাশাপাশি এ কমিটি বা কমিশন গঠনের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে ওই বছরের ২০ মার্চ রুলের জবাব ও প্রতিবেদন দিতে আট সপ্তাহের সময় চেয়ে আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছরের ৭ মে পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে কমিশন গঠনের জন্য ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর একজন সদস্যের নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তিনি হলেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (কারিগরি) মো. কামরুজ্জামান।