স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে কিনা বিষয়টি দেখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর ৬টি পয়েন্টে একযোগে এই আদালত চলছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সঙ্গে রয়েছেন ২ জন করে বেঞ্চ সহকারী।
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় বিকাশ চন্দ্র বর্মন, কলাবাগান এলাকায় ফিরোজা পারভীন, রায়ের বাগ এলাকায় তরিকুল ইসলাম, বনানী এলাকায় সাজিদ আনোয়ার, নটরডেম কলেজের বিপরীতে খোশনুর রুবাইয়াৎ এবং সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় জুবের আলম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। তারা সবাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদ মর্যাদার।
সকাল থেকে কলাবাগান এলাকায় দেখা গেছে, সন্দেহভাজন বাসগুলোকে কর্তব্যরত সার্জেন্টরা প্রথমে থামাচ্ছেন। পরে আদালতের বেঞ্চ সহকারীগণ বাসে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়ার বিষয় এবং যাত্রীদের কোনো অভিযোগ থাকলে বিষয়টি নিয়েও কথা বলা হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি বাসের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সবকিছু দেখা হচ্ছে। কোনো বিষয়ে অসম্পূর্ণ থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কলাবাগান এলাকায় বিআরটিএর পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত-৪ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভিন জানান, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে রুট পারমিট না থাকাসহ অন্যান্য অভিযোগে ৪টি মামলায় ৪টি বাস থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে শেওড়া পর্যন্ত ২০ টাকার জায়গায় ২৫ টাকা ভাড়া নেওয়ায় ৩ নম্বর পরিবহনের একটি বাসকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। রাজধানীর বনানী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এই জরিমানা করেন বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার।
সরেজমিনে দেখা যায়, বনানী রেলওয়ে স্টেশনের সামনে সকাল থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে। বেলা সাড়ে ১১টায় ৩ নম্বর পরিবহনের একটি বাস বনানী রেলওয়ে স্টেশনের সামনে আসলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থামানোর নির্দেশ দিয়ে বাসটিতে উঠেন। বাসে উঠে ম্যাজিস্ট্রেট কয়েকজন যাত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন কত করে ভাড়া নিচ্ছে সুপারভাইজার।
তখন এক যাত্রী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেন, তিনি কারওয়ান বাজার থেকে শেওড়া যাচ্ছেন। তার কাছ থেকে সুপারভাইজার ২৫ টাকা ভাড়া নিয়েছেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নতুন নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা মিলিয়ে দেখেন এ দূরত্বে ভাড়া ২০ টাকা। পরে তিনি বাসের সুপারভাইজারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় ছয় হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার জানান, প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারিত নতুন ভাড়া পরিবহনগুলো নিচ্ছে কিনা, বিষয়টি তদারকি করতে আজ সকাল থেকে বনানী এলাকায় আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। যেসব পরিবহনের বাসের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং তার সত্যতা মিলছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ৩ নম্বর পরিবহনের বাসটি নির্ধারিত ভাড়া থেকে যাত্রীপ্রতি ৫ টাকা করে বেশি নিচ্ছিল। সেজন্য আইন অনুযায়ী বাসটিকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আদালত চলাকালে, নতুন নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না থাকলেই গণপরিবহনগুলোকে জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বনানীতে ট্রাস্ট পরিবহনের একটি বাস অভিযানস্থলে আসলে হাত দিয়ে থামানোর নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযানে দায়িত্বরতরা বাসটিতে উঠেন। পরে তারা বাসের বিভিন্ন জায়গায় নতুন নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা খুঁজতে থাকেন। কিন্তু বাসটিতে কোনো ধরনের ভাড়ার তালিকা পাননি। পরে বাসের চালকের কাছে ভাড়ার তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি দেখাতে পারেনি।
এ সময় বিআরটিএ‘র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চালক ও সুপারভাইজারের কাছে জানতে চান, তালিকা ছাড়া কীভাবে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তারা কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া তালিকা না থাকায় যাত্রীরাও জানেন না নির্ধারিত ভাড়া কত। পরে ট্রাস্ট পরিবহনের বাসটিকে আট হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ বিষয়ে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গণ জানিয়েছেন নতুন নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করা হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে আমাদের নিয়মিত তদারকি চলবে। কোথাও কোনো অনিয়ম পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।