স্টাফ রিপোর্টার- বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে টানা দুই মাস ধরে গোলাগুলির পর এবার নতুন করে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তেও গোলাগুলির পাশাপাশি থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল। এতে এপারের বসতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঝুঁকির মধ্যে সময় কাটাচ্ছে পালংখালী ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ববালুখালী, আঞ্জুমান পাড়া, থাইংখালী গ্রামের ৭০টির বেশি পরিবার।
সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা একাধিক সূত্র ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ঘুমধুম সীমান্ত (দক্ষিণ দিকে) লাগোয়া কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্ত। ৭০০-৮০০ ফুট প্রস্থের নাফ নদী বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত ভাগ করে রেখেছে। তবে নাফ নদীর টেকনাফ অংশের দূরত্ব তিন-চার কিলোমিটার।
আঞ্জুমানপাড়া থেকে ওপারে রাখাইন রাজ্যের ঢেকুবনিয়া ও কোয়াসিমং এলাকা খালি চোখে দেখা যায়। সেখানে একসময় লাখো রোহিঙ্গার বসতি ছিল। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গাদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যারাক ও সীমান্তরক্ষী বিজিপির সদর দপ্তর গড়ে তোলা হয়।
উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, দুই মাস ধরে ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলির খবর শোনা গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে পালংখালী সীমান্তের বিপরীতে মুহুর্মুহু গোলাগুলি শুরু করে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী। দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেলের গোলা। এতে পালংখালী ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আঞ্জুমান পাড়া, থাইংখালী ও বালুখালী গ্রামের মানুষ আতঙ্কে আছে। গ্রামগুলো নাফ নদীর তীরে, সেখান থেকে মিয়ানমারের দূরত্ব কাছাকাছি। মর্টার শেলের বিকট শব্দে কাঁপছে পালংখালীর বিভিন্ন এলাকা। গোলাগুলির বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, ঘুমধুমের পর উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাগুলি হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে সীমান্তে গিয়ে খবরের সত্যতা যাছাইয়ের সুযোগ পুলিশের নেই।
মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি তৎপরতা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন পালংখালী ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। গুলির বিকট শব্দে ঘরবাড়ি কাঁপছে। তাঁদের ধারণা, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষীদের সদর দপ্তর থেকে মর্টার শেল ছোড়া হচ্ছে।
গোলাগুলির বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসাইন বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী, থাইংখালী ও আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে বিপরীতে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে তাঁকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন। সীমান্তের ৩০০ মিটারের ভেতরে বাংলাদেশি শতাধিক পরিবারের বসতি রয়েছে। পরিবারগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি তৎপর আছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।