রাকিব হাসান- দেশে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মোট মৃত্যু দাঁড়ালো ২৯ হাজার ৩৪৫ জনে। এর আগে সবশেষ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল গত ২৭ জুলাই। ফলে ৫৫ দিন পর আবার মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচে উঠল। এর মাঝে কোনো কোনোদিন ১/২ জন মারা গেছেন। আর কোনো কোনোদিন মৃত্যুর ঘর ছিল শূন্য।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ২০ লাখ ১৮ হাজার ৮২৯ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ২৮৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৬১ হাজার ২৬০ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৮৩১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ৪ হাজার ৮২৫টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ।
গত একদিনে মারা যাওয়া ৫ জনের মধ্যে তিনজন পুরুষ, দুইজন নারী। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে দুইজন এবং চট্টগাম, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মারা গেছেন।
করোনা ভাইরাস ‘একটি অনেকগুলো ভাইরাস এর সমন্বয়ে গঠিত বড় গ্রুপ বা ফ্যামিলি’ যেটা সাধারণ ঠান্ডা লাগা থেকে অনেক জটিল রোগের উৎপত্তি করে থাকে l মার্স এবং সার্স এর সঙ্গে তুলনীয় l ২০১৯ সালে উৎপত্তি এই ভাইরাস একটি নতুন ধরনের।
এই ভাইরাসটিকে বলা হয় জোনোটিক যার অর্থ হচ্ছে এটা ‘পশু এবং মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়’ যেমনটি সার্স সংক্রামিত হয়েছিল বিড়াল জাতীয় প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এবং মার্স এসেছিলো উট থেকে মানুষের মধ্যে l
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) চীন শাখা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম কোরোনার ঘোষণা দেয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত কিছু রোগীর এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। উহান শহরের সীফুড ও পোলট্রি মার্কেটকে এর উৎপত্তিস্থল বলে ঘোষণা দেওয়া হয় l প্রথম ব্যাচে ৫৯ জনকে সনাক্ত করা হয় যাদেরকে জানুয়ারী মাসে ‘জিনটান’ হাসপাতালে ভর্তি করে বিচ্ছিন্ন পরিবেশে রাখা হয় এরপর হুবেই প্রদেশের ১৭১৬ জন স্বাস্থকর্মী এই ভাইরাস এ আক্রান্ত হয়।
এদিকে করোনাভাইরাসে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। একইসঙ্গে করোনা মহামারি সমাপ্তির পথে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে উল্লেখ করে সংক্রামক এই রোগের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রধান। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনা মহামারি শেষ করার জন্য আমরা কখনোই ভালো অবস্থানে ছিলাম না। আমরা এখনও সেখানে নেই, কিন্তু (করোনা মহামারির) শেষ দেখা যাচ্ছে।’
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই এই ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সংক্রামক এই ভাইরাসে ৬০ কোটিরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৫ লাখেরও বেশি মানুষ।
তবে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেছেন, করোনাভাইরাসে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে গত সপ্তাহে সংক্রমণ সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমরা এখন এই সুযোগটি গ্রহণ না করি, তাহলে আমরা ভাইরাসের আরও ভ্যারিয়েন্ট, আরও মৃত্যু, আরও বিধিনিষেধ এবং আরও অনিশ্চয়তার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবো।’
এই পরিস্থিতিতে দেশগুলোকে ভাইরাসের লাগাম টেনে ধরতে যা করতে হবে তা করতে সাহায্য করার জন্য ছয়টি সংক্ষিপ্ত নীতি প্রকাশ করেছে ডব্লিউএইচও। টেড্রোস বলেন, ‘এসব নীতি সরকারগুলোর জন্য তাদের কৌশল আরও কঠোর করার এবং করোনা মহামারির সম্ভাবনাসহ ভবিষ্যতের রোগজীবাণুগুলো প্রতিরোধের জন্য তাদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য একটি জরুরি আহ্বান।’
একইসঙ্গে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোতে ১০০ শতাংশ টিকা দেওয়ার এবং ভাইরাস শনাক্তের জন্য পরীক্ষা চালিয়ে যেতেও দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন এবং থেরাপি এই রোগের তীব্রতা রোধ করতে সাহায্য করেছে। আর তাই ভাইরাসের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ঢেউ সম্পর্কে সতর্ক করার পাশাপাশি দেশগুলোকে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী হাতে রাখতে হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।