Search
Close this search box.
বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ

দুর্গাপূজায় দেশের কোনো মণ্ডপ-মন্দির অরক্ষিত অবস্থায় নেই

স্টাফ রির্পোটার- বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেছেন, এবারের দুর্গাপূজায় দেশের কোনো মণ্ডপ-মন্দির অরক্ষিত অবস্থায় নেই।

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন চন্দ্রনাথ পোদ্দার। শুক্রবার সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মতবিনিময় সভাটি হয়। সভার আয়োজক মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি।

চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘আমাদের সনাতন সম্প্রদায়ের যাঁরা পূজা আয়োজন করছেন, তাঁরা মনে করছেন, সুষ্ঠুভাবে দুর্গোৎসব করতে পারবেন। বাকি বিষয় সরকার ও প্রশাসন দেখবে। যাতে নির্বিঘ্নে পূজা করা যায়, সেটা নিশ্চিত করা তাদেরই দায়িত্ব।

এক প্রশ্নের জবাবে চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘আমরা মনে করছি, বাংলাদেশের কোনো পূজামণ্ডপ, মন্দির ভালনারেবল (অরক্ষিত) নয়। গত শনিবার পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ অবশ্য বলেছিল, এবারও নিরাপদে দুর্গাপূজা করা যাবে বলে মনে করে না তারা।

নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে আজকের মতবিনিময় সভায় মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, সব জায়গায়, বিশেষ করে গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যেতে পারবে না পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু যেগুলো ভালনারেবল, তারা জিনিসগুলোকে গ্রেডিং করেছে। যে জায়গায় নিরাপত্তা বাড়ানো যায়, তারা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিষয়গুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হলে আরও কম পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল। এ সময় তিনি ঢাকা মহানগরের সব দুর্গাপূজা মণ্ডপের জন্য ২১ দফা নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে আছে—সন্দেহভাজন দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা, আর্থিক সংগতি বিবেচনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা, অস্থায়ী মন্দিরের প্রতিমা দশমীর দিনই বিসর্জন দেওয়া, কোনো প্রকার গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো বা ৯৯৯ নম্বরে কল দেওয়া।

মতবিনিময় সভা থেকে ১০ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে আছে—দুর্গাপূজার ছুটি দুই দিন করা, দুর্গাপূজার পাঁচ দিন রাষ্ট্রীয় সব ভবন জাতীয় উৎসবের আঙ্গিকে আলোকসজ্জা করা।

এদিকে শুরু হওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন ও পালনের জন্য মন্দিরে-মণ্ডপে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্কভাবে পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রকাশ্যে যতটা নিষ্ক্রিয়; ভেতরে ভেতরে ততটা সক্রিয় আছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগের বছরের বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার সরকার সতর্ক রয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দুর্গোৎসবে সক্রিয়ভাবে দরকার হলে মন্দিরে মন্দিরে পাহারায় থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নেতাকর্মীরা থাকবে এটা আশা করি। সতর্ক ও সক্রিয় থেকে সব ধরনের উদ্বেগ দূর করার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা আতঙ্কিত হবেন না, উদ্বিগ্ন হবেন না। আমরা আপনাদের পাশে আছি। গতবারের দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সারা দেশর মন্দিরে মন্দিরে, মণ্ডপে মণ্ডপে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্কভাবে পাহারা দিতে হবে। শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি। আওয়ামী লীগ মনে প্রাণে চিন্তা চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক দল এবং আমাদের প্রায় প্রতিদিনের বক্তব্যে আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার যে বিষয়টি আমরা ধারণ করি এবং সভা-সমাবেশে, বিক্ষোভে দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণে আমরা কখনো দিধাগ্রস্থ হই না।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের ১৩ বছরের মধ্যে গতবার ব্যতিরেকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। ১২ বছর কোনো দুর্গাপূজায় সামান্যতম কোনো বিশৃঙ্খলা-সন্ত্রাস কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মাঝে মাঝে কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে। গতবার সতর্কতার একটা ঘাটতি ছিল। কারণ, সময়টা এখন সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তি, তারা বাইরে তাদেরকে যতটা নিষ্ক্রিয় মনে হয়, ভেতরে ভেতরে তারা তার চেয়ে সক্রিয়। এ রকম একটা বাতাবহ দেশে আছে। অস্বীকার করার উপায় নেই। কুমিল্লায় যেটা ঘটেছে বীভৎস, চৌমুহনীতে যা ঘটেছে তা আরও ভয়ানক। এছাড়া রংপুরে, সিলেটে, সুনামগঞ্জের নাসিরনগরে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন দলীয় পরিচয়ে দুর্বৃত্তরা এই ধরনের ঘটনা ঘটায়।

আমি মনে করি যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটায়, যে পরিচয়েই হোক তাদের একমাত্র পরিচয় হচ্ছে দুর্বৃত্ত। এরা বিভিন্ন পরিচয়ে আওয়ামী লীগ পরিচয়েও দুর্বৃত্ত আছে, দলের পরিচয় ব্যবহার করে অনেক দুর্বৃত্ত এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় লক্ষ্য করেছি। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের সবচেয়ে বড় যে উৎসব সেই উৎসবকে সামনে রেখে আতঙ্কে থাকবে, উদ্বিগ্ন থাকবে, এটা হতে পারে না। ভোট হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবার ভোটেরই মূল্য সমান। আপনারও ভোটার এদেশের নাগরিক আপনারা দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক এটা কারোরই মনে করা উচিত না। কারও ভোটের মূল্য বেশি; কারও ভোটের মূল্য কম নয়।

এ মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

অকাল বোধনের মাধ্যমে শনিবার দুর্গাপূজা শুরু হবে। ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ