স্টাফ রিপোর্টার- বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, যারা সরকারি দল করেন শুধু তারাই যেন বেহেশতে আছেন। দেশের মানুষ যেন দোজখের আগুনে জ্বলছে।
রাজধানীর উত্তরখান কলেজিয়েট স্কুল মাঠে থানা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ টাকার অভাবে ঠিকমতো বাজার করতে পারছে না। বিপরীতে অন্য একটি অংশ দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। তারা হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
তিনি বলেন, যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, সেখানে শুধু লুটপাটের জন্যই মেগা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা লুটপাট।
গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটগ্রহণ সম্পর্কে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, উপ-নির্বাচনই প্রমাণ করে- কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। সরকার ও সরকারি দলকে খুশি করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করে।
তিনি আরও বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যাপক জাল-জালিয়াতির জন্য আমরা নির্বাচন বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলাম। কমিশন নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেছে। সেজন্য আমরা কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা আবারও দাবি করছি, নতুন তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কোনো জালিয়াতির নির্বাচন আমরা মেনে নেবো না।
এসময় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে নাকাল দেশ। ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে দেশের রপ্তানি শিল্প।
তিনি বলেন, রিজার্ভ সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে কৃষকের সেচ ব্যবস্থাপনা। আবার সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও ব্যাহত হচ্ছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। একই সঙ্গে বহুগুণ ব্যয় বেড়েছে খাদ্যশস্য আমাদানিতেও। ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে পারে দেশ। এ নিয়ে সরকারের যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই।
জিএম কাদের বলেন, দৈনিক ৪ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং। এতে দেশের মানুষ অসহনীয় কষ্ট করছেন। দেশ দেউলিয়াত্বের দিকে যাচ্ছে। টাকার অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার। বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমেছে। অথচ টাকার অভাবে তাও কিনতে পারছে না তারা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিদ্যুৎব্যবস্থা সেপ্টেম্বরে থেকে স্বাভাবিক হবে। এখন তারা বলছেন, নভেম্বরে স্বাভাবিক হবে। আসলে কেউ জানে না কখন থেকে বিদ্যুৎব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে।’
দেশে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে, দেশে আর রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল থাকবে না। টবে সাজানো ফুলের বাগানের মতো কিছু দল থাকবে। যেমন- টবের ফুলে সৌরভ থাকে কিন্তু মাটির সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। ঠিক তেমনি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে না, এমন দুর্বল কিছু রাজনৈতিক দল থাকবে। তাই জবাবদিহিতাহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।