Search
Close this search box.

হুম্মাম ক্ষমা না চাইলে ‘গুডস হিল’ ঘেরাও

স্টাফ রিপোর্টার-একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের বাড়ি ‘গুডস হিল’ ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। যুদ্ধাপরাধীদের ‘শহিদ’ সম্বোধন করে সাকাপুত্র বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বক্তব্য এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের স্ত্রী-সন্তানদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের দাবিতে ২৯ অক্টোবর এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। তবে এর আগ পর্যন্ত হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে।

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের জেলা ও মহানগর শাখার পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলার সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেল। এসময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর নির্দেশে তার বাড়ি গুডস হিলকে টর্চার ক্যাম্প বানিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা, যাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ফকাপুত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ রাজাকার-আলবদররা। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ওই টর্চার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো বলে সাকা চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে উঠে এসেছে।

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী। বক্তব্যে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়ি ফিরতে পারবেন না। সকল শহিদদের কবরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে। তিনি নারায়ে তাকবীর স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন, যে স্লোগান বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবহার করে না।

এর প্রতিবাদে গত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ করে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাতদিনের সময় বেঁধে দেয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। অন্যথায় গুডস হিল ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠনটির নেতারা।

এরপর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কুখ্যাত যুদ্ধাপারাধী সাকা চৌধুরীকে ‘শহিদ’ উল্লেখ করে হুম্মাম চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছে এটা সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান। হুম্মামের অঙ্গভঙ্গি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এই আস্ফালনের জন্য হুম্মামকে ক্ষমা চাইতে সাতদিনের সময় দেওয়া হয়েছে। যদি এর মধ্যে সে ক্ষমা না চায় তাহলে ২৯ অক্টোবর সকাল ১১টায় বীর ‍মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘গুডস হিল’ ঘেরাও করা হবে।

দেশে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির নবউত্থান হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, আদালতের আদেশে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধর বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তবুও জামায়াতের কেউ ধানের শীষ প্রতীকে, কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এই বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন ও পরিবারের সদস্যদের অংশ নেওয়াটা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।

যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্পষ্ট বক্তব্য দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যরা স্বাধীন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা দেশবিরোধী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে, জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করছে। যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরাধিকার এবং জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করায় বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন ঘটছে না। একাধিক যুদ্ধাপরাধীর রায়ের পর্যবেক্ষণে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলা হয়েছে এবং নিষিদ্ধের আর্জিও আছে রাষ্ট্রপক্ষের তরফ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার কেন জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করছে না, সেটাই প্রশ্ন।

চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেকে রাজনীতি করছে- স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও গলার কাঁটার মতো এই ক্ষোভটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আটকে আছে মন্তব্য করে বলা হয়, কুখ্যাত রাজাকার, আলবদর কমান্ডার এদেশে মন্ত্রী হয়েছিল, সাঈদী, শাহ আজিজ, সাকা চৌধুরীর মতো যুদ্ধাপরাধীরা এদেশের পবিত্র সংসদকে কলঙ্কিত করেছিল।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে দ্রুত নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার একটি প্রস্তাব জাতীয় সংসদে তোলা হলে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এরপর প্রায় সাত বছর হয়ে গেলেও এ নিয়ে কোনো আইন প্রণয়ন হয়নি।

দণ্ডিত ও অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেই সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তর করে গেছে বলে তথ্য দিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর বিচার শুরুর আগেই ঢাকার বাড্ডায় তার প্রচুর সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের আগেই তার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছে। পাবনার যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের নায়েবে আমির মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মাওলানা আব্দুস সোবহান বিচারের আগেই তার সন্তানদের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করেছে। বিচার শুরুর আগে পিরোজপুরের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার গোপনে সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়। ফরিদপুরের কুখ্যাত রাজাকার পলাতক আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার তার সম্পত্তি বিক্রি করে দেশত্যাগ করে। কক্সবাজার-মহেশখালীর যুদ্ধাপরাধী মৌলভী জাকারিয়া তার সম্পত্তি গোপনে হস্তান্তার করে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে কোন কোন আসামি সম্পত্তি বিক্রি করেছে, সেটা সরকারকে খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এখন সময়ের দাবি। যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা সরকারের কাছে আছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে রাজাকার-আলবদরদের তালিকা হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, আইন প্রণয়ন করে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের পরিবারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করুন। তাদের স্ত্রী-সন্তানদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করুন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সরওয়ার আলম চৌধুরী মণি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, মহানগরের আহবায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু, যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান সজিব ও সাজ্জাদ হোসেন এবং সদস্য সচিব কাজী রাজিশ ইমরান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ