মিথুন আশরাফ – দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে আবারও হারল বাংলাদেশ। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে হারল বাংলাদেশ। ওপেনার রাইলি রুশোর সেঞ্চুরিতে (১০৯), ব্যাটিং তাণ্ডবে উড়ে গেল বাংলাদেশ। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে হার হলো সাকিববাহিনীর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় হারটিও হজম করে ফেলল বাংলাদেশ।
ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ২০৫ রান করে দক্ষিন আফ্রিকা। ৩০ বলে ৫০ রান করার পর ৫২ বলে সেঞ্চুরি হাকান রুশো। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন। বাংলাদেশের বারোটা বাজিয়ে দেন। কুইন্টন ডি ককের সাথে ১৬৩ রানের জুটিও গড়েন। ডি কক ৬৩ রানে আউট হলেও রুশো শেষ পর্যন্ত ধুম ধারাক্কা ব্যাটিং চালিয়ে যান। ৫৬ বলে ৭ চার ৮ ছক্কায় ১০৯ রান করে আউট হন। ততক্ষণ ১৯৭ রানে চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জয়ের ভিত আগেই গড়ে ফেলেন রুশো। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রুশোর তাণ্ডবে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মিলে গেল। রুশোর ব্যাটিং তাণ্ডবে এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরও করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। সাকিব আল হাসান ২ উইকেট শিকার করতে পারেন।
জবাব দিতে নেমে ১০১ রানেই গুটিযে যায় বাংলাদেশ। ১৬.৩ ওভারেই অলআউট হয়ে যায়। লিটন কুমার দাস (৩৪) ছাড়া আর কেউই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আসে সৌম্য সরকারের (১৫) ব্যাট থেকে। মেহেদি হাসান মিরাজ ১১ ও তাসকিন আহমেদ ১০ রান করেন। আর কোন ব্যাটসম্যান দুই অংকের ঘরেও পৌছাতে পারেননি। কি ব্যাটিং দুর্দশা হয়েছে। আনরিক নরকিয়া ৪টি ও তাবরেইজ শামসি ৩ উইকেট শিকার করে নেন। বড় হার দেখল বাংলাদেশ। এরআগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৫ রানের হারটিও বড় ছিল। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০০৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০২ রানের হারটি সবচেয়ে বড় হার ছিল। এবার সব হারকে ছাপিয়ে গেল বাংলাদেশ।
বোলিংয়ের পর ব্যাটিং দুর্দশায় এমন বাজে হার হয়েছে। একটি জুটি থেকেও ৩০ রানের মতো মিলল না। প্রথম উইকেটে সৌম্য ও শান্ত মিলে যে ২৬ রানের জুটি গড়েছেন, সেটিই ম্যাচে বাংলাদেশের বড় জুটি হয়ে থাকে। আসলে যখন দক্ষিণ আফ্রিকা বড় স্কোর গড়ে ফেলেছে, তখনই বাংলাদেশ যে হারতে চলেছে, তা নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে এত বড় ব্যবধানে হার হবে। রেকর্ড ব্যবধানে হারবে বাংলাদেশ? একটা সময়তো ১০০ রান করতে পারবে বাংলাদেশ, সেই শঙ্কায় জেগে যায়। ৮৯ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে বসে। সেখান থেকে তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান (৯*) মিলে দলকে শতরানে নিয়ে যান। তবে শেষপর্যন্ত ১০০ রান করার পর আর ১ রান যোগ করতেই ইনিংস গুটিয়ে যায়।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কখনোই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এবারও তাই হলো। এরআগে ৭ বার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে লড়াই করে বাংলাদেশ। প্রতিবারই হারে। এবার টানা অষ্টমবারের মতো হার হলো।
২০০৭ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে একবার, ২০০৮ সালে একবার, ২০১৫ সালে দুইবার, ২০১৭ সালে দুইবার ও গতবছর একবার হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারও হার হলো।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০০৭ সালে কেপটাউনে ৭ উইকেটে ও গতবছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবু ধাবিতে ৬ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও হার হয়েছে বাংলাদেশের।
এই ম্যাচটি খেলতে নামার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি ম্যাচও জিতেনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটিতে নিশ্চিত জেতার সুযোগ থাকা ম্যাচটি থেকে ১ পয়েন্ট পায়। বৃষ্টিতে খেলা পরিত্যক্ত হয়। সুপার টুয়েলভে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে রাখতে হলে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের কোন বিকল্প ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকা কাঙ্খিত জয়টি পেয়ে গেল।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নামার আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিতে বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে হারিয়ে ২ পয়েন্ট পেয়েছিল। আশা ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো জয় তুলে নিতে পারবে। এজন্য ম্যাচটিতে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান একজন ‘হিরো’র খোজেও ছিলেন।
সাকিব বলেছিলেন, ‘আমি এটা আশা করছি যে, আমাদের জন্য আরেকটা সুযোগ। আমাদের ১১ জনের যারা খেলবে তাদের মধ্যে একজনের হিরো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তো ওই হিরোটা কে হবে সেটাই দেখার।’ কেউ হিরো হতে পারলেন না। কেউ ম্যাচ জেতাতে পারলেন না। উল্টো বাজে খেলায় আবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারল বাংলাদেশ। রুশোর ব্যাটিং তান্ডবের পর আনরিক ও শামসির বোলিংয়ের সামনে অসহায় আত্মসমর্পন করল বাংলাদেশ।