Search
Close this search box.
যুদ্ধ থামান, মানুষকে বাঁচতে দিন

রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, টাকা গেছে পায়রা বন্দরে, মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে – প্রধানমন্ত্রী

রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, টাকা গেছে পায়রা বন্দরে, মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে - প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন অনেক বাধা অতিক্রম করে এবং নিজস্ব অর্থায়নে পায়রা সমুদ্রবন্দরের কাজ শুরু হয়। এসময় তিনি রিজার্ভের টাকা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, অনেকেই বলে, রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়। তাদের বলতে চাই, রিজার্ভের টাকা গেল পায়রা বন্দরে। রিজার্ভের টাকা গেছে মানুষের খাদ্য কেনায়, সার কেনায়, মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য। এটা কেউ চিবিয়ে খায়নি। এটা মানুষের কাজে লাগছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পায়রা বন্দরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন। এই সময় যুদ্ধ থামান, মানুষকে বাঁচতে দিন বলে আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য একটি ফান্ড করা হয়। এই ফান্ডের নাম বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড। সেখান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে টাকা দেওয়া হয়েছে পায়রা বন্দরের উন্নয়নে। সেই ফান্ডের টাকা দিয়েই কাজ শুরু করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড- এটা দিয়ে পায়রা বন্দরের কাজটা আমরা শুরু করলাম। ভবিষ্যতে আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে এই ফান্ড কাজে লাগাতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারা লাভবান হচ্ছে জানি না। হয়ত লাভবান হচ্ছেন যারা অস্ত্র ব্যবসা করেন বা অস্ত্র বানান। কিন্তু সাধারণ মানুষ, শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বব্যাপী মানুষগুলো কিন্তু কষ্ট পাচ্ছেন।

সেইসব ক্ষমতাধর দেশের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমার আবেদন থাকবে বিশ্ববাসীর কাছে যে এই যুদ্ধটা বন্ধ করতে হবে। স্যাংশন প্রত্যাহার করতে হবে। মানুষকে বাঁচার সুযোগ দিতে হবে, জীবন মান ধরে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা আমিৃ আমাদের উন্নত বিশ্বগুলো এই যুদ্ধংদেহী ভাব নিয়ে যারা পথে নেমেছেন, তাদের কাছে আমার এই আবেদনটা থাকল।

হঠাৎ করে সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে করোনা মহামারীর প্রভাব, এর উপর মরার উপর খরার ঘা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সেই সাথে স্যাংশন। যার ফলে আজকে সারাবিশ্বের সাধারণ মানুষগুলো ভুক্তভোগী। তারা কষ্টে আছে।

বিশ্বের এই ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশকে কতটা ভুগতে হচ্ছে সেই বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশে প্রত্যেকটা ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম, তবে বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি আপনারা দেখেছেন যে শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বের উন্নত দেশগুলো আজকে জ্বালানি সংকটে ভুগছে, বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে। আমরাও তার থেকে বাইরে না।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি এটা চাই যে মানুষগুলো বাঁচুক, সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ যেন হয়। এই অস্থিরতা বন্ধ হোক, যেন শান্তির সুবাতাস বয়ে যেতে পারে। মানুষের জীবনমান উন্নত হতে পারে, সেটাই আমরা চাই।

তিনি বলেন, এই বন্দরটাই এক সময় আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দরে আমরা ইনশাল্লাহ উন্নীত করতে পারব। ইতোমধ্যে মাতারবাড়ি, মহেশখালি, সেখানে আমাদের যে বন্দরটা সেটাও গভীর সমুদ্র বন্দরেই রূপান্তর হয়েছে। পাশপাশি পায়রা বন্দরটাকেও ভবিষ্যতে আমরা সেভাবে উন্নত করতে পারব। সেই বিশ্বাস আমার আছে।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ কাজ শুরু করতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আজকে সত্যিই খুব আনন্দিত যে এই নির্মাণ কাজটাৃ এটা কিন্তু সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অর্থে হচ্ছে। আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে তৈরি করা ফান্ড, সেই ফান্ডের টাকা দিয়েই আমরা এই কাজ আজকে শুরু করতে যাচ্ছি।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি যে এটা কিন্তু প্রতি বছরই ড্রেজিং করতে হবে। এজন্য পায়রা বন্দরের জন্য নিজস্ব ড্রেজার সংগ্রহ করতে হবে। প্রত্যেক বন্দরের জন্য আলাদা আলাদা নিজস্ব ড্রেজারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমাদের মোংলা বন্দরেও নিজস্ব ড্রেজার ছিল না। আমি মনে করি এই ড্রেজার রাখা দরকার, কারণ প্রতিবছর এই মেনটেইন্যান্স ড্রেজিংটা নিয়মিতভাবে আমাদের করে যেতে হবে।

দেশের নদীপথগুলো সচল করার পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই নদীটার ড্রেজিং হয়ে গেলে এই নৌ পথটাকে আমরা কিন্তু এখান থেকে একেবারে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত নিয়ে যাব। পাশপাশি এটা আসাম এবং ভুটান পর্যন্তও নৌপথ চালু হতে পারবে। “আমরা আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর এবং মোংলা বন্দর আমরা কিন্তু ভুটান, নেপাল এবং ভারতকে ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছি। পায়রা বন্দরটাও ভবিষ্যতে আরো গুরুত্ব বহন করবে, সেটা সকলকে মনে রাখতে হবে। ইতোমধ্যে রেল যোগাযোগ যাতে হয়, সেই সমীক্ষাও চলছে। ভবিষ্যতে আমাদের পরিকল্পনাই আছে যে একেবারে ঢাকার সাথে পায়রা বন্দর পর্যন্ত আমরা রেল সেতু চালু করব।

সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে সমন্বিত যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ শুধু সড়কেই না বরং সব পথেই করা যাচ্ছে। আমাদের বন্দরের কানেকটিভিটি সম্প্রসারণের সাথে এটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক করিডোরের সাথে আরো বেশি সংযুক্ত হবে এবং ভারত, ভুটান, নেপালসহ অন্যান্য দেশ এই বন্দর ব্যবহার করে উপকৃত হবে। ফলে এদেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় হবে। শুধু তাই না, বন্দরকেন্দ্রিক এই অঞ্চলে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, পায়রা বন্দর এলাকায় নৌ বাহিনীর ঘাঁটি তৈরি হয়েছে, সেনাবাহিনীর জন্য সেনা ছাউনি করা হয়েছে এবং বিমান বাহিনীর জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আজকে বন্দরের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং, আটটি জাহাজের উদ্বোধন, প্রথম টার্মিনাল, ছয় লেইন সংযোগ সড়ক এবং (আন্ধারমানিক নদীর উপর) সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বন্দরের অগ্রযাত্রায় মাইল ফলক স্থাপিত হল এবং দেশের, বিশেষত দক্ষিণ বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে অধ্যায় সূচিত হল, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহাল থাক, সেটাই আমি আশা করি। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরে এ অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল বক্তব্য দেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ