মিথুন আশরাফ – মিরাকলের আশা করা হচ্ছিল। সেই মিরাকল হলো। হল্যান্ডের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা হারল। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটল। কিন্তু যেই মিরাকলের আশা করে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ, তা আর হলো না। পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের। কিন্তু হেরে গেল। ৫ উইকেটে হার হলো। বাংলাদেশকে ১২৭ রানে আটকে রেখে ১২৮ রান করে জিতে সেমিফাইনালে উঠে গেল পাকিস্তান।
তাতে করে সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-২ থেকে ভারতের পর পাকিস্তান সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিল। এই গ্রুপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশের সাথে জিম্বাবুয়ে ও হল্যান্ডের বিদায় ঘন্টা বাজল। রবিবার ভোরে হল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা হারতেই ভারত সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেয়। সকালে শুরু হওয়া ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে সেমিফাইনাল স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। গ্রুপ থেকে পাঁচ নম্বর দল হয়ে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করল বাংলাদেশ।
এ্যাডিলেড ওভালে ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ খেলায় আশা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতবে বাংলাদেশ। সেই বিশ্বাস যে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিল, তা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামও বলেছেন। আবার যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে যাওয়ায় পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হবে, এমন পরিস্থিতি দাড়িয়ে গেছে। সেখানে ব্যাটিংটা আশানুরুপ হয়নি। বাংলাদেশ টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১২৭ রানের বেশি করতে পারেনি। ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত (৪৮ বলে ৫৪) এত সুন্দর ব্যাটিং করলেন। আফিফ হোসেন ধ্রুব (২৪*) ও সৌম্য সরকারও (২০) চেষ্টা করলেন। বাকিরা ব্যর্থ হলেন। যেখানে ৭৩ রানে গিয়ে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখন ১১তম (১০.৪ ওভার) ওভারে খেলা থাকে। সেখান থেকে শেষ ৯ ওভারে ৫৪ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। আবার আরও ৬ উইকেটও হারায়। হাতে উইকেট থাকতেও মাঝখানে শাদাব খানের (২/৩০) ও শাহিন শাহ আফ্রিদির (৪/২২) বোলিং তোপে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে।
যদিও শাদাব বল করতে এসেই টানা দুই বলে সৌম্য ও সাকিব আল হাসানকে আউট করেই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। কিন্তু সাকিবের এলবিডব্লিউ নিয়ে আছে বিস্তর আলোচনা। শাদাবের বলটিতে অনেকটা এগিয়ে এসে লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সাকিব। ১ বল খেলতে পারেন। কোন রান করতে পারেননি। পাকিস্তানের আবেদনে আম্পায়ার অনেক দেরিতে আঙুল তুলেন। রিভিউ নিতে দেরি করেননি সাকিব। ইঙ্গিতে শান্তকে দেখান, ব্যাটে লেগেছে বল। রিপ্লেতে ব্যাটে বলের হালকা স্পর্শের প্রমাণ মেলে। তখন অবশ্য ব্যাট মাটির খুব কাছেই ছিল। ব্যাট মাটিতে লেগেছে ধরে নিয়ে আউটের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন তৃতীয় আম্পায়ার! এমনকি সাকিব যে তিন মিটারের বেশি এগিয়ে এসেছে সেটাও বিবেচনায় নেননি তিনি! দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। শেষে ১২৭ রানের বেশি করা যায়নি।
পাকিস্তানকে এই রান তুলতে খুব কষ্ট করতে হয়নি। জিতলেই যেহেতু সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে। এমন ম্যাচে ১২৮ রান তুলতে খুব সাবধানে ব্যাটিং করতে থাকেন পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা। শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮.১ ওভারে ১২৮ রান করে জিতে পাকিস্তান। এরমধ্যে আবার ক্যাচ মিস তো আছেই। প্রথম ওভারেই তাসকিন আহমেদের ছোড়া বলে ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটের কানায় লেগে ওঠা সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। যেখানে ৬ রানে রিজওয়ান ও বাবর আজমের জুটি ভাঙ্গতে পারত। সেখানে উদ্বোধনী জুটি ৫৭ রান স্কোরে যোগ করে। রিজওয়ান ৩২ ও বাবর ২৫ রানে থামেন। ততক্ষনে ম্যাচ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণেই থাকে। মোহাম্মদ হারিস ৩১, শান মাসুদ অপরাজিত ২৪ রান করেন। ১১ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে পাকিস্তান।
ম্যাচটি জেতার পর পয়েন্ট তালিকায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান প্রথম স্থানে, সমান পয়েন্ট নিয়ে রানরেটে পিছিয়ে থেকে ভারত দ্বিতীয় স্থানে, এক পয়েন্ট কম নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা তৃতীয় স্থানে, দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট করে নিয়ে রানরেটে এগিয়ে থেকে হল্যান্ড চতুর্থ ও বাংলাদেশ পঞ্চম স্থানে এবং ৩ পয়েন্ট পেয়ে জিম্বাবুয়ে ষষ্ঠ স্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করে।
সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১ এ আগেই দুই দলের সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত হয়। ৭ পয়েন্ট পাওয়া নিউজিল্যান্ডের সাথে সমান পয়েন্ট পাওয়া ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেয়। ৭ পয়েন্ট পেয়েও রানরেটে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় স্থানে থেকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও এবারের টুর্নামেন্টের স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া বিদায় নেয়। অস্ট্রেলিয়ার সাথে ৪ পয়েন্ট পাওয়া শ্রীলঙ্কা, ৩ পয়েন্ট পাওয়া আয়ারল্যান্ড ও ২ পয়েন্ট পাওয়া আফগানিস্তান বিদায় নেয়।
এখন বুধবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম সেমিফাইনাল ও বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। সেমিফাইনালে যে দলগুলো জিতবে, সেই দুই দল আগামী রবিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শিরোপার জন্য লড়াই করবে। যারা জিতবে, অষ্টম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে তারা।