মিথুন আশরাফ – পাকিস্তানকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারালেই ইতিহাস গড়ত নিউজিল্যান্ড। প্রথমবারের মতো কোন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারাত নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এবারও দুর্দশাই হলো। এবারও হারই হলো নিয়তি। পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জয়ের স্বাদ আর পূরণ হলো না নিউজিল্যান্ডের। নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৩ বছর পর, তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে গেল পাকিস্তান। ২০০৭ ও ২০০৯ সালে সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল পাকিস্তান।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। ৪ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫২ রান করে। ডেরিল মিচেল সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৩ রান করেন। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন করেন ৪৬ রান। চতুর্থ উইকেটে উইলিয়ামসন ও মিচেল মিয়ে যে ৬৮ রানের জুটি গড়েন, তাতেই ১৫০ রানের উপরে করা সম্ভব হয়। তা না হলে শাহিন শাহ আফ্রিদি (২/২৪), হারিস রউফ, মোহাম্মদ নাওয়াজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে আরও কম রান হতে পারত। ৪৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে উইলিয়ামসন ও মিচেল মিলে দলকে এগিয়ে নেন। কিন্তু সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে, যেখানে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ শক্তিশালী, সেখানে এত কম রান করে কি জেতা সম্ভব? সম্ভব হয়ওনি।
পাকিস্তান ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯.১ ওভারে ১৫৩ রান করে জিতে যায়। দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম টুর্নামেন্টজুড়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। সেমিফাইনালে এসে খোলস থেকে বের হন। বাবরতো ৩৮ বলে ৫০ রান করে ফেলেন। ১২তম ওভারে গিয়েই ১০০ রান স্কোরে জমা হয়ে যায়। রিজওয়ান ও বাবর মিলে অনায়াসেই ম্যাচ জেতানোর পথে এগিয়ে যেতে থাকেন। মনে হয় এ দুই ওপেনারই ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন। যখন পাকিস্তানের রান হয় ১০৫, তখন গিয়ে বাবর (৪২ বলে ৫৩ রান) আউট হয়ে যান। এবার বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটে সর্বোচ্চ ১০৫ রানের জুটি গড়েন রিজওয়ান ও বাবর। বাবর আউটের পর রিজওয়ানও ৩৬ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন। দলের ১৩২ রানে গিয়ে ৫৭ রান করে রিজওয়ানও আউট হন। তবে জয়ের সুযোগ ভালোভাবেই তৈরী করে যান। শেষে মোহাম্মদ হারিসের (৩০) ব্যাটিং তান্ডবে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। শেষ ৬ বলে জিততে ২ রান লাগে। ৫ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় পাকিস্তান।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল বলে কথা। পাকিস্তানের সামনে পড়তেই কাঁপতে থাকে নিউজিল্যান্ড। হেরে যায়। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি যে বিশ্বকাপই হোক। এবারও তার বিপরিত ঘটল না। দুই দলের মধ্যকার এরআগে দুইবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে লড়াই হয়। একবার লড়াই হয় টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের সেমিফাইনালে। তিনবারই হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। ১৯৯২ ও ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ^কাপের সেমিফাইনালে যথাক্রমে ৪ ও ৯ উইকেটে হারে নিউজিল্যান্ড। আর ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের সেমিফাইনালেও হার হয় নিউজিল্যান্ডের। ৬ উইকেটে হার হয়। এবার কী হবে? সেই আলোচনাই এখন সব জায়গায়।
এরআগে টুর্নামেন্টের গত ৭ আসরে ছয়বার দেখা হয়েছিল এই দুই দলের। যেখানে চারবার জয়ের স্বাদ পেয়েছিল পাকিস্তান, দুইবার নিউজিল্যান্ড। এবার পাঁচবারের মতো জিতল পাকিস্তান। এবার জিতে বিশ্বকাপের ফাইনালেই উঠে গেল পাকিস্তান। প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করল পাকিস্তান।