মিথুন আশরাফ – টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে নেয়। ৫ উইকেটে হারিয়ে দেয় পাকিস্তানকে। এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে ইংল্যান্ড।
পাকিস্তানের কত আশা ছিল, ’৯২ সালের ওয়ানডে বিশ^কাপের পুনরাবৃত্তি এবার টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে ঘটাবে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সেবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। দুই দল এরআগে সেই একবারই কোন বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়াই করেছিল। কিন্তু এবার আর পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়।
ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। পাকিস্তান আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। ৮ উইকেটে ২০ ওভারে ১৩৭ রান করে পাকিস্তান। শান মাসুদ ৩৮, বাবর আজম ৩২ ও শাদাব খান ২০ রান করেন। স্যাম কারেন ৩ উইকেট শিকার করে নেন। জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯ ওভারে ১৩৮ রান করে জিতে ইংল্যান্ড। বেন স্টোকস অপরাজিত ৫২ রান করে ইংল্যান্ডকে জেতান। জস বাটলার ২৬, মঈন আলী ১৯ ও হ্যারি ব্রুক ২০ রান করেন।
২০০৯ সালে প্রথমবার পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল। আর ইংল্যান্ড ২০১০ সালে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। এবার যে দলই জিতত, দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা উচিয়ে ধরতে পারত। ইংল্যান্ড তা করতে পারল। পাকিস্তান দ্বিতীয়বারের মতো রানার্সআপ হলো। ’৯২ সালের পুনরাবৃত্তির আশাও তাদের পূরণ হলো না।
এরআগে দুই দল অবশ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইবার ফাইনাল খেলে। ইংল্যান্ড ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়। পাকিস্তান ২০০৭ সালের বিশ^কাপে রানার্সআপ হয়। এবার নিয়ে দুই দলই তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে খেলে। বাজিমাত করে ইংল্যান্ড।
এ ফাইনালে উঠতে পাকিস্তানকে অনেক কষ্ট করতে হয়। সুপার টুয়েলভ থেকেই বিদায় ঘটত। কিন্তু অঘটন ঘটে। নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে করে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সুপার টুয়েলভে গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে ফাইনালে ওঠে পাকিস্তান। সুপার টুয়েলভে প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ৪ উইকেটে হারের পর জিম্বাবুয়ের কাছেও ১ রানে হেরেই বিপদে পড়ে যায় পাকিস্তান। কিন্তু এরপরই ঘুরে দাড়ায় দলটি। নেদারল্যান্ডসকে ৬ উইকেটে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে বৃষ্টি আইনে ৩৩ রানে ও বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে পাকিস্তান। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে ৭ উইকেটে জিতে ফাইনালে খেলে পাকিস্তান। কিন্তু ইংল্যান্ডের কাছে ফাইনালে হেরে যায়।
ইংল্যান্ডের ফাইনালে খেলার পথও খুব সহজ হয়নি। ৭ পয়েন্ট নিয়ে রানরেটে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে থেকে গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে সেমিফাইনাল খেলে ইংল্যান্ড। সুপার টুয়েলভে আফগানিস্তানকে ৫ উইকেটে হারালেও আয়ারল্যান্ডের কাছে বৃষ্টি আইনে ৫ রানে হেরে যায় ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ রানে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেটে জিতে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড। এরপর সেমিফাইনালে ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে ইংলিশরা। ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে ইংল্যান্ড।
পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড, দুই দলেরই সুপার টুয়েলভ থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা ছিল। সেখান থেকে সেমিফাইনালে উঠে ফাইনালেও উঠে যায়। সেমিফাইনালে দুই দলই দাপট দেখিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করে। ফাইনালে এক দল জিতত, একদল হারত। ইংল্যান্ড জিতল, পাকিস্তান হারল।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার আগেই হুমকি দিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসী সুরে বলেছিলেন, আমাদের কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছে। যখন তারা পারফর্ম করে আমাদের হারানো কঠিন হয়ে যায়। আমরা খুবই বিপজ্জনক একটা দল। যাদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। বাটলারের হুংকারই কাজে দিল। চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল তার দল ইংল্যান্ড।