Search
Close this search box.

সেই কলঙ্ক তিলক

সেই কলঙ্ক তিলক

আবেদ খান

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর খন্দকার মোশতাক সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। মোশতাক তাঁর ক্ষমতাকে সংহত করতে বাংলাদেশবিরোধী ও পাকিস্তানপন্থি কিছু ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপদে বহাল করেন। ফলে এ সময় স্বাধীনতাবিরোধী চক্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে বেশ তৎপর হয়ে ওঠে।

সেনাবাহিনীকে মোশতাক বিশ্বাস করতেন না। তার আশঙ্কা ছিল সেনাবাহিনীর কাছ থেকে যে কোনো মুহূর্তে আঘাত আসতে পারে। আর যদি আঘাত আসে, তবে তার মসনদ খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে, সেই বিষয়ে তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহ। তাই তিনি তাড়াহুড়ো করে সামরিক বাহিনীতে পরিবর্তন আনেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দিকে নজর দেন। মোশতাক তখন খুনিদের হাতের পুতুল। মেজর রশিদ, ফারুক এবং তাদেরই সহযোগীদের হাবভাব ও চালচলন দেখে মনে হতো, দেশ এবং সেনাবাহিনী তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। মেজর ফারুক বঙ্গভবনের একটি কালো মার্সিডিজ গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়াত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় এবং অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে মোশতাক সেনাবাহিনীর কোনো সুপারিশ ছাড়াই মেজর ফারুক ও রশিদকে লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি দেন। ডালিমকেও সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে এনে লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি দেন। খন্দকার মোশতাক তাদের তার নিজের নিরাপত্তার জন্য বঙ্গভবনেই থাকতে উৎসাহিত করতেন। তারাও বঙ্গভবন ছেড়ে সেনা ছাউনিতে ফিরে যেতে নারাজ। বরং তারাই মোশতাকের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহর বদলে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধানের আসনে তুলে আনে। ব্যক্তিগতভাবে জেনারেল জিয়া সম্পর্কে খন্দকার মোশতাকের ধারণা ভালো ছিল না। তিনি মনে করতেন, জিয়া মতলববাজ, চতুর ও উচ্চাভিলাষী। এ ধরনের লোক যে কোনো মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের গদি ধরে টান দিতে পারে। আর তা যদি সে করেই বসে, তবে মোশতাকের প্রশাসন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। সঙ্গে সঙ্গে তিনিও ছিটকে পড়বেন প্রেসিডেন্টের গদি থেকে।

কিন্তু রশিদ ও ফারুকের এক কথা। তাদের মতে, জিয়া তাদের কাছের লোক এবং শ্রদ্ধাভাজন। জিয়া ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে গঠিত সিআইএ এবং আইএসআইর প্ল্যানিং সেলের অন্যতম সদস্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়া প্রথম থেকেই ফারুক-রশিদদের সাহস জুগিয়েছেন। জিয়া বলেছিলেন, তিনি সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসারদের সর্বোতভাবে সহযোগিতা করবেন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় সফল হলে তিনি তাদের রক্ষা করবেন। কাজেই সেনাবাহিনীর প্রধান হবেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, আর কেউ নয়। এটাই ফারুক-রশিদের সাফ কথা। খন্দকার মোশতাক বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের এই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন। আর পূর্বতন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁর চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয় রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগের জন্য। তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার এইচ এম এরশাদকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে উপসেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এই নিয়ে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এরশাদ কর্নেল থেকে দুটি পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হন, যা সেনাবাহিনীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। আরও একটি ক্ষেত্রে খন্দকার মোশতাককে মাথা নিচু করতে হয়। সেটা হলো বিমানবাহিনীর প্রধানের ব্যাপারে। বিমানবাহিনীর প্রধান ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার। খুনিদের ইচ্ছা, তাঁকেও সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কাকে আনবেন সেখানে?

এ ক্ষেত্রে কর্নেল রশিদ এগিয়ে দিল একটি নাম। গ্রুপ ক্যাপ্টেন তোয়াব। একসময় তোয়াব ছিলেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একজন অফিসার। গ্রুপ ক্যাপ্টেন তোয়াব স্বাধীনতাযুদ্ধের পুরো সময় জার্মানিতে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে এসে বিমানবাহিনীর প্রধান করা হয়। এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। অবসর গ্রহণের পর তোয়াব তাঁর জার্মান স্ত্রীকে নিয়ে মিউনিখে ছিলেন। তার সঙ্গে কর্নেল রশিদের বরাবরই একটা যোগাযোগ ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগেই তিনি রশিদের মতলবের কথা জানতেন। তাই বিমানবাহিনীর প্রধানের নাম খুঁজতে গিয়ে রশিদের মনে এসেছিল তোয়াবের নাম। বিমানবাহিনীর প্রধান হিসেবে তোয়াবের ব্যাপারে খন্দকার মোশতাক কোনো আপত্তি করেননি। এ ব্যাপারে তার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

 

সেই কলঙ্ক তিলক

 

খন্দকার মোশতাক ছিলেন পাকা উকিল। অত্যন্ত জটিল, কুটিল ও পাকা বুদ্ধির মানুষ। তিনি সবকিছু সহজভাবে মেনে নেওয়ার মতো মানুষ নন। জেনারেল জিয়া সেনাবাহিনীর প্রধান ও তোয়াব বিমানবাহিনীর প্রধান হওয়ার পর মোশতাক যথারীতি ওকালতি প্যাঁচ কষলেন। কারও সঙ্গে কোনো রকম পরামর্শ না করে তিনি ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’-এর পদ সৃষ্টি করলেন। আর এই আসনে বসালেন বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রধান মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে। মর্যাদার দিক দিয়ে এ পদটি সেনাবাহিনীর তিন প্রধানের পদেরও উপরে। মোশতাক সবার ওপর বসালেন বাংলাদেশের প্রথম প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল এমএজি ওসমানীকে। জেনারেল ওসমানী হলেন নতুন প্রেসিডেন্টের সামরিক উপদেষ্টা। মোশতাকের প্রত্যাশা ছিল, জেনারেল ওসমানীর সাহায্যে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবেন। কেননা তাকে সেনাবাহিনীর প্রায় সব অফিসারই মেনে চলেন।

সামরিক বাহিনীর ওপরের স্তর সাধ্যমতো সাজানো শেষে খন্দকার মোশতাক নজর দেন প্রশাসনের দিকে। প্রশাসনের সব গুরুত্বপূর্ণ অফিসার তার হুকুম মাফিক না চললে তা যে কোনো মুহূর্তে নতুন সরকারের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই মোশতাক প্রশাসনের ওপর তলায় তার আস্থাভাজন লোকদের এনে বসালেন। স্বরাষ্ট্র সচিব হলেন সালাহউদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব। স্বাধীনতার পর তিনি চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন বিদেশে। খন্দকার মোশতাক তাকে বিদেশ থেকে আনিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের পদটি উপহার দেন। এবিএস সফদার আগে ছিলেন পাকিস্তান গোয়েন্দা দপ্তরের একজন অফিসার। তাকে জাতীয় গোয়েন্দা (এনএসআই) দপ্তরের সেক্রেটারি জেনারেলের আসনে চড়িয়ে দেন। এ ছাড়া তোবারক হোসেন ছিলেন পাকিস্তান পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন বড় অফিসার। পারিবারিক সূত্রে পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তোবারক হোসেনের ছিল নিকটাত্মীয়তার সম্পর্ক। মোশতাক তার হাতে দেন পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব। অর্থাৎ তিনি হন পররাষ্ট্র সচিব।

এতকিছু সত্ত্বেও খন্দকার মোশতাক নিশ্চিত হতে পারেননি। তার আশঙ্কা চারদিকের এই সতর্ক বাঁধ শেষ পর্যন্ত যদি না টেকে? যদি কেউ নতুন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তার ক্ষমতা কেড়ে নেয়? তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা, খুনিরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তাদের কপালে যে অনিবার্য মৃত্যুদণ্ড! সেই পথে কাঁটা দেওয়ার জন্য মোশতাক ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর একটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। এর নাম ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স-১৯৭৫’ বা ১৯৭৫ সালের দায়মুক্তির অধ্যাদেশ। এই অধ্যাদেশের প্রথম অংশে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থি যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। এরপর নানা নাটকীয়তা ও মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হন। সে সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি আবু সা’দাত মোহাম্মদ সায়েম। ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক আইন প্রশাসক হন, আর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনে দেশে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রহসনের ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। সংশোধনীটি পাস হয় ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিল ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯’। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেওয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা দায়মুক্তি পেয়ে যায়।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরও বিচারপতি আবদুস সাত্তার, এইচ এম এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল বা রহিত করেননি। কেননা তারা সবাই ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার সুবিধাভোগী। ফলে তারা খুনিদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে তাদের চাকরি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। জিয়া, সাত্তার ও এরশাদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে খুনিরা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়িয়েছে, নানা রকম উসকানিমূলক এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল-সংক্রান্ত আইনগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আমিন উল্লাহর নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়, তাদের রিপোর্টেই প্রকাশ পায় এই কালো আইনটি বাতিলের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে এরপর তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল বাতিলের জন্য ‘দি ইনডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট-১৯৯৬’ নামে একটি বিল উত্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সংসদে পাস হয় বহুল সমালোচিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল। এরই মাধ্যমে জাতি ২১ বছরের কলঙ্কমুক্ত হয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়।

এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ নানা কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। অন্যদিকে, ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় প্রদান করেন। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অন্য বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। পরে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচারকাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন।

২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওই দিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতি দায়মুক্ত হয়।

লেখক : প্রধান সম্পাদক, দৈনিক কালবেলা

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ