কয়েক প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস জানতেই পারেনি ॥ খালেদা জিয়াকে আমরা উৎখাত করেছি, এরশাদকে উৎখাত করেছি, জিয়াকেও আমরা উৎখাত করতে পারতাম, কিন্তু আগেই মরে গেছে ॥ নির্বাচনে বিএনপির নমিনেশন হচ্ছে ‘ফেল কড়ি মাখো তেল’ অর্থাৎ যে টাকা দেবে সে প্রার্থী ॥ বিএনপি নির্বাচনে জিতবে কীভাবে? তারা এক আসনে তিন প্রার্থী দেয় ॥ আমার কাছে বিএনপির দুইজন নেতা অভিযোগ করে বলেছেন নির্বাচনে নমিনেশনের জন্য তারেক টাকা চেয়েছে, টাকা দিতে না পারলে বাদ, ওই ভাবে নির্বাচনে জেতা যায় না, যে দলের এই অবস্থা তারা গণতন্ত্র উদ্ধার করবে? ॥ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করতেন না, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ॥ ইতিহাস বিকৃত করেছিলেন ॥ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের স্বাধীনতার ভাষণ, জয় বাংলা স্লোগান জিয়াউর রহমান নিষিদ্ধ করেছিলেন ॥ হ্যাঁ, না ভোটের মাধ্যমে ভোট চুরির কালচার শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান ॥ ছাত্রলীগকে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার – ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঙ্গলবার হয় সম্মেলন। পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনমঞ্চে আসার পর জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত পরিবেশনের পর জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, কয়েক প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস জানতেই পারেনি।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ইতিহাস বিকৃত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের স্বাধীনতার ভাষণ, জয় বাংলা স্লোগান তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন।
সম্মেলনের বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চুরি করলে জনগণ জানে সেই সরকারকে কীভাবে উৎখাত করতে হয়। ভোট চুরির কালচার শুরু করেছে কে? প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটের মাধ্যমে ভোট চুরির কালচার শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে জিতবে কীভাবে? তারা এক আসনে তিন প্রার্থী দেয়। নির্বাচনে বিএনপির নমিনেশন হচ্ছে ‘ফেল কড়ি মাখো তেল’।
বাংলাদেশের অনেক ‘বুদ্ধিজীবী’ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে নেতা মেনে তাদের সঙ্গে জড়ো হয়ে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের অনেক জ্ঞানীগুণী বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তত্ত্ব কথা শুনায়, গণতন্ত্রের সবক দেয়, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়। আবার সেই আমাদের বুদ্ধিজীবী, এরা বুদ্ধিজীবী নিজেদের অনেকে বলে। আমি বলি বুদ্ধিজীবী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী। তারা আসলে বুদ্ধিজীবী না, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী। তারা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে নেতা মেনে তাদের সঙ্গে জড়ো হয় সরকার উৎখাতের জন্য।
তিনি আরও বলেন, হ্যাঁ, খালেদা জিয়াকে আমরা উৎখাত করেছি, এরশাদকে উৎখাত করেছি, জিয়াকেও আমরা উৎখাত করতে পারতাম। কিন্তু আগেই মরে গেছে। ওখানে একটি দুঃখ যে ওর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আগেই অক্কা পেলো। নিজের লোকদের হাতেই মারা গেল।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন যারা করেছে, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা কেন? আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে। আমি ৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল, স্বাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৩ থেকে ৪৫ ভাগ। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশন জট, অস্ত্রের ঝনঝনানি, অস্ত্র আর গোলাবারুদের গন্ধ। দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ রসাতলে, রিজার্ভ মাত্র ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ এ এসে রিজার্ভ পেলাম মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার। ৯৬ সালে খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল। ২০০১ সালে আমাদের ৫ বছর যখন সম্পন্ন হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি। এ ছাড়া আর কোনোদিন কি বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে? হয়নি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৪ জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও নির্যাতিতদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, বিজয়ের মাসে ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছে। ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মীকে বিজয়ের মাসের অভিনন্দন জানাচ্ছি। কারণ, এ দেশের প্রতিটি সংগ্রামেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। প্রতিটি আন্দোলনে শহীদের তালিকা যদি দেখি, সেখানে ছাত্রলীগের শহীদের তালিকাই বড়। ৭৫ এর পর জিয়াউর রহমান যখন অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে, তার প্রতিবাদকারী হাজারো সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীর অফিসারদেরকে জিয়াউর রহমান যেমন হত্যা করেছে, ঠিক একইভাবে ছাত্রলীগের নেতা সেই বাবুসহ অনেককে গুম করে নিয়ে গেছে। তাদের পরিবার লাশও পায়নি। এভাবে অত্যাচার নির্যাতন করেছে।
তিনি বলেন, আমার কাছে বিএনপির দুইজন নেতা অভিযোগ করে বলেছেন নির্বাচনে নমিনেশনের জন্য তারেক টাকা চেয়েছে। টাকা দিতে না পারলে বাদ। ওই ভাবে নির্বাচনে জেতা যায় না। যে দলের এই অবস্থা তারা গণতন্ত্র উদ্ধার করবে?
ছাত্রলীগকে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জবাব দেওয়া বেশি কিছু না। তারা যেটা লিখবে, সেখানে কমেন্টে গিয়ে তারা অতীতে কী করেছে, সেটা লিখে দিলেই হয়। এরপর আর তারা অপপ্রচার করবে না। এটা ছাত্রলীগ ভালোভাবেই করতে পারবে।
সরকারপ্রধান বলেন, দেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। আজ (মঙ্গলবার) সকালেও একটার উদ্বোধন করলাম। জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুর বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। যারাই বিনিয়োগ করতে চায়, তাদের জায়গা ও নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি।
এসময় গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটা শ্রেণি গুজব ছড়াচ্ছে। তারই ফলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা চোরের সঙ্গে সখ্য কি না জানি না। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। অতএব গুজবে কান দেবেন না।
এসময় খাদ্য ও বিদুৎ-জ্বালানি ব্যবহারে আরও সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ছাত্রদের লেখাপড়া করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যেকেই মেধাবী। পড়াশোনা করে বিসিএস পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষায় অংশ নেবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশ নিয়ে মেধার সাক্ষর রাখতে হবে। শুধু রাজনীতি নয়, পাশাপাশি সব কিছুতে নিজেদের অবস্থান রাখতে হবে।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি তারা এ দেশের উন্নয়ন কখনোই দেখবে না। মানুষ সামনের দিকে আগায়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পেছনে যায়, ভূতের মতো। তারা মনে হয় ভূতের রূপ নিয়েই আসে আমাদের দেশে।
ছাত্রলীগের কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সব সময় মানুষের পাশে থাকে, তাদের ধন্যবাদ জানাই। করোনায় যখন বাবা-মায়ের মৃত্যুতে ভাইবোন পর্যন্ত মরদেহ ফেলে চলে যেত বা আক্রান্ত হলে ছেড়ে চলে যেত-তখন তাদের পাশে ছিল ছাত্রলীগ। তাদের চিকিৎসা দেওয়া, খাদ্যের ব্যবস্থা করার কাজটি করেছে ছাত্রলীগের নেতারা। সিলেটের বন্যার দুঃসময়ে মানুষের পাশেও ছিল এ ছাত্রলীগ। ওই দুর্গম এলাকায়ও তারা ছুটে গেছে, মানুষের পাশে থেকেছে। কৃষকের ধান কাটায়ও অগ্রবর্তী ছিল ছাত্রলীগ। আমার নির্দেশ মতো সবার আগে তারা কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে। পরে কৃষক লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অনেকেই মাঠে নেমেছে। তবে ছাত্রলীগই আগে নেমেছে। সব সময় ছাত্রলীগ অগ্রসেনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না-এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। আমাদের অপবাদ দেওয়া হয়-ভোট চুরির। আমরা ভোট চুরি করতে যাবো কেন? জনগণ স্বতঃফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামি খালেদা-তারেকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যারা এখন গণতন্ত্রের কথা বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কথা বলেছিলেন। এখনো অনেকে আছেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সঙ্গে। মানি লন্ডারিং, অস্ত্র কারবারি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি তারেক। খালেদা জিয়া এতিমের টাকার আত্মসাতের মামলার আসামি। এ অপরাধীদের সঙ্গে এখন অনেক জ্ঞানী-গুণীও গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা বুদ্ধিজীবী নন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। তারা খালেদা-তারেকের সঙ্গে গিয়ে মিলেছেন।
বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার পেটুয়া বাহিনী সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। ঢাবিতে রাতের অন্ধকারে ভিসিকে সরিয়ে নতুন আরেকজনকে বসিয়ে দিয়ে ভিসির পদটাও দখল করে নেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকসহ বহু নেতাকর্মী হত্যা করে। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে সারাদেশ ছিল নির্যাতিত। শুধু ক্ষমতায় থাকলেই নয়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও অগ্নিসন্ত্রাসের কথা সবার জানা। ২০১৩-২০১৪ সালে প্রায় তিন হাজার মানুষকে দগ্ধ করে তারা। বাস-লঞ্চ-রেল কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল, আমি বই-খাতা-কলম দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক, সেই আন্দোলন আমরা করেছিলাম। সেই আন্দোলনের ফসল ছিল স্বৈরাচার এরশাদের পদত্যাগ হয়েছিল এই ৬ ডিসেম্বর। কাজেই গণতন্ত্র মুক্তি দিবস হিসেবে এই দিনকে আমরা পালন করতাম। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছিল। জাতির পিতাকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের দোসর, মোশতাক তাকে সেনাপ্রধান বানায়। একাধারে সেনাবাহিনী প্রধান, চিফ মার্শাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, আবার ক্ষমতা দখল করে রাতের অন্ধকারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেই তার অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। আমাদের নিরীহ ছাত্রদের হাতে সে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, মাদক তুলে দিয়েছে, তাদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছিল। সেশনজট শুরু হয়।
তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। ঠিক একই কায়দায় জেনারেল এরশাদও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আক্রমণ, নানা ধরনের ঘটনা ঘটায়। সেখানও আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার করে। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে যেমন অত্যাচার এবং ৯৬ এ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে, আবার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেও খালেদা জিয়ার পেটুয়া বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সবার মনে থাকা উচিত, ২০০১ সালে যখনই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অফিসে ছাত্রদলের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গিয়ে ভিসিকে চেয়ার থেকে সরিয়ে দিয়ে তাদের মনমতো একজনকে বসিয়ে দিলো। রাতের অন্ধকারে ভিসি পদটাও তারা দখল করে নিলো। ২০০২ সালে শামসুন্নাহার হলে গিয়ে মেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করে। একদিকে ছাত্রদল, আরেকদিকে পুলিশ বাহিনী দিয়ে অত্যাচার চালিয়েছিল এই খালেদা জিয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর তাহের ও ইউনূসকে হত্যা করে। তাদের অত্যাচারে সারা বাংলাদেশ ছিল অত্যাচারিত, নির্যাতিত।
যখনই তারা ক্ষমতায় আসে, আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। শুধু ক্ষমতায় থাকলেই না, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তাদের যে অগ্নি-সন্ত্রাস, সেটা তো সকলেরই জানা। ২০১৩ সালে আন্দোলনের নামে অগ্নি-সন্ত্রাস করে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে, ৫০০ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারে। সাড়ে ৩ হাজারের ওপর গাড়ি, বাস, লঞ্চ, রেল পুড়িয়ে দেয়, কোনো কিছুই ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এটাই তাদের চরিত্র, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। পুরনো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী যারা আছেন, তাদের নিশ্চই মনে আছে, খালেদা জিয়া হুমকি দিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে তার ছাত্রদলই নাকি যথেষ্ট। তারা ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রদের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। আমাদের শক্তি জনগণ। আমাদের পেটুয়া বাহিনী লাগে না।ছাত্ররা শিক্ষা গ্রহণ করবে। শিক্ষা গ্রহণ করে উপযুক্ত নাগরিক হবে, দেশের দায়িত্বভার ভবিষ্যতে নেবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি ছাত্রদের হাতে কাগজ-কলম তুলে দিয়ে বলেছিলাম, কেবল নিজেরা শিক্ষিত হবে না, যখন ছুটিতে বাড়িতে যাবে, কোনো নিরক্ষর মানুষ পেলে তাদের স্বাক্ষর-জ্ঞান দেবে। ছাত্রলীগ সেটাই করেছিল। নিজ নিজ গ্রামে তারা শিক্ষা ছড়িয়েছিল এবং তার রিপোর্টও আমাকে দিয়েছিল’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যাংকে টাকার কোনো সংকট নেই; পর্যাপ্ত টাকা আছে, গুজবে কান দেবেন না। আমাদের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে বলেই বাজেটের কলেবর বাড়ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বমন্দার ধাক্কা সামলাতে সবাইকে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে; সাশ্রয়ী হতে হবে সবাইকে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই জনগণের ভোট ছাড়া ভিন্ন কোনো পথে ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। করোনা মহামারিতে জনগণের পাশে থাকার জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সকালে একজনের নাম যায়, দুপুরে একজনের নাম যায়, বিকেলে আরেকজনের নাম যায়। এভাবেই তাদের ইলেকশন হয়। ফেলো কড়ি, মাখো তেল, অর্থাৎ যে টাকা দেবে সে প্রার্থী।
সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করে ছাত্রদের সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে অবৈধভাবে জন্ম হয়েছে বিএনপির। ক্যান্টনমেন্টে বসে গোয়েন্দাদের সহায়তায় এ বিএনপির জন্ম। কিছু রাজনীতি শিখেছে আমাদের সাথে যৌথ আন্দোলন করে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন যখন আমরা করি, তখন ওই আন্দোলনের মধ্যদিয়ে তারা কিছু শিখেছে। এটাই বাস্তবতা। তাছাড়া তাদের রাজনীতি আর কী ছিল!