মিথুন আশরাফ
শেষ! অপেক্ষার পালা শেষ! আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। আর মাত্র একটি ম্যাচ। এরপরই আরেকটি বিশ্বকাপের পর্দা নামবে। কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের পর্দা নামবে। ২২তম বিশ্বকাপের সমাপ্তি ঘটবে। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ও কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্সের মধ্যকার লড়াই হবে। শিরোপা জয়ের লড়াই। বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে। যে দলই জিতবে, শিরোপা তাদের হয়ে যাবে। তবে সবার মনে একটিই প্রশ্ন, মেসির হাতেই কি উঠবে বিশ^কাপ শিরোপা?
লিওনেল মেসি, হুলিয়ান আলবারেজ, ডি মারিয়া, নাহুয়েল মোলিনাদের আর্জেন্টিনা চাইবে শিরোপা জিততে। আর কিলিয়ান এমবাপ্পে, আন্তোনিও গ্রিজম্যান, অলিভিয়ের জিরু, উসমান ডেম্বেলেদের ফ্রান্স চাইবে শিরোপা ধরে রাখতে। যে দলই জিতুক, তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জয় হবে। সেই জয়টি আর্জেন্টিনারই হোক। এটিই সবার প্রত্যাশা। তাহলে যে মেসির হাতে অন্তত একবার বিশ্বকাপ শিরোপা শোভা পাবে। উসমান ডেম্বেলে কিন্তু বলেই দিয়েছেন, ‘মেসি বিশ্বকাপের দাবিদার।’ তাতেই বোঝা যাচ্ছে, ফ্রান্স ফুটবলাররাও চাচ্ছেন মেসি শিরোপা উচিয়ে ধরুক।
শিরোপা জয়ের ম্যাচটিতে আসলে লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পের মধ্যেও লড়াই হবে। তবে সবার নজর মেসির দিকেই থাকবে। মেসি চাইবেন প্রথমবার বিশ্বকাপের শিরোপা উচিয়ে ধরতে। শেষবার যে বিশ^কাপের মঞ্চে খেলতে নামবেন। আর এমবাপ্পে চাইবেন সবশেষ বিশ^কাপে যেভাবে শিরোপা ঘরে নিয়ে গেছেন, নিজের ঝুলিতে বিশ^কাপ জয় লিখেছেন, এবারও জিততে।
ম্যাচটিতে কে জিতবে? সেই প্রশ্নের উত্তর আসলে কারো কাছেই নেই। অনুমান করা যায়। গোলের খেলা ফুটবলে গোলটাই আসল হয়ে দাড়ায়। সাথে ফাইনালের মতো উত্তেজনাকর ম্যাচে স্নায়ুচাপ নিয়ন্ত্রণ করে স্থির থেকে গন্তব্যে পৌছানোও আসল কাজ হয়ে দাড়ায়। শেষপর্যন্ত তা যারা করতে পারবে, তারাই শিরোপা জিতবে। যদি আর্জেন্টিনা জিতে, তাহলে মেসির মাথায় প্রথমবারের মতো বিশ^চ্যাম্পিয়নের মুকুট উঠবে। স্বার্থক হবে যেন তার ফুটবল খেলা। তাতে করে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের খেতাবেও সর্বজন স্বীকৃত হয়ে যেতে পারেন। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালের পর আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে আর্জেন্টিনা। যদি ফ্রান্স জিতে, তাহলে তারাও তৃতীয়বারের মতো বিশ^চ্যাম্পিয়ন হবে। গত আসরেই ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরআগে ১৯৯৮ সালে আরেকবার শিরোপা জিতে ফ্রান্স।
আর্জেন্টিনাকে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে। ফ্রান্সের ফুটবলারদের গতির সামনে যে কুলিয়ে ওঠা কঠিন। তবে ম্যাচটি ফাইনাল ম্যাচ। আর মেসি যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি ছন্দে আছেন। নকআউট পর্বে প্রতি ম্যাচেই গোল পাচ্ছেন। আজও যদি পেয়ে যান, তাহলে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়নও হয়ে যেতে পারে। ফ্রান্সকে কাঁদিয়ে মেসিই আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়নও করাতে পারেন। এমবাপ্পে, গ্রিজম্যানরা যতই ভালো খেলুন না কেন, যতই গতি দেখান না কেন, এক মেসিই ফ্রান্সের ওপর ভারি হয়ে যেতে পারেন। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। ফাইনালে জিততে পারেননি। এবার নিজের শেষ বিশ্বকাপে কী বিশ্বকাপটাই নিজের করে নিতে পারেন না মেসি?
শুধু কী চ্যাম্পিয়ন হওয়াই মেসির ঝুলিতে থাকতে পারে? আরও সেরা কয়েকটি পুরস্কারও পেতে পারেন মেসি। শেষ বেলায় এসে সবকিছুই নিজের করে নিতে পারেন। গোল্ডেন বুট, গোল্ডেন বল মেসির ভাগ্যেই জুটতে পারে। এখন ৫ গোল দিয়ে এমবাপ্পের সমান গোল করেছেন মেসি। তবে গোল করিয়েছেন বেশি। তাতে যদি এমবাপ্পের সঙ্গে গোল সমান হয়, আর ৪ গোল করা আর্জেন্টিনারই আলবারেজ ও ফ্রান্সের জিরু যদি বেশি গোল করে না বসেন, তাহলে মেসিই জিতবেন গোল্ডেন বুট। আর সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবটি যে মেসিই পাচ্ছেন, তা বোঝাই যাচ্ছে।
বিশ্বকাপের গত আসরে ফ্রান্সের কাছে শেষ ষোলতে হেরে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা। ৪-৩ গোলে হারে। এবার খেলা ফাইনালে। ফ্রান্সের ফুটবলারদের গতির কথা উঠছে। গত আসরে দুই দলই চরম গতিময় খেলা দেখিয়েছে। আর তাই তো একম্যাচে ৭ গোল হয়েছে। শেষে হেরেছে আর্জেন্টিনা। বিশ^কাপের ইতিহাসে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স এরআগে তিনবার লড়াই করে। দুইবার কিন্তু আর্জেন্টিনাই জিতে। ১৯৩০ ও ১৯৭৮ সালে জিতে আর্জেন্টিনা। গত আসরে জিতে ফ্রান্স।
এবার ফ্রান্স ফুটবলাররা যেমন খেলা দেখাচ্ছে। আর্জেন্টিনা ফুটবলাররাও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে ফ্রান্সের যা নেই, আর্জেন্টিনায় তা আছে। একজন মেসি আছেন। যিনি নিজের শেষ বিশ^কাপর ম্যাচে বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনাকে জিতিয়ে দিতে পারেন। আর তা হলে শিরোপা মেসির আর্জেন্টিনারই হয়ে যাবে। পঞ্চম বিশ^কাপে এসে মেসির হাতেই কি উঠবে বিশ^কাপ শিরোপা?