স্টাফ রিপোর্টার- দেশকে যদি আমরা ভালবাসতাম তাহলে আজকে মাঠ দখল হতো না, ফুটপাত দখল হতো না, খালের জায়গা দখল হতো না। আমরা মুখে বলি আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, সাথে সাথে আবার জায়গাও দখল করি। যারা মাঠ, ফুটপাত ও খালের পারে অবৈধভাবে দখল করেছে তাদের বলতে চাই নিজেরা অবৈধ দখল সরিয়ে নিন। নইলে বুলডোজার যখন যাবে তখন কিন্তু আর সীমানা মাপা হবে না যে কতখানি দখল করেছেন কতখানি বৈধ জায়গা। আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ দখল উদ্ধার করা হবে।’
সোমবার দুপুরে গুলশানে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, মহান স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ’ এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে গুলশান সেন্ট্রাল পার্কের নামকরণ করা হয়েছে “শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক”।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ এর নামে পার্কটি নামকরণ করতে পেরে ডিএনসিসি কৃতার্থ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস, জাতীয় চার নেতার ইতিহাস সবাইকে জানতে হবে। শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ এর স্মৃতি রক্ষার্থে এই পার্ক ভূমিকা রাখবে।’
এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা ২৪টি পার্ক ও মাঠ নির্মাণ করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। মাঠ ও পার্কগুলো উন্মুক্ত করার পরে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সাথে একটি চুক্তি করে দায়িত্ব দেয়া হবে।
সারফেস ড্রেন ও খাল দূষণের কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘গুলশান, বারিধারা, বনানী, নিকেতন এসব লেকগুলোতে আমরা মাছ ছাড়তে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে পানির দূষণের কারণে আমরা মাছ ছাড়তে পারিনি। জীব ও বৈচিত্র আনতে পারিনি। কারণ অভিজাত এলাকায় অভিজত শ্রেণীর মানুষরাই তাদের বাড়ির পয়:বর্জ্যের লাইন সরাসরি যুক্ত করে দিয়েছেন লেকে। এসব এলাকায় যাদের অবৈধভাবে লাইন দিয়ে রেখেছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে অভিযান শুরু করব। আমরা তালিকা তৈরি করেছি এখানে কেউ ছাড় পাবেন না।’
হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানে সিটি করপোরেশন অফিসে যেতে নিষেধ করে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা কেউ হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে সিটি কর্পোরেশন অফিসে যাবেন না। কারন সব খানের মতো সিটি কর্পোরেশনেও কিছু অসৎ ব্যক্তি আছে, তারা তখন সাধারণ জনগণকে দেখিয়ে দেয় আকাশের যত তারা সিটি কর্পোরেশনের তত ধারা। ট্যাক্স পরিশোধ করাটাই কঠিন হিসেবে তারা মানুষকে দেখায়। এর ফলে তারা অবৈধ সুবিধা নেয়। সে কারণে সেই ভোগান্তির মধ্যে না গিয়ে আপনারা অনলাইনে সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স পরিশোধ করবেন। তাহলে কোন ভোগান্তি হবে না এবং অসাধু যারা আছে তারাও কোন ফায়দা নিতে পারবে না। অনলাইনেই সবকিছু সুন্দরভাবে দেওয়া আছে বিস্তারিত সেখান থেকেই আপনি আপনার সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স প্রদান করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্সও আমরা অনলাইনের মাধ্যমে দিতে শুরু করেছি। কত ভোগান্তি একটা ট্রেড লাইসেন্স আনতে গেলে। নাগরিক সেবা দেওয়ার উদ্যোগ থেকে এই ভোগান্তি আমরা চাই না। ভোগান্তিহীনভাবে যেন নাগরিকরা সব ধরনের কাজ করতে পারেন সেই ব্যবস্থার লক্ষ্যেই আমরা অনলাইনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। পাশাপাশি যারা নিজ বাড়িতে রেইন হার্ভেস্টিং করবে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্সব প্রদানে ১০ শতাংশ ছাড় দিবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া যারা সঠিক নিয়ম মেনে ছাদ বাগান করবেন অর্থাৎ যাদের ছাদ বাগানে মশা জন্মবে না সঠিকভাবে পরিচর্যা করবেন এবং কার্যকর ছাদবাগান নির্মাণ করবেন তাদের জন্য ছাড় দিবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
নগরবাসীকে সবার ঢাকা অ্যাপে নগরের সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে আহবান করে মেয়র বলেন, ‘আপনারা শহরের যেখানে যেকোন সমস্যা দেখবেন, আপনারা শুধু ছবি তুলে সবার ঢাকায় অ্যাপে জানিয়ে দিবেন সমস্যার কথা। আমরা তাৎক্ষণিক সেটার ব্যবস্থা নেব, নাগরিক সুবিধার্থেই সবার ঢাকা অ্যাপ নিয়ে এসেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি, সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, স্থানীয় কাউন্সিলর মফিজুর রহমান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান প্রমুখ।