Search
Close this search box.

একটা শ্রেণি চোখ থাকতেও উন্নয়ন দেখে না – প্রধানমন্ত্রী

একটা শ্রেণি চোখ থাকতেও উন্নয়ন দেখে না - প্রধানমন্ত্রী

বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ ॥ প্রযুক্তি জ্ঞানে স্মার্ট হবে আমাদের পুরো জনগোষ্ঠী ॥ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশের যোগ্য করে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে ॥

 

মিথুন আশরাফ

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা শ্রেণি চোখ থাকতেও উন্নয়ন দেখে না। এত কাজ করার পরেও কিছু লোকের মন ভরে না। দৃষ্টি থাকতেও তারা অন্ধ। তারা দেখবেই না। শনিবার ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এমন কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। প্রযুক্তি জ্ঞানে স্মার্ট হবে আমাদের পুরো জনগোষ্ঠী। পারবে না আমাদের ছেলে-মেয়েরা? এ প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলে, পারব। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশের যোগ্য করে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। রবিবার সারাদেশে ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ উদযাপিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে পাঠ্যবই উৎসব উদযাপন করবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এত কাজ করার পরেও কিছু লোকের মন ভরে না। তাতেও বলবে আমরা নাকি কিছুই করি নাই। তাদের মাথার ভেতরে নাই শব্দটা ঢুকে গেছে। আমরা নাই-তে থাকতে চাই না। আমরা পারি, বাংলাদেশের মানুষ পারে। আমরা সেটাই প্রমাণ করতে চাই। নাই নাই শুনবো না। আমরা করতে পারবো, এটা করতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা পুনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। যত আন্তরিকতার সঙ্গে আজকে আমরা ছেলে-মেয়েদের তৈরি করতে পারবো, আমাদের বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতেও শিক্ষার্থীদের জন্য বই ছাপানোর কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এই করোনা, নানা ঝামেলা, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ – এখন তো সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সারা বিশ্বব্যাপী কষ্ট, তার মধ্যেও কিন্তু আমরা শিশুদের কথা ভুলিনি। তাদের বই ছাপানোর খরচাটা- অন্য দিক থেকে আমরা সাশ্রয় করছি, বই ছাপানোর দিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। পাশাপাশি কম্পিউটার শিক্ষা অর্থাৎ প্রযুক্তি শিক্ষা। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা কেন পিছিয়ে পড়ে থাকবে।

করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় থেকে এ পর্যন্ত আমার ঘরে আমার স্কুল, অর্থাৎ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, কাজেই ঘরে বসে পড়াশোনা। কেউ যাতে পড়াশোনায় ফাঁকি দিতে না পারে সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। সংসদ টিভির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। আবার বিটিভির মাধ্যমেও চালানো হয়েছে। আমি মনে করি, সংসদ টিভি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব সময় ব্যবহার করতে পারে। এসময় শিক্ষার জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল চালুর পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া কেউ শিক্ষার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা যে এ দেশের মানুষকে নিরক্ষরমুক্ত করবে, তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক। ৯৬ সালে আমরা আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করি। তখন আমরা উদ্যোগ নিই, আমরা আবার নতুন করে শিক্ষা কমিশন গঠন করি। স্বাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করি। বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থাও সেখানে সংযুক্ত ছিল।

তিনি বলেন, জনগণকে যদি দারিদ্র্যমুক্ত করতে হয়, তাহলে শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কাজেই সমগ্র জাতিকে আমরা শিক্ষিত করে গড়ে তুলবো – সেই পদক্ষেপ নিই। আমরা নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন করি। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কারণ, আমাদের ৫ বছরের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তারা নতুন আরেকটা করে…কী কী করে জানি না। তারা দেশকে আবার অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দেয়। এটা হলো বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আরেকটা অন্ধকার যুগ আমাদের জীবনে চলে আসে। ২০০৮-এর নির্বাচনে নৌকা মার্কায় মানুষ ভোট দেয়, আমরা আবার সরকার গঠন করি। তখন থেকে আমাদের আবার লক্ষ্য হয়, কীভাবে আমরা এ দেশের মানুষকে নিরক্ষরমুক্ত করবো এবং ২০১০ সাল থেকে আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করি।

এবার ১ জানুয়ারি সারা দেশে ৪ কোটি ০৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থীদের ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ১২ হাজার ৩০০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থীকে ৯ কোটি ৬৬ লাখ ০৮ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হবে। এ নিয়ে ২০১০ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বমোট বিনামূল্যে বিতরণ করা পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১১ কপি।

প্রায় ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থী এখন স্কুলে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, অভিভাবকের মধ্যে সচেতনতা এসেছে যে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাবো। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা হচ্ছে জাতিকে দারিদ্র্যমুক্ত করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। অতীতের কোনো সরকার শিক্ষার জন্য তেমন কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলা গড়ার জন্য শিক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রধান শিক্ষকের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় নিয়ে গেছি। সহকারী শিক্ষকের বেতন একধাপ ওপরে নিয়ে এসেছি। আগে বাচ্চাদের হাতে পুরানো বই দেয়া হত। আমরা এখন নতুন বই দিচ্ছি। আমাদের বাচ্চারা নতুন বই পেয়েছে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও করে দিয়েছি। আমরা জাহাজ বানাব, যুদ্ধ জাহাজ এবং প্লেনও বানাব। এগুলো তো আমাদের ছেলে-মেয়েদেরই করতে হবে। এজন্য তাদের সব ধরনের শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠ্যবই বিতরণের জন্য তিনি খুবই খুশি।

সরকার প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী ও এসএসসি স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ মান বজায় রেখে এসব পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করেছে এবং নতুন বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক পাবেন। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসব কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এবং মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসব গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। জানুয়ারির প্রথম দিনে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের মাধ্যমে বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ