Search
Close this search box.
৭ বছরপর পিবিআইয়ের তদন্তে খুলল রহস্যের জট

মনের আক্রোশ মেটাতে মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন বাবা!

স্টাফ রিপোর্টার- ২০১৫ সালে নিজ হাতে মেয়ে পারুলকে খুন করে তার স্বামীর ও আত্বীয় স্বজনের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল জেলার আদালতে অপহরণ মামলা করেন কুদ্দুস খাঁ। বিগত ২০১৫ সালে থানা পুলিশ মামলাটির রহস্য জট খুলতে না পারায় আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কথা গুলো বলছিলেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার।

রাজধানীর ধানমন্ডি পিবিআই হেডকোর্য়াটারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তুলে ধরেন লোহমর্শ ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনী।

তিনি বলেন, মামলার বাদী নিহত পারুল আক্তারের বাবা কুদ্দুস খাঁ ঔ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত জেলা ডিবি পুলিশকে মামলাটির তদন্তের নির্দেশ দেন। ডিবি পুলিশ ও ঠিক একই ধরনের প্রতিবদেন আদালতে জমা দেয়। বাদী আগের মতই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি প্রদান করেন। পরবর্তীতে মামলা তদন্তের ভার যায় পিবিআইয়ের হাতে। জেলা পিবিআই তদন্ত করেও সেই একই প্রতিবেদন জমা দেয়। পরবর্তীতে সিআইডিও তদন্ত করে মামলার কোন কূলকিনারা করতে না পারলে, বিজ্ঞ আদালত জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ দেন। জুডিশিয়াল তদন্তে কোন আশানুরুপ ফল পাননি কুদ্দুস খাঁ।

এদিকে নিহত পারুলের স্বামী ১৯ শে জুলাই ২০১৫ সালে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়ে পালিয়ে বাবার বাড়ি চলে যাওয়া ও আঃ কুদ্দুছ খাঁর বিরুদ্ধে মেয়েকে বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় জিডি করেন।

তিনি আরও বলেন, জুডিশিয়াল তদন্ত প্রতিবেদনে একটি সুপারিশে লেখা ছিল যেহেতেু ঘটনার স্থান ঢাকায় সেহেতু ঢাকার আদালতে মামলা করেলে বাদী উপকার পেতে পারেন। সেই সুপারিশ অনুযায়ী বাদী গত নভেম্বরে যৌতুক, ধর্ষন, হত্যা করে তার মেয়েকে গুম করে ফেলা হয়েছে মর্মে নিহত পারুলের স্বামী ও অপর তিন আত্বীয়েরে বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহন করে পিবিআইকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন।

পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে দুটি ফোন নাম্বারের সূত্র ধরে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের চেষ্টা করে। কিন্ত মামলার বাদী কুদ্দুস খাঁ বারবারই বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে পিবিআইয়ের তদন্ত দলকে হেনস্থা করেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা সকল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে বাদী কুদ্দুস খাঁ কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এক পর্যায়ে সে হত্যাকান্ডের বিষয়টি স্বীকার করে এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন।

অতিরিক্ত আইজিপি জানান, ঘটনার শুরু ২০১২ সালে। তখন আঃ কুদ্দুছ খাঁর মেয়ে মোছাঃ পারুল আক্তার টাঙ্গাইলের কালিহাতির একই এলাকার মোঃ নাছির উদ্দিন ওরফে বাবুকে (১৯) ভালোবেসে ঢাকায় পালিয়ে এসে বিয়ে করেন। এই ঘটনায় কুদ্দুছ খাঁ ২০১২ সালে কালিহাতি থানায় অপহরনের জিডি করেছিলেন। উভয়ের পরিবার বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তারা ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় বসবাস শুরু করেন। চাকরি নেন পোশাক কারখানায়। নানা কারনেই তাদের পারিবারিক অশান্তি চলতে থাকে। একদিন পারুল তার বাবাকে ফোন করে পারিবারিক অশান্তির কথা জানায়। বাবা মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল। অপমানবোধ ও প্রচণ্ড রাগও ছিল। একপর্যায়ে ভালো ছেলে দেখে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে উন্নত জীবন যাপনের লোভ দেখায় পারুলকে।

পারিবারিক কলহের জেরে ২০১৫ সালে ১৮ জুলাই নাছির তার নানিকে দেখতে গ্রামে চলে যায়। সেই সুযোগে বাবার দেওয়া আশ্বাসে পারুল ১৯ জুলাই তার বাবাকে ফোন করে টাঙ্গাইলে যান। একই দিন পারুল আক্তারের স্বামী মোঃ নাছির আঃ কুদ্দুছ খাঁর বিরুদ্ধে মেয়েকে বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় জিডি করেন।

তিনি আরও জানান, ঔইদিন বাবা তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে না নিয়ে বাল্যবন্ধু মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা মণ্ডলের বাড়ি টাঙ্গালের ভূঞাপুরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মোকাদ্দেছ ভবিষ্যতে পারুলকে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং কিছুদিন নাছিরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে এই আশ্বাস দিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় একটি নদীর পাশে নির্জন জায়গায় রাতের অন্ধকারে ভিকটিমকে তার বাবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মোকাদ্দেছের সহযোগিতায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ১৬৪ এর বর্ণনা অনুসারে তারা তিনজন রাতের অন্ধকারে নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে থাকেন। মেয়ের ইতিপূর্বের কার্যকলাপের অপমানবোধ ও রাগ থেকে মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর মেয়ের ওড়না দুই টুকরো করে বাবা মেয়ের হাত এবং মোকাদ্দেছ পা বাঁধে। বাবার নিজের গামছা দিয়ে মেয়ের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারা ভিকটিমের লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে টাঙ্গাইলে চলে আসে এবং গত ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট নাছিরের পরিবারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন।

অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, নিজের মেয়েকে খুন করে কৃদ্দুস খাঁ বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। বরং অপমানবোধ, ক্রোধ থেকে মেয়ের জামাই নাসির উদ্দিন বাবুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যে আইনের পিছনে ছুটেছেন। মূলত তিনি মনের আক্রোশ মিটাতেই নিজেই নিজের মেয়েকে হত্যা করেন।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ