Search
Close this search box.

অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত নতুন জঙ্গি সংগঠন

রাকিব হাসান- নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‘র ৩৮ জন সদস্যকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে দূর্গম পাহাড়ে জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষনের ভিডিও উদ্ধার করেছে র‌্যাব। উদ্ধারকৃত ওই ভিডিওতে দেখা গেছে আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে তারা পাহাড়ের অরন্যে গড়ে তুলেছে সামরিক ঘাটি। সেখানে তারা তিন থেকে চারটি ক্যাম্প স্থাপন করে নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষিত করে তুলছে।

র‌্যাবের ভাষ্যমতে, এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম এবং অপর আরেক নেতা মিডিয়া শাখা প্রধান কথিত লেঃ কর্নেল লালজং মুই ওরফে মাওয়াইয়া এবং কথিত লেঃ কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল ওরফে চির চির ময় এর সরাসরি তত্বাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে এবং বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময়ে তাদের এসব অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করেছেন নাথান বম। অস্ত্র গুলোর তালিকায় রয়েছে এসএমজি, এলএমজি, একে-৪৭ সহ ২২ বোরের পিস্তল।

এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঠিক কি পরিমান অস্ত্র তাদের কাছে রয়েছে এ সম্পর্কে বলা সম্ভব নয়। তবে সকল অস্ত্রই তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর প্রধান নাথান বম এর মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন।

তিনি জানান,কক্সবাজার থেকে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি মাসুকুর রহমানের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। সেই মুঠোফোনেই পার্বত্য অঞ্চলে সংগঠনটির সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে যেসব দৃশ্য দেখা গেছে, তা ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

উদ্ধার হওয়া ভিডিওতে জঙ্গিদের কয়েকটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প দেখানো হয়েছে। এসব ক্যাম্প বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলে। এই ভিডিওতে ‘অভিনয়’ করেছেন সংগঠনটির সদস্যরা, যাঁরা স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। ভিডিওর শুরুতেই জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদকে দেখা গেছে। ঠিক তাঁর পেছনেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এক প্রশিক্ষককে দেখা গেছে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, প্রশিক্ষনরত সকলেই সামরিক পোশাকের আদলে একটি পোশাক পরিহিত। সেখানে তারা কিভাবে আপদকালীন সময়ে খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ ও তৈরি করতে হয় সেই প্রশিক্ষন নিচ্ছেন। সামরিক আদলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দলগত গমন, কিভাবে দলের নেতৃত্ব দিতে হয়, যুদ্ধকালীন সময় অথবা কোন অভিযানে কিভাবে দলকে পরিচালিত করতে হয়, কিভাবে থামতে হবে, কিভাবে অস্ত্র বহন করতে হয়, কিভাবে অস্ত্র ধরতে হয় সে সব সম্পর্কে তারা প্রশিক্ষন নিয়েছেন। এছাড়া কীভাবে রাতের আঁধারে পথ চলতে হবে ইত্যাদি প্রশিক্ষণ ভিডিওতে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

সেখানে  ডা. আহেমেদ ও জর্দান নামে দুটি প্রশিক্ষন ক্যাম্প রয়েছে। এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে পর্যন্ত রয়েছে সুরক্ষিত বাংকার।

ভিডিওর শুরুতেই জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদকে দেখা গেছে। ঠিক তাঁর পেছনেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এক প্রশিক্ষককে দেখা গেছে।

ভিডিওতে যেসকল সদস্যদের উপস্থিতি ছিল তার মধ্যে বাশার মৃধা অন্যতম। গত সোমবার বাশার কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে র‌্যাবের অভিযানে ধরা পরে। বাশার ওই সদস্যদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষন দিতেন। তাদের অপর একজন শিব্বির ওরফে কারসে। র‌্যাবের ধারনামতে সে প্রথম ধাপে প্রশিক্ষন সম্পন্ন করে । বর্তমানে সে জর্দান ক্যাম্পে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। র‌্যাবের ধারাবাহিক অভিযান শুরু হলে তারা পাহাড় থেকে পালিয়ে অন্যত্র আত্মগোপন করে। এছাড়াও আরও একজনকে সনাক্ত করা গেছে, তার নাম দিদার ওরফে চম্পাই। তারা দুজনেই সামরিক শাখার দায়িত্বে ছিলেন।

ভিডিওটিতে শিব্বির ওরফে কারছে উর্দু ভাষায় একটি সংগীতও গেয়ে শুনিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে-

“মাথায় কাফন বাধো” জঙ্গির মিশন দুনিয়াতে প্রচার করো, প্রতিটি নগর এবং মহল্লায় জঙ্গিবাদের বার্তা ছড়িয়ে দাও”

এর আগে কুমিল্লা থেকে যে আটজন স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়েছিল তাদের মধ্যে আল আমিন একজন। ভিডিওতে তাকেও প্রশিক্ষন গ্রহন করতে দেখা গেছে। প্রশিক্ষণরত অবস্থায় আলআমিন মৃত্যুবরণ করলেও তার লাশ উদ্ধার করতে পারেনি র‌্যাব। অভিযানের আগেই তার কবর থেকে লাশ কেউ তুলে নিয়ে গেছে কিনা সে সম্পর্কেও অবগত নয় র‌্যাব।

ইতিপূর্বে ড্রামভর্তি অবস্থায় বিপুল অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরন্জাম উদ্ধার করে র‌্যাব ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ধারণা করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের ফলে জঙ্গিরা তাদের অস্ত্র নিরাপদে রাখতে ড্রামে ভিতর লুকিয়ে সেগুলো মাটিচাপা দিয়ে সমতলে পালিয়ে যায়।

ঠিক কি উদ্যেশ্য নিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‘র উত্থান সে সম্পর্কেও কোন তথ্য নেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। তবে ধারাবাহিক অভিযানের ফলে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম দূর্বল হয়ে পড়েছে বলে দাবী আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গুলোর।

হোলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির পর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিরা দুর্বল হলেও, সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে নতুন এই জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ