স্টাফ রিপোর্টার- দেশের অন্যতম রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও ঘটেছে চুরির ঘটনা। তবে এবার আর কেন্দ্রের বাইরে নয়, বরং চুরি হয়েছে কেন্দ্রের ভেতরেই। এতদিন বাইরের তামার তার ও মূল্যবান ধাতববস্তু চুরি হলেও, এবার তালাবদ্ধ ল্যাব থেকে চুরি হয়েছে কয়লা পরীক্ষার মেশিন। মেশিনটির দাম ৪৭ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সূত্র বলছে, গত ১৫ মাসে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৬)-এর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের ২০ জনকে আটক ও অর্ধকোটি টাকার মালামাল উদ্ধার করেছে।
অন্যদিকে গত ৯ মাসে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে দায়িত্বরত আনসার ব্যাটালিয়ন খুলনার সদস্যরা ৩৩ চোরকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় অন্তত ৫৩ লাখ টাকার চোরাই মালামাল উদ্ধার করা হয়।
এদিকে কয়লা পরীক্ষার মেশিন চুরি হওয়ায় গত ১৬ জানুয়ারি রামপাল থানায় একটি মামলা করেছে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি ও প্রশাসন) মো. অলিউল্লাহ।
মামলা থেকে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, কেমিস্ট আব্দুল মালেক ল্যাব বন্ধ করার সময় টেস্টিং যন্ত্রটি টেবিলের ওপরেই ছিল। আব্দুল মালেক চলে যাওয়ার আগে তালার চাবি ল্যাব-১-এর মুসা পারভেজকে দিয়ে ল্যাব টেকনিশিয়ান সাদ্দাম হোসেন এবং তানভীর রহমানকে দিতে বলেন।
পরে মুসা পারভেজ তাদের চাবি দেন। রাত ১০টায় সেখানে ডিউটিতে যান জাকারিয়া আল রাজী এবং মাসুম বিল্লাহ। ১৫ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তারা ডিউটি শেষ করেন। তারপর ডিউটির দায়িত্ব পড়ে সাদ্দাম হোসেন এবং মাসুম বিল্লাহর ওপর।
সকাল ৯টার দিকে রুম ক্লিনার আব্দুল নোমান ল্যাব-২ পরিষ্কার করতে গিয়ে টেবিলে মেশিন দেখতে না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। ঘটনার ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মেশিন বা চোরের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী ও রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহ বলেন, চুরির ঘটনায় আমরা মামলা করেছি, কাজ চলছে।
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা পরীক্ষার মেশিন চুরির ঘটনায় আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
এদিকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় চুরি হওয়ায় কেন্দ্রের নিরাপত্তাব্যবস্থা ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বার বার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়লা পরীক্ষার মেশিন সাধারণ মানুষের কোনো কাজে লাগার কথা নয়, ছিচকে চোরদের চুরি করারও কথা নয়। বড় কোনো চক্র এবং কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কেউ এতে জড়িত।
এ ছাড়া ল্যাব এলাকায় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা লোক থাকার পরও মামলায় কারও নাম না দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায় এড়ানোর চেষ্টা বলেও মনে করেন তিনি।
কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য রয়েছেন ১৫০ জন, সাধারণ আনসার ৩০ জন, পুলিশ সদস্য ১৭ জন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভেল-এর নিজস্ব সেন্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মী রয়েছে ৭৮ জন এবং জেরিন সিকিউরিটি সার্ভিসের রয়েছে ১৮ জন।