স্টাফ রিপোর্টার- মহাসড়কে যাত্রী সেজে চালক’কে ছুরিকাহত করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, গত ২০২২ সালের ১৯শে অক্টোবর রাত আনুমানিক ২:৩০ মিনিটে মোঃ রাজিব হোসেন (৩৪) নামের এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল যোগে আশুলিয়া থানাধীন বাইপাইল থেকে ২ জন যাত্রী নিয়ে চন্দ্রার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
পথিমধ্যে আশুলিয়া থানাধীন কবিরপুর এলাকার নবীনগর টু চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে পদ্মা ফিলিং ষ্টেশন পেট্টোল পাম্পের সামনে যাত্রী দুইজনের একজন মোটরসাইকেল চালক রাজিবকে ছুরিকাহত করে গুরুতর জখম করে রাস্তার মধ্যে ফেলে রেখে দুজনেই রাজিবের মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় মূমুর্ষ অবস্থায় প্রথমে পাশ্ববর্তী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ সেপ্টেম্বর রাজিবের মৃত্যু হয়।
নিহত রাজিবের বাবা গত ৩ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে আশুলিয়া থানা পুলিশ কোন কুলকিনারা না পেয়ে মামলাটি পিবিআইকে হস্তান্তরের জন্য পুলিশ হেডকোর্য়াটারে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে।
পিবিআই ঢাকা জেলার উপ-পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বজিৎ বিস্বাস জানান ,মামলার সূত্র ধরে ঘটনাস্থল এলাকায় মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের সন্ধান করা হয়। তথ্য প্রযুক্তি ও স্থানীয় সোর্সেসের সহায়তায় জানা যায় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার একই ধরনের মামলায় জড়িত সন্দিগ্ধ দুইজন ১। নবা সাইদুর রহমান ওরফে নবু (৩২) ২। সেলিম (২৯) কে গ্রেফতার করে মির্জাপুর থানার পুলিশ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করে এবং বিজ্ঞ আদালত আসামীদ্বয়ের ২ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করে এবং রিমান্ড শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে আসামীদ্বয়কে একই মামলায় বিজ্ঞ আদালতে গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ২ দিনের পুলিশ রিমান্ড মন্জুর করেন এবংপুলিশ রিমান্ডে তাদের দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজিবকে ছুরিকাহত করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীরা আশুলিয়া থানাধীন বাইপাইল থেকে যাত্রীবেশে রাজিবের মোটরসাইকেলে ৩০০ টাকা ভাড়া ঠিক করে চন্দ্রার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পদ্মা ফিলিং ষ্টেশন পেট্টোল পাম্পের সামনে পৌছালে গ্রেফতারকৃত আসামী নবা ওরফে সাইদুর রহমান নবু নিহতে রাজিবকে ছুরিকাহত করে। এরপর তারা মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০,০০০ হাজার টাকায় লুন্ঠিত মোটরসাইকেলটি তারা তাদের সহযোগী অপরাপর আসামদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
এসআই বিশ্বজিৎ বলেন, আসামীরা বিক্রিত টাকা সমান ভাগে ভাগ করে নেয় এবং সেই টাকা দিয়ে নেশা করে। এ সংক্রান্তে আসামি সেলিম গত ১৯ ফেব্রুয়ারী বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্য বিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। লুন্ঠিত মোটরসাইকেল টি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে নিহত রাজীবের বাবা এবং মামলার বাদী মোঃ জাফর মিয়া জানিয়েছেন, রাজিব ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। কিস্তিতে কেনা মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে সংসার খরচ চালাতেন তিনি। অবশেষে নেশাখোর ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়ে শেষ সম্বল মোটরসাইকেটি রক্ষার জন্য নির্মমভাবে খুন হতে হলো তার ছেলেকে।