স্টাফ রিপোর্টার – আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগে টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া ছিল গ্রাম। এখন এ গ্রাম আর গ্রাম নেই। এটি এখন শহর হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা একজনকে সৃষ্টি করেছেন স্বাধীনতার জন্য, একজনকে মুক্তির জন্য। বঙ্গবন্ধু দেশ দিয়েছেন আর শেখ হাসিনা মানুষকে মুক্তি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। তিনি কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়াকে শহর বানিয়ে দিয়েছেন। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় মঞ্চে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
গোপালগঞ্জবাসীকে উদ্দেশ করে সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, চেহারা সুরত এখন দেখি খুব ভালো। তখন স্যান্ডেল পরা লোক খুব কম দেখেছি। এখন প্রত্যেকের পায়ে জুতা। প্রত্যেকে সুন্দর সুন্দর কাপড় পরছেন। মহিলারা শহরের নারীদের মতো ড্রেস পরে এসেছেন। এ পরিবর্তনের রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে অনেক মানুষ চলে গেছেন। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে উপরে উঠেছে। আমাদের দোষ নেই, কিন্তু মূল্য দিচ্ছি আমরা। বড় বড় শক্তিগুলো নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে…। বেশি দামে আমদানি করে আজ কম দামে বিক্রি করছেন শেখ হাসিনা।
এ সময় এলাকার সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভয় পাবেন না। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এটা মাইনরিটি অধ্যুষিত এলাকা। আমি আশ্বস্ত করছি, শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, আপনাদের আপনজন এর চেয়ে বেশি আর কেউ নেই। আপনাদের যা যা অধিকার, শেখ হাসিনা থাকলে সব হবে। কারও কথায় প্রলুব্ধ হবেন না। ওদের কথা শুনবেন না, যারা গোপালগঞ্জকে বলে গোপালী।
বিএনপিকে সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা আখ্যায়িত করে তাদের প্রতিহত করতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বিএনপির পতনযাত্রা শুরু হয়েছে। তারা আন্দোলনের খেলায় হেরে গেছে। আন্দোলনের খেলায় তারা আর পারবে না। নির্বাচনে না এলে তাদের অস্তিত্বই টিকবে না।
বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলন শুরু করেছে। কিসের আন্দোলন! আন্দোলন দেখেছেন? পথ হারিয়ে পথিক এখন দিশেহারা। এখন পদযাত্রায় নেমেছে। গণআন্দোলন থেকে পদযাত্রা। পতনযাত্রা শুরু হয়েছে বিএনপির। তারা শেখ হাসিনাকে সহ্য করতে পারে না। কারণ, পদ্মা সেতু দেখলে তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। মেট্রোরেল, ঘরে ঘরে বিদ্যুত তাদের জ্বালা। বিএনপি অন্তর্জ্বালায় ভুগছে। অন্তর্জ্বালায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, খেলা হবে। আন্দোলনে হবে। নির্বাচনে হবে। মোকাবিলা হবে। নৌকা চলবে ভাসিয়া, ভোট দেবেন আসিয়া। আন্দোলনের খেলায় তারা আর পারবে না। তারা হেরে গেছে আন্দোলনের খেলায়।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলমান থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাল্টাপাল্টি নয়, নির্বাচন পর্যন্ত সারা দেশে আমাদের কর্মসূচি চলবে, আন্দোলন চলবে। আন্দোলন করতে জনগণ লাগে। বিএনপির সঙ্গে জনগণ নেই। কিন্তু অগ্নিসন্ত্রাসী আছে। পেট্রোল বোমা, ককটেল আছে। অস্ত্র-লাঠি আছে। এই অপশক্তি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অল্প শক্তি দিয়ে বড় বড় ভয়ংঙ্কর কাণ্ড ঘটিয়েছে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, কারও কথায় প্রলুব্ধ হবেন না। কারও কথায় নড়চড় হবেন না। তাদের কথা শুনবেন না– যারা গোপালগঞ্জকে বলে গোপালী। এও বলেছে, ক্ষমতায় এলে গোপালগঞ্জের নামও পাল্টে ফেলবে। গোপালগঞ্জ গোপালগঞ্জই আছে। কিন্তু দুর্নীতির দণ্ডে আপনি দণ্ডিত। আপনার ছেলে বিদেশ থেকে রিমোর্ট-কন্ট্রোলে আন্দোলন করছে।
সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এই অশুভ শক্তি আবার যদি ক্ষমতা পায় তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকর বানাবে। রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানাবে। এ দেশে রাজাকারদের স্বাধীনতা পুরস্কার দেবে। একুশে পদক দেবে।
তিনি বলেন, ওরা ক্ষমতায় গেলে নারীদের অবস্থান হবে আফগানিস্তানের মতো। ঘরের কোণে বোরকা পড়ে থাকতে হবে। বাইরে যেতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হবে না। সেকেন্ডারি স্কুলে যাওয়া হবে না। চাকরি হবে না। কারণ বিএনপি যাদের সঙ্গে রাজনীতি করে তারা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাতে চায়। যেখানে নারীদের কোনও স্বাধীনতা নেই।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে হবে। তারা সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা। জঙ্গীবাদের বিশ্বস্ত ঠিকানা। তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে। বাস ও স্কুল পুড়িয়ে ফেলে। বিদ্যুৎ স্টেশন, রেললাইন পুড়িয়ে দেয়। অগ্নিসন্ত্রাসের হোতা বিএনপিকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। তারা এ দেশের শত্রু। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের শত্রু। তারা ক্ষমতায় আসতে পারলে আবারও জয় বাংলা, সাতই মার্চ নিষিদ্ধ হবে। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বিজয় দিবস হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, জনবান্ধব সরকার শেখ হাসিনার সরকার। তিনি মুসলমানদের জন্য উপজেলায় উপজেলায় মডেল মসজিদ করেছেন। এই দৃষ্টান্ত আর কারও নেই। তিনি ফজরের নামাজের পর কুরআন পড়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। গত ৪৮ বছরে তার মতো সৎ নেতা একজনও সৃষ্টি হয়নি।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানাবে, মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বানাবে। তারা জঙ্গিবাদের বিশ্বস্ত ঠিকানা।
জনসভায় উপস্থিতিদের আবারো নৌকায় ভোটের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। নিজেই স্লোগান ধরেন ‘নৌকা চলে ভাসিয়া, ভোট দিবেন হাসিয়া। তিনি বলেন, আগামীতেও আপনারা শেখ হাসিনাকে ভোট দেবেন। নৌকাকে ভোট দেবেন। নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়, দেশের মানুষ ভালো থাকে।