মিথুন আশরাফ – বাংলাদেশের জন্য চট্টগ্রাম সবসময়ই ‘লাকি ভেন্যু’। ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতেও হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেছে বাংলাদেশ। বোলারদের ঐক্যবদ্ধ নৈপুন্যের পর নাজমুল হোসেন শান্তর ৫১ রানের পর সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ৩৪ রানে সহজেই জিতে বাংলাদেশ। এরআগে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও চট্টগ্রামে সাকিবের নৈপুন্যে জিতেছিল বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৬ রান করে ইংল্যান্ড। ওপেনার জস বাটলার ৬৭ রান করেন। ফিল সল্ট ৩৮, বেন ডাকেট ২০ রান করেন। হাসান মাহমুদ ২ উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে ২ ওভার বাকি থাকতেই অনায়াসে জিতে বাংলাদেশ। ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮ ওভারে ১৫৮ রান করে জিতে বাংলাদেশ। পাত্তাই পায়নি ইংল্যান্ড। ৩০ বলে ৮ চারে ৫১ রান করেন শান্ত। আর ২৪ বলে ৬ চারে অপরাজিত ৩৪ রান করেন সাকিব। আফিফ হোসেন ধ্রুব অপরাজিত ১৫ রান করেন।
বাংলাদেশের শুরুটা দারুণ হয়। লিটন কুমার দাস ও রনি তালুকদার মিলে ভালই এগিয়ে যান। কিন্তু দলের যখন ৩৩ রান হয়, তখন রনি (২১) আউট হয়ে যান। ১০ রান স্কোরে যোগ হতেই লিটনও (১২) সাজঘরে ফিরেন। তবে এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও টি-টোয়েন্টি অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয় মিলে দলকে ১০ ওভারে ৯৮ রানে নিয়ে যান।
শান্ত তো ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করেন। হৃদয়ও নিজেকে প্রথম ম্যাচেই মেলে ধরেন। দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটি সহজেই গড়ে ফেলেন। বাংলাদেশও প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে হারানোর স্বপ্ন দেখতে থাকে। শান্ত ২৭ বলে হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন। দলও ১০০ রানের উপরে করে ফেলে। হৃদয় (২৪) এত সুন্দর ব্যাটিং করছিলেন, কিন্তু দলের ১০৮ রানে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে যান। হৃদয় আউটের পর শান্তও (৫১) বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। তখন যেন জয়ের আশা হতাশায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা জাগে। ৩৭ বলে যখন জিততে ৩৪ রান দরকার, তখন ৫ রানে থাকা আফিফ হোসেন ধ্রুব ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বেঁচে ‘নতুন জীবন’ পান।
যতই হতাশা জড়িয়ে ধরুক, ভরসা তো একজনই থাকেন। তিনি সাকিব আল হাসান। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ব্যাটিং-বোলিং নৈপুন্য দেখিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন। এবার ব্যাট হাতে অসাধারণ ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে জেতান। অধিনায়ক সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন। সাকিব ও আফিফ মিলে দলকে ১৫৮ রানে নিয়ে গিয়ে জেতান। দুইজন মিলে পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৪৬ রানের জুটি গড়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এনে দেন। এরআগে গতবছর টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে একবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করে হারে বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় বাটলারকে যদি দ্রুত সাকিব ক্যাচ আউট করে দিতে পারতেন, তাহলে রান আরও কম হতো। দলের যখন ৪৫ রান, বাটলার তখন ১৯ রানে। এমন মুহুর্তে স্পিনার নাসুম আহমেদের বলে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন বাটলার। সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি সাকিব। বাটলার তখন ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করে ৬৭ রান করে আউট হন। দলকে ১৩৫ রানে নিয়ে গিয়ে হাসান মাহমুদের বলে আউট হন বাটলার। ৪২ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৭ রান করেন বাটলার। ইংল্যান্ড অধিনায়কের মতো আর কোন ব্যাটার ব্যাটিং করতে পারেননি। তবে যেখানে ৪৫ রানে বাটলার আউট হলে ওপেনিং জুটি ভাঙতে পারত। সেখানে প্রথম উইকেটে সল্টকে নিয়ে ৮০ রানের জুটি গড়েন বাটলার।
তখন মনে হয়েছিল, পাওয়ার প্লে’তেই ৫১ রান তুলে ফেলা ইংল্যান্ড অনায়াসেই ২০০ রানের কাছে করে ফেলবে। কিন্তু বাংলাদেশ বোলারদের দক্ষ বোলিংয়ে তা সম্ভব হয়নি। আর কোন ব্যাটারকেই ভালো কিছু করতে দেননি বাংলাদেশ বোলাররা। রানের গতি কমিয়ে রাখতে পেরেছেন। বাটলার, সল্ট আর ডাকেট ছাড়া আর কোন ব্যাটার দুই অংকের ঘরেই পৌছাতে পারেননি। শেষে ১২ রানে চার উইকেটও হারায় ইংল্যান্ড। যেখানে ১৩৪ রান পর্যন্ত ২ উইকেট ছিল। সেখান থেকে ১৪৭ রানে ৬ উইকেটের পতন হয়। শেষে ১৫৬ রান করে ইংল্যান্ড। এই রান বাংলাদেশের সামনে বড় হয়ে দাড়ায়নি। শুরুতে শান্ত ও পরে সাকিব যে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন।