Search
Close this search box.

একজন ভগিনী, একজন কর্মবীর, একজন রাষ্ট্র নায়কের প্রতিকৃতি

একজন ভগিনী, একজন কর্মবীর, একজন রাষ্ট্র নায়কের প্রতিকৃতি

মীর রফিকুল ইসলাম

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষণ অনুক্ষণের নিরন্তর প্রবাহিত ধারা সূত্র আমাদের চেতনায় সকাল- দুপুর-বিকেল, দিন-সপ্তাহ, মাস-বছর, যুগ-যুগান্তর কাল অধ্যায়ের বাস্তবতার বারতা তুলে ধরে। আমরা সাধারনেরা বাঁচি বছর, যুগ কিংবা শতাব্দি ব্যাপী। তারপরে এক সময় চলে যাই। সময়ের অতল গর্বে হারিয়ে যাই আমরা। বসুধা ভুলে যায়, কেউ আর আমাদের মনে রাখে না। কিন্তু একজন শ্রমনিষ্ঠ স্বপ্নদর্শী কর্মবীর বাঁচেন প্রতিক্ষনে। প্রতি ক্ষনের কর্মালোকে আলোকিত হয়ে ওঠে তার প্রতিটি ক্ষণ, তিনি সময়কে অর্থবহ করে তোলেন। সময়কে অনর্থক বয়ে যেতে না দিয়ে কর্মোপহার মালায় তাকে ভরিয়ে তোলার প্রতিদান দিতেই সময় তাকে বাঁচিয়ে রাখে তার আপন ঔদার্য আলোকে।

ব্যাক্তি ও ব্যাক্তিত্ব ভেদে তার কর্ম প্রয়াস-পরিধি ভিন্ন ভিন্ন মান ও মাত্রায় প্রতিফলিত হয়। যখন একজন মানুষের কর্ম প্রয়াস রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুভার সমৃদ্ধ তখন গুরুত্বের বিচারে তা সর্বোচ্চ গুরুত্ববাহী।

স্থান কাল পাত্র বিচারে এই দেশে, এই সময়ে একজন শেখ হাসিনা কর্তৃক এই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি পরিচালনার কাজটি নিঃসন্দেহে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের, এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে মর্মঘাতি কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে যা রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরীন ও কুটনীতি বিষয়ক, যা সব সময় সর্ব সাধারণ্যে প্রকাশ বা শেয়ার করা সম্ভব হয় না। এ কারনেই এটাকে মর্মঘাতী চ্যালেঞ্জ বলে অভিহিত করছি। কারণ ঘাত যত দুঃসহ ও কঠিনই হোক না কেন তা প্রকাশ বা শেয়ার করতে পারলে তার পীড়ন শক্তি হালকা হয়ে যেত। আর এই ঘাতটি হজম করতে হয় প্রধানতঃ রাষ্ট্র প্রধানকেই এবং তার ক্যাবিনেট ভূক্ত কিছু বিশ্বস্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে।

নিরবে, উদ্বেগহীন চিত্তে, শ্রান্তি-ক্লান্তিহীন প্রয়াসে এই অদৃশ্য মর্মঘাতি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে করে দেশের আপামর জন মন্ডলীর খাদ্য, বস্ত্র, আবাস, সুস্থতা, শিক্ষা, বিনোদন সহ যাবতীয় চাহিদার একটা সন্তোস জনক স্থিতি অবস্থা নিশ্চিত করে একটা জাতিকে ক্রম উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সত্যি কঠিন। তার ওপরে বৃহৎ জনগোষ্ঠী যদি সচেতন সহনশীল না হয়ে বরং তার উল্টো বাস্তবতাই নিশ্চিত করে সেক্ষেত্রে পুরো কর্ম প্রয়াসটিই প্রায় দুঃসাধ্য ও কঠিন হয়ে ওঠে একজন রাষ্ট্রের কান্ডারির পক্ষে।

আমাদের তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এইরূপ আত্মঘাতী প্রবন চর্চাই বহু যুগের চর্চিত বা অনসৃত বাস্তবতা। তাই এই বিষয়ে আলোচনা ও সমাধান সূত্র আবিস্কারের ভার বিজ্ঞজনের তরে ছেড়ে দিয়ে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় মনোজ্ঞ দৃশ্যমান কিছু বিষয়ে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেই লক্ষ্যে প্রথমেই কিছু ত্যাগী, সৎ রাজনীতিবিদ সম্পর্কে জানাতে চাই। যাদের সম্পর্কে সবাই জানেন, যাদের ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারীও রয়েছে তাদের নিজ নিজ দলীয় পরিসরে। প্রথমত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, আসম আব্দুর রব, হাসানুল হক ইনু, মতিয়া চৌধুরী প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যায়।

নিখাদ দেশ প্রেম, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়েই এরা রাজনীতি শুরু করেছিলেন। অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে এদের সারাজীবনের রাজনীতি একটা সফল পরিনতির দিকে এগুতে পারেনি। তার নানান যৌক্তিক কারণ াকতে পারে, তার বিষদ ব্যাখ্যা যাদেরটা তারা নিজেরাই করবেন। আমি কেবল একটা বিষয়েই উল্লেখ করতে চাই যে, একজন জননেতা হিসেবে জনগণের জন্য তাদের যা করনীয় ছিল, জনগণকে তাদের যা দেয়ার ছিল তা কি তারা করার বা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছেন? বলতে গেলে একদমই পারেননি। যদিও তাদের সেই শক্তি বা সদিচ্ছা সবই ছিল বা আছে অথচ তারা তাদের সেই শক্তি-সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখাতে পারছেন না কোন ক্রমেই। একজন রাজনীতিবিদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক। এই সব তারকা রাজনীতিবিদদের ভেতরের সেই মর্মবেদনা বা হাহাকারটিই অনুভব করলেন মহিয়সী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তাদের সাে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দলিয় পরিসরে আসন ভাগাভাগি করলেন। তাদেরকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রূপে সংসদে নিয়ে এলেন। তাদেরকে ক্ষমতার অংশীরূপে মন্ত্রীত্ব দিয়ে ঋদ্ধ করলেন। তাদের যোগ্যতার প্রয়োগ ও জনতার প্রতি দায় সাধনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলেন। যাদেরকে পাশ করিয়ে আনা সম্ভব হয়নি তাদেরকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলেন। এই ধারায় দীলিপ বড়ুয়ার নাম উল্লেখ করা যায়।

এরা প্রত্যেকেই যার যার সাধ্যমত তার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। কে কতটুকু সফল হলেন জনগণই তার প্রধান স্বাক্ষী, ইতিহাস তার লিপিকার। এদের মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘ মেয়াদে তার দায়িত্বশীলতার ধারবাহিকতা বহমান রাখতে পারলেন, কেউ আবার পারলেন না। যারা পারলেন না, দেখা গেল বিভিন্ন ইস্যুতে তারা শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষীন কারণ-অকারনেই বিষোদগার করছেন। জনগণ আবার তা নিয়ে টিপপনি কাটছে-ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ার অন্তর জ্বালা… ইত্যাদি বলছে।

এই যে মানুষের অন্তরের চাওয়াকে বুঝতে পারা, চাওয়ার আকুতিকে হৃদয় দিয়ে নিজের করে নেয়া এবং সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে সেই চাওয়াকে পাওয়ায় রুপান্তরের বাস্তবতা নির্মাণ, এই প্রচেষ্টার মধ্যে একজন কর্মনিষ্ঠ উদার চিত্ত রাষ্ট্র নায়কের ভাবনার বলিষ্ঠতা যেমন খুঁজে পাওয়া যায়, একই ভাবে একজন মমতাময়ী নারী সত্ত্বাকেও শনাক্ত করা যায়-যিনি স্নেহময়ী ভগিনী কিংবা পরম মঙ্গলার্থী মাতৃরূপে সদা হস্ত প্রসারী।

আমরা সাধারনেরা মানুষের দিকে তাকিয়ে প্রমত তার বাহ্যিক ছুরত প্রত্যক্ষ করি, তার কথোপকথন সুন্দর সুললিত কিনা তার মাঝে মুগ্ধতা খুঁজি কিন্তু একজন বিচক্ষণ নেতা মানুষের দিকে তাকিয়ে তার বাহ্যিক নয়, অন্তর্গত ছুরতকে প্রত্যক্ষ করেন, তার কথোপকনের মধ্য দিয়ে তার কমিটমেন্ট/দায়িত্বশীলতার গভীরতার মাত্রা অনুধাবনের চেষ্টা করেন। একজন জননেতা শেখ হাসিনা তার অন্তরভেদী বিচক্ষনতা দিয়ে সেই বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

প্রবল বিরুদ্ধ মত ও প্রতিকূলতাকে থোরাই কেয়ার করে তিনি বাম ধারার দুজন নেতাকে তুলে আনলেন যারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মতৎপরতা, স্বচ্ছতা ও গতিশীলতায় দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রতিষ্ঠা করেছেন…। মৌলবাদী প্রভাব মুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আলোকিত উদার নিরপেক্ষ ত্য প্রচার, বিস্তারে আন্তরিক চেষ্টা করেছেন।

প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, যিনি তুখোড় পর্লামেন্টারিয়ান হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ক্ষমতার বাইরে থেকেই যিনি তার রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তির দিকে এগোচ্ছিলেন। একটি নক্ষত্রের ক্রম নির্মিয়মানতার বাস্তবতা নেতার চোখ এড়াল না। তিনি মিঃ গুপ্তকে মন্ত্রীত্ব দিয়ে ক্ষমতার অংশী করে নিলেন। জন নেতাকে জনতার সেবা দেয়ার সুযোগ করে দিলেন।

একজন রাষ্ট্র নেতা কর্তৃক মানুষকে মূল্যায়নের এই চেষ্টাকে ইতি-নেতী উভয় দৃষ্টিতেই দেখা যায় কিন্তু সমস্ত তর্ক বিতর্কের বাইরে যথার্থ মানবিক মূল্যায়ন, মহানুভবতা ও উদার চিত্ততার যে নজির স্থাপিত হল সে সত্যতো কখনো মুছে যাবে না। কোন কোন মহৎ কর্ম সমসময়ে মূল্যায়িত হয় না। একজন মহানুভব চিত্ত নেতার এই সদউদ্যোগ খানি হয়তো স্বাভাবিক ভাবে মানুষের কাছে তেমন মহার্ঘ মনেও হবে না। কিন্তু ভবিতব্য (সময়)? সেতো কিছুই হেলায় ফেলে যায় না! কিছুই ভোলে না। ক্ষুদ্র, নগন্য-অগ্রগন্য সবকিছুই সে তার স্মৃতির মনিকোঠায় সযত্নে সঞ্চিত রাখে এবং যথাসময়ে সর্বত্তম প্রতিদানে ভূষিত করে প্রত্যেক কারক ব্যক্তিত্বকে। তাই কোন মহৎ কর্মের তাৎক্ষনিক মূল্যায়ন প্রত্যাশা নয়, বরং প্রকৃতি প্রদেয় বড় পরিসর মূল্যায়ন প্রত্যাশাই বাঞ্ছনীয়।

এই উন্মাতাল রাজনীতি আর বিক্ষিপ্ত জণমননের সীমানায় যে ইতিবাচক নেতৃত্ব ও মনুষ্যত্ব উৎসারী রাজনীতির দৃষ্টান্ত রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রেখে গেলেন, সময় তার সঠিক মূল্য অবশ্যই প্রতিভাত করবে।

লেখক : গবেষক

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ