স্টাফ রিপোর্টার – পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় হামলার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর কাছে। চিরকুটে বলা হয়েছে – ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ কাজটা শিরকের। এখানে এসে ক্ষতি করো না তোমাদের। এ ঘটনায় আবতাহী রহমান (২৫) নামে এক শিক্ষার্থী শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।
এরআগে বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় সুনির্দিষ্ট কোন হুমকি নেই বলে জানিয়েছিলেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেছিলেন, পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। আইজিপি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। কেউ যদি বড় অঙ্কের টাকার লেনদেন করতে চায় এবং পুলিশের সাহায্য চায় তাদের সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে পহেলা বৈশাখে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিনকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান রেজিস্ট্রি ডাকে নোটিশটি পাঠান। নোটিশ পাওয়ার পর অবিলম্বে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাজার বছর ধরে, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বাঙালি জনগণ একে অপরের ধর্মকে সম্মান করে এই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে একটি কৃত্রিম কার্যকলাপ বাঙালি সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত, এই কৃত্রিম উদ্ভাবিত মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে পহেলা বৈশাখের কোন সম্পর্ক নেই।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ১৯৮৯ সালে পহেলা বৈশাখে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে এক ধরনের পদযাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে এই ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ কে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে নামকরণ করা হয়।
এতে বলা হয়, মঙ্গল শব্দটি একটি ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট শব্দ। সকল ধর্মের লোকজন তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে ‘মঙ্গল’ প্রার্থনা করে থাকেন। এখন এই মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের দৈত্য আকৃতির পাখি, মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২-ক এর সরাসরি লঙ্ঘন।
অপরদিকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন দৈত্য আকৃতির পাখি, মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে মুসলিম জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা হচ্ছে এবং ইসলাম ধর্মকে অপমান করা হচ্ছে, যা দণ্ডবিধির ২৯৫-ক ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আইনি নোটিশ পাওয়ার পর অবিলম্বে এই অসাংবিধানিক, বেআইনি ও কৃত্রিম উদ্ভাবিত মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।
প্রসঙ্গত, উৎসব উদযাপনের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটে চলছে বর্ণিল এই শোভাযাত্রার জোর প্রস্তুতি। করোনা মহামারীর রেশ না কাটতেই যুদ্ধবিগ্রহের জেরে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। তাই এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রতিপাদ্য করা হয়েছে- ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। যুদ্ধ নয়, শান্তির পৃথিবীর প্রত্যাশার বার্তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার পঙ্ক্তি থেকে এ প্রতিপাদ্য নেওয়া হয়েছে। এটি সামনে রেখেই চলছে ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বরণ করার প্রস্তুতি; ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ঢাবি চারুকলার বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।