স্টাফ রিপোর্টার- নিষেধাজ্ঞার ভয়ভীতি দেখিয়ে কোন লাভ হবেনা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি উল্লেখ করে বলেন, একাত্তরেও ৭ম নৌবহর পাঠানো হয়েছিল তাতেও কাজ হয়নি। ত্রিদেশীয় সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সোমবার (১৫ মে) বিকেল সদ্য সমাপ্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের ফলাফল সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করা হয়। বিকেল ৪টার কিছু সময় পর গণভবনে ওই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেসব দেশ থেকে কিছু কিনব না, এত ভয়ের কী আছে। নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। কারও ওপর নির্ভরশীল নয় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দুটি পদক্ষেপ নিয়েছি।
দেশের রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ডলার সংকট কেটে যাবে। দেশে বর্তমানে ৩১ দশমিক ২২ বিলিয়ন রিজার্ভ রয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল এক বিলিয়নেরও কম। সুতরাং রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
সরকারপ্রধান জানান, কোনো দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সে হিসেবে আমাদের আরও বেশি রয়েছে। এজন্য রিজার্ভ কমে যাওয়াকে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখছে না সরকার।
তিনি বলেন, আমরা রিজার্ভ নিয়ে বলতে বলতে সবার মাথায় এটা ঢুকে গেছে। আমাদের রিজার্ভ এখনো যা আছে তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের এমন কোনো সংকট এভাবে নাই। তবে আমরা সবসময় রিজার্ভ ধরে রাখারই চেষ্টা করি।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো ‘ভয়ে নেই’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন আসছে বলে ভয় পাবো! কেন ভয় পাবো! আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই।
তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট বাংলাদেশের উন্নয়ন, মানুষের জীবনমানের অগ্রগতি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এক প্রশ্নে সরকারপ্রধান বলেন, ওয়েস্ট-ইস্ট অব ডেমোক্রেসি আমরা ফলো করি। দেখুন, ব্রিটেনে কীভাবে ইলেকশন হয়, তারা কীভাবে করে, আমরা সেভাবেই করবো। এরমধ্যে আমরা এটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারে আসতে চান, আমরা নিতে রাজি আছি। এটুকু উদারতা আমাদের আছে, আগেও আমরা নিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে আমি খালেদা জিয়াকেও আহ্বান (নির্বাচনকালীন সরকারে আসার) করেছিলাম। তারা তো আসেনি। আর এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে। কাজের ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু না।
বিএনপির আন্দোলন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন অপজিশনে ছিলাম আমাদের কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোককে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। তিন হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি রেল, ৯টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। তারা তো জ্বালা-পোড়াওই করে গেছে।
‘আমি বলে দিয়েছি, আন্দোলন করুক, মানুষ ছাড়ুক কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু জ্বালা-পোড়াও যদি করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার এরকম করে পোড়ায়, তাকে ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেবো না’- যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের ২০ দলীয় ঐক্যজোট। সিট পেয়েছে মাত্র ২০টি। তারা আবার বড় বড় কথা বলে। আর দালালি…। কার পয়সায় আন্দোলন করছে, কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষ কি এত অন্ধ হয়ে গেছে, চোখে দেখে না। হাজার হাজার কোটি টাকা তো লুট করে নিয়েই গেছে, আর কাদের মদতে করছে সেটা একটু খোঁজ নেন। এত লোক নিয়ে আসে আর প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, এগুলো তো বিনা পয়সায় হচ্ছে না।
নদী দখল বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নদীখেকো যদি বলতে হয়, তাহলে তো মিলিটারি ডিকটেটরদের কথা বলতে হবে। সাঈদ খোকন যখন যখন মেয়র ছিল, তখন তাকে দিয়ে আমি অনেকগুলো পুকুর উদ্ধার করেছি। আমি ইতোমধ্যে অনেকগুলো নদী উদ্ধার করেছি, নদী ড্রেজিং করেছি। আমরা যখন এ কথা বলতাম, তখন একমাত্র মতিয়া চৌধুরী ছাড়া কারও সমর্থন পেতাম না। আমরা অনেক নদী উদ্ধার করেছি এবং করব।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর এ ত্রিদেশীয় (জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য) সফর শুরু হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে ওইদিন সফরের প্রথম ধাপে টোকিও যান তিনি। চারদিনের টোকিও সফর শেষে সেখান থেকে তিনি সফরের দ্বিতীয় ধাপে ২৮ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে যান। দেশটিতে প্রায় এক সপ্তাহের সফর শেষে তৃতীয় ধাপে ৪ মে লন্ডনে পৌঁছান সরকারপ্রধান। যুক্তরাজ্য সফরকালে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তার স্ত্রী রানি ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। লন্ডন থেকে গত ৯ মে তিনি দেশে ফেরেন।