তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জামায়াত ইসলামী যেহেতু একটি রাজনৈতিক দল, তারা সমাবেশ করতে চেয়েছে বলে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো যোগাযোগ নেই। রোববার (২ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ স্পষ্ট বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও জামায়াতে ইসলামী তা অস্বীকার করেছে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, জামায়াতে ইসলামী বিএনপি জোটে রয়েছে। জোটের প্রধান শরিক তারা। আর দলটি সম্পর্কে যে বক্তব্য মির্জা ফখরুল দিয়েছেন, তা তো জামায়াতে ইসলামী অস্বীকার করেছে। আমাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোনো যোগাযোগ নেই, যোগাযোগের প্রয়োজনও নেই। জামায়াতে ইসলামী যেহেতু একটি রাজনৈতিক দল, তারা সমাবেশ করতে চেয়েছে বলে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। এ বক্তব্য আমেরিকার ভিসানীতির পরিপন্থি কিনা জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি কিছুদিন পরপরই কৌশল পরিবর্তন করে। কোনো কোনো সময় তারা হাঁটা কর্মসূচি, কোনো সময় বসা কর্মসূচি দেয়। তাদের মূল কৌশল দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং নির্বাচন ভণ্ডুলের অপচেষ্টা করা। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে তা স্পষ্ট। মার্কিন ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। তাহলে যারা নির্বাচন ভণ্ডুল করার চেষ্টা করবে, তাদের ওপরও এটি বর্তাবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিট্যান্সও বেড়েছে। পাশাপাশি জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দুই হাজার ২৭৩ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগেই বলা হয়েছিল যে দ্রুতই আমাদের অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। সেটির প্রতিফলন হয়েছে গত মাসে। আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এক মাসে ২০২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, মানে দুই বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে জাইকা দুই হাজার ২৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থনীতি যে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে, তারই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এ সূচক। সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে।
সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করলে জনগণের ভোগান্তি তৈরি হবে বলে যে বক্তব্য জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়েছে। আবার কোনো কোনো দ্রব্যমূল্য কমেছেও। তবে ভোগ্যপণ্য অনেকগুলোর দাম বেড়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক যে, আমাদের দেশে যখন কোনো উৎসব হয়, তখন কিছু কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের যোগসাজশে সিন্ডিকেট করে, তারা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বাড়ায়।
হাছান মাহমুদ বলেন, উৎসবগুলোতে অন্য দেশগুলো দ্রব্যমূলের দাম কমায়, আর আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা বাড়ায়। এটি অবশ্যই আমাদের জনগণের জন্য ভোগান্তি তৈরি করছে, যা আমরা স্বীকার করি। যারা এটি করে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী কী বলেছেন, তা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে আমরা মনে করি, যারা এ অসাধু ব্যবসায়ী, মানুষের ভোগান্তি তৈরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকার সময়মতো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করবে।
সেই সময় এখনও কী আসেনি জানতে চাইলে ড. হাছান বলেন, বিভিন্ন সময় করা হয়। তখন পণ্যমূল্য কমে। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যমূল্য বাড়লে আমাদের দেশেও বাড়ে, অনেক ভোগ্যপণ্য আমদানি নির্ভর, যে কারণে দাম বাড়ে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নানা ধরনের সিন্ডিকেট করে মূল্য বাড়ানো হয়। সেটির বিরুদ্ধে আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকারের সংস্থাগুলো। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যারাই এটি করবে, তাদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এরইমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। অনেকক্ষেত্রে করা হয়েছে এর আগে, সামনেও করা হবে।
আইপিটিভির বিরুদ্ধে অভিযান কতদিন চলবে এমন কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করিনি। সময়টা নির্ধারণ করবে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি, অবৈধভাবে পরিচালিত আইপিটিভি এবং ইউটিউবের নামে যারা চাঁদাবাজি ও মানুষের চরিত্র হরণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কোনো কোনো জেলা প্রশাসন ঈদের আগেই অভিযান পরিচালনা করেছে, বাকিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে।