তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন তীব্র হয়ে উঠছে। নদীপাড়ের মানুষ দিশেহারা। কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ইতোমধ্যেই অসংখ্য বসতবাড়ি এবং আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে কচাকাটা ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকিতে পড়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ।
সম্প্রতি, কুড়িগ্রাম জেলায় দারিদ্রতার হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ মধ্যে হচ্ছে নদী ভাঙন। প্রতিবছর নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে গড়ে পাঁচ হাজার পরিবার। এই পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়া হলেও স্থায়ী পুনর্বাসন কার্যক্রম সীমিত।
ফলে অধিকাংশই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। জেলার ১৬টি নদীতে মৃদু ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, ধরলা ও তিস্তা নদীর তীরবর্তী মানুষরা বসতভিটা ফসলি জমি নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। নদী ভাঙনে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং হ্রদে পানি বৃদ্ধির ফলে সেখানকার বাঁধ খুলে দেওয়ায় কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলের ঘর-বাড়ি ও আমন ধান, আলুসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় বাড়ছে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙন।
ইতোমধ্যেই তিস্তার ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ বুড়িরহাট, নামা ভরট, গতিয়াসাম, চর খিতাবখাঁ এবং উলিপুর উপজেলার তিস্তাপাড়ের অসংখ্য বাড়িঘর ও স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঘড়বাড়ি, ভিটেমাটি, গাছপালা ও ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে বসতভিটা ছেড়ে অনেকে চলে যাচ্ছেন অন্যান্য স্থানে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে কচাকাটা ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকিতে পড়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ।
অপরদিকে গত দশদিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরকমণ্ডল ও নাগেশ্বরীর ব্যাপারীরচর, ফকিগঞ্জ, নারায়ণপুর এবং উলিপুর, চিলমারী ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, ধরলা, তিস্তা নদে ভাঙনের বসতভিটা ফসলিজমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
ফুলবাড়ির চর গোরকমণ্ডল এলাকায় দুর্ভোগ আর করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে ধরলা নদীর ভাঙনে এই এলাকায় অসংখ্য পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বিলীন হয়েছে প্রায় তিনশত বিঘা কৃষিজমি। জমি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক কৃষক। ভাঙনকবলিতদের নিজস্ব জমিজমা না থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষ তাদের বাড়িঘর সরিয়ে খোলা আকাশে ফেলে রেখেছে।
তবে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধে কিছুটা সফল। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চর ভগবতীপুরে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়ে আছে চর ভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আশপাশের ৪টি গ্রাম। নুনখাওয়া ইউনিয়নের ব্যাপীরচর গ্রামে গিয়ে স্বচক্ষে দেখা যায় চোখের পলকে চর নুনখাওয়া প্রাইমারীর শিক্ষক জিয়াউল ইসলামের বাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এবং আশপাশের প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি ইতোমধ্য নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম, আজগার আলী, জিয়াউল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম জানান, নদীর ভাঙন যেভাবে শুরু হয়েছে এতে করে আর বাপ-দাদার ভিটা বিলীন হয়েছে। তাই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছি। ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট ঊধ্বতর্ন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, জেলার বৃহৎ তিস্তা, ধরলা এবং ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর ২৭কিলোমিটার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এরমধ্যে অনেক অংশের ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত মালামাল রয়েছে ভাঙন মোকাবেলায়।