বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, আগামী জুনে চলতি অর্থবছর শেষে জুলাই থেকে দেশে সিন্ডিকেট বলতে কিছু থাকবে না। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেল ও চিনির আমদানি, মজুত এবং মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত সভায় এ কথা জানান তিনি।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবো। মূল্য নির্ধারণটা হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এটা কখনো জোড় করে করা যায় না। বাজারমূল্য কখনো আর্টিফিসিয়ালি দীর্ঘদিন ধরে রাখা যায় না। সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি একটি স্মার্ট বাজার ব্যবস্থা চালুর।
সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ওই শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না। আমি মনে করি, বাংলাদেশে যারা ব্যবসা করেন, তারা সৎ ও উদ্যোগী। পাঁচ দিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি, আমাকে একটু সময় দেন। তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাব, এই শব্দটা আর ব্যবহার করা লাগবে না। আমি বললাম, ১ জুলাই থেকে এ শব্দটা ব্যবহার করা লাগবে না। ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করেন, কেউ কারসাজিতে যুক্ত নয়। আমি এটা বিশ্বাস করি না।
দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমাতে পারবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনও জিনিস উৎপাদন ও আমদানি করে না। পণ্যের দাম আমি কমাতে পারবো না, কিন্তু দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা ও পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারবো। আশা করি আজকে যে উদ্যোক্তারা এখানে এসেছেন, তাদের সহযোগিতায় আমি এমন একটা বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে পারবো; যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে কোনও বড় ক্রাইসিস না হলে পণ্যে সংকট থাকবে না। আর কৃষি পণ্য, যেমন পেঁয়াজের যৌক্তিক মূল্য কতো হওয়া উচিত সেটা কৃষি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। চালের মূল্য বলতে পারবে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
আপনি যে বাজার ব্যবস্থা চান, সেই বাজার ব্যবস্থা রিফর্ম করতে কতদিন লাগবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একটা স্মার্ট বাজার ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছি। যেখানে উৎপাদক, আমদানিকারক থেকে ভোক্তা মাঝখানে যে বাধা আছে, সেগুলো দূর করে স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থা করা।
পণ্যের দাম কমানো প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দাম কমাবো না, তবে দাম কমানোর মেকানিজম আমাদের কাছে। স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থাপনার মধ্যেই যৌক্তিক মূল্য আসবে। আমি যদি এ মুহূর্তে বলি দাম কমাবো, দেখা গেলো জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেলো, তাহলে এটা আমার হাত নেই। আমি বলতে পারি দাম যৌক্তিক থাকবে, স্বচ্ছ থাকবে, রেফারেন্স মূল্য আন্তর্জাতিক থাকবে।
তাহলে কি দাম বেঁধে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া ছিল আপনারা সেদিকে হাঁটতে চাচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের মুভমেন্ট দেখে সে অনুযায়ী মিলাররা দাম নির্ধারণ করবে। তবে, একই দামে তো সবাই কিনতে পারবে না। এজন্য আজকে আমরা আলোচনায় বসেছি যে কীভাবে দামটা নির্ধারণ হবে। এখন যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে কেবিনেটে নেব।
তিনি বলেন, আমরা কোনও জিনিসের পরিবর্তন করছি না। সবকিছু ঠিক থাকবে। আমি আপনাদের কাছ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বা চলতি অর্থবছর পর্যন্ত সময় নিচ্ছি। জুলাই থেকে আমরা যে ব্যবস্থাটা করবো, সেটা আপনারা জানবেন। এ মুহূর্তে আমরা যে কোনো মূল্যে বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাই। এজন্যই তাদের ডাকা হয়েছে। কেউ যেন মজুতদারি, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারটাকে বিশেষ করে রমজান মাসে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা না করে। এজন্যই তাদের ডেকেছি, কোনও মূল্য নির্ধারণের জন্য ডাকা হয়নি।
স্বচ্ছবাজারে সুবিধাটা কবে থেকে মিলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামীকাল থেকে স্বচ্ছবাজারের সুবিধা পাওয়া যাবে। আমি বিশ্বাস করি, ব্যবসায়ীরা আজকে যে মেসেজ পাবেন, কাল থেকে উনারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। আপনারা এর প্রতিক্রিয়া দেখতে পারবেন।