স্টাফ রিপোর্টার: জাতিগত সংঘাতের জেরে নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসে মিয়ানমারে যুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য সংগঠিত হচ্ছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনের শুরুতেই রফিক নামের একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন। এরপর এ বছরের জুলাইয়ে তিনি আবার মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে যুদ্ধ করেছেন।
৩২ বছর বয়সি রফিকের মতো হাজার হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে বের হয়ে এসেছেন। তারা মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য সংগঠিত হচ্ছেন।
কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে। সেখানে সম্প্রতি জঙ্গি হামলা ও সহিংসতা বেড়েছে। এসব সংঘাতের মধ্যেই রয়টার্সের প্রতিনিধি চার রোহিঙ্গা এবং তাদের সহায়তাকারী দুই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
রফিক বলেন, ‘আমাদের ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।’
গত জুলাইয়ে মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে কয়েক সপ্তাহ সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন রফিক। এরপর পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম জনগোষ্ঠী। এরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালে বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূল শুরু হলে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারের ওই জাতিগত সহিংসতাকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ।
২০২১ সালে সেনাঅভ্যুত্থানে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সাং সু চি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মিয়ানমারজুড়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সরাসরি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।
রোহিঙ্গারা এখন সেই যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশ করছে। রফিক বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছিলো রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। রাজ্যটি এখন দখল নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। তাদের হাত থেকে ভূখণ্ড উদ্ধার করার জন্য রোহিঙ্গারা এখন জান্তা সরকারের হয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে।’
কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে অন্তত ১৮ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছে রয়টার্স। তাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এবং রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রয়টার্স বলেছে, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩ থেকে ৫ হাজার হতে পারে।
রয়টার্স দাবি করেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের যুদ্ধে যোগ দিতে অর্থ ও নাগরিকত্ব সনদসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে প্রলুব্ধ করছে। আর এই কাজে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশেরই কর্মকর্তারা। যদিও রয়টার্স তাদের নাম প্রকাশ করেনি।
বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বিদ্রোহী, মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
অন্যদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার রয়টার্সকে বলেছে, ‘নিজেদের গ্রাম ও অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে যুদ্ধের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’