চীনে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) সংক্রমণের মাত্রা কমলেও বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাড়ছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে চীনে বিশেষত উত্তরাঞ্চলে এবং ১৪ বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে দেখা যায়।
এ বৃদ্ধি হাসপাতালের সক্ষমতা এবং জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর চীনে এর সংক্রমণের হার এখন কমছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শীতের মাসগুলোতে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের এই ধরনের ঋতুভিত্তিক ওঠানামা সাধারণ ব্যাপার।
অন্যদিকে, ভারতে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন বেঙ্গালুরু, আহমেদাবাদ, চেন্নাই ইত্যাদিতে অন্তত ৯ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে নবজাতক এবং শিশুও রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শীতকালে শ্বাসযন্ত্রের রোগ বৃদ্ধির ঘটনাটি প্রত্যাশিত। তবুও নিজেদের এবং পরিবারের সুরক্ষার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। খবর এনডিটিভির।
এদিকে, বাংলাদেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস আক্রান্ত নারী সানজিদা আক্তার (৩০) মাল্টি অর্গান ফেইলরের (একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের অকার্যকারিতা) কারণে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। তবে এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চললে এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এইচএমপিভি ভাইরাসে একজন নারীর মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সকালে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান জানান, সানজিদা আক্তার নামের যে রোগী মারা গেছেন, তিনি এক মাসের বেশি সময় ধরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বাসার কাছে স্বীকৃত চিকিৎসক নন, তাদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তিনি রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে আসেন। সেখানে ওই নারীকে অ্যান্টিবায়োটিক ও অক্সিজেন দেয়া হয়। এর চার দিন পর অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে রাজধানীর আরেকটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তখন পরীক্ষায় তার এইচএমপিভি পজিটিভ শনাক্ত হয়।
তবে এইচএমপিভি বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি নয়। এই ভাইরাস থেকে মহামারি হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। শিশু, বৃদ্ধ ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম এমন মানুষের জন্য ভাইরাসটি ঝুঁকিপূর্ণ। সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এইচএমপিভি নিয়ে আয়োজিত বিশেষ সেমিনারে এসব কথা বলা হয়।
এইচএমপিভি হলো শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা সাধারণত মৃদু ঠান্ডা-জাতীয় উপসর্গ তৈরি করে। তবে এটি বিশেষত ছোট শিশু ও বয়স্কদের মতো দুর্বল এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম এমন জনগোষ্ঠীর মধ্যে মারাত্মক অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
এইচএমপিভি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের বিস্তার রোধে ৬টি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
১. হাত পরিষ্কার রাখা: কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানির সাহায্যে হাত ধুয়ে নিন। সাবান ও পানি না থাকলে অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
২. শ্বাসযন্ত্রের সহায়ক আচরণবিধি মেনে চলুন: কাশি বা হাঁচির সময় মুখ ও নাক টিস্যু বা কনুই দিয়ে ঢেকে ফেলুন। ব্যবহৃত টিস্যু সঙ্গে সঙ্গে ডাস্টবিনে ফেলে দিন এবং হাত ধুয়ে নিন।
৩. ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: যেসব ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার উপসর্গ রয়েছে তাদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। অসুস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে তৈজসপত্র, তোয়ালে/গামছা বা বিছানার চাদর ভাগাভাগি করবেন না।
৪. অসুস্থ থাকলে বাড়িতে থাকুন: যদি কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে বাড়িতে বিশ্রাম নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫. পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা: নিয়মিত ব্যবহৃত বস্তু এবং পৃষ্ঠতল যেমন দরজার হাতল, সুইচ এবং মোবাইল ডিভাইসগুলো পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করুন।
৬. মাস্ক ব্যবহার করুন: ভিড় বা অপর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের এলাকায় মাস্ক পরা শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা কমাতে সহায়ক হয়।
এই পদক্ষেপগুলো মেনে চললে এইচএমপিভি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং জনস্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চললে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে।