কাগজ প্রতিবেদক : বন্ধ ভোরের কাগজ খুলে দেয়া ও অষ্টম ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বকেয়া বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পরিশোধের দাবিতে রাজধানীর কাকরাইলে এইচআর ভবন ঘেরাও করেছে পত্রিকাটির সাংবাদিক কর্মচারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ভোরের কাগজের প্রকাশক সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রধান ব্যাবসায়ীক কার্যালয় এইচআর ভবন ঘেরাও করে রাখেন তারা। ঘেরাও কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা অনতিবিলম্বে ভোরের কাগজ কার্যালয় খুলে দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবি জানান। একইসঙ্গে পত্রিকাটির কর্মীদের সকল দেনা-পাওনা পরিশোধের দাবিও জানান তারা।
ঘেরাও কর্মসূচিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, কোনো গণমাধ্যম বন্ধ হোক তা আমরা চাই না। যে কাজটি অতীতে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার করেছিল। আমরা চাই ভোরের কাগজের প্রকাশনা অব্যাহত থাকুক। তিনি অনতিবিলম্বে ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয় খুলে দিয়ে পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবি জানান। তিনি বলেন, সংবাদকর্মীদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন হতেই পারে। এজন্য কি পত্রিকা বন্ধ করে দিতে হবে? দেনা পাওনা নিয়ে সমস্যা থাকলে উভয়পক্ষ বসে সমাধান করা যেতে পারতো। কিন্তু পত্রিকা বন্ধ তো কোনো সমাধান হতে পারে না। এতগুলো লোককে বেকার করা, পথে বসিয়ে দেয়া, সংবাদকর্মীদের সঙ্গে এ ধরনের অন্যায় আচরণ বন্ধ করতে হবে। ভোরের কাগজের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ডিইউজের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমরা এখনো কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করিনি। আমরা চাই, বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক। অন্যথায় ভোরের কাগজের সহকর্মীদের নিয়ে বিএফইউজে ও ডিইউজে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, এভাবে কথায় কথায় পত্রিকা বন্ধের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। কোনো রকম নোটিশ ছাড়া হঠাত পত্রিকা বন্ধ করা মেনে নেয়া যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোরের কাগজের সংবাদকর্মীদের দাবি আদায় না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের পাশে আছি এবং থাকবো।
ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান বলেন, ভোরের কাগজের সংবাদকর্মীদের দাবি দ্রুত মেনে নিয়ে সব দেনা-পাওনা পরিশোধ করুন। পত্রিকার কার্যালয় খুলে দিয়ে প্রকাশনা অব্যাহত রাখুন। অন্যথায় আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক মো. আবু বকর, ডিইউজের সাবেক সহসভাপাতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওছার হোসেন, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মুকুল শাহরিয়ার, সম্পাদকীয় বিভাগের ইনচার্জ সালেক নাসির উদ্দিন, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন হাশিম, স্টাফ রিপোর্টার এস এম মিজান, বিজ্ঞাপন বিভাগের ডেস্ক নির্বাহী মো. আক্কাছ আলী ও অফিস সহকারি আব্দুল ওয়হাব প্রমুখ।
এছাড়া কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ভোরের কাগজের সার্কুলেশন বিভাগের ইনচার্জ তসলিম চৌধুরী, বিজ্ঞাপন বিভাগের ডেপুটি ম্যানজার নুর মোহাম্মদ স্বপন, কম্পিউটার বিভাগের ইনচার্জ গোলাম কিবরিয়া, স্পোর্টস ইনচার্জ শামসুজ্জামান শামস, আইটি বিভাগের ইনচার্জ মেহেদী হাসান, উৎপাদন বিভাগের ইনচার্জ শরণ হাওলাদার প্রমুখ। এছাড়া মানববন্ধন ও সমাবেশে ভোরের কাগজের সব বিভাগের সাংবাদিক-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ভোরের কাগজ ৮ম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে- এমন ঘোষণা দিয়ে সরকার থেকে ৯০০/-টাকা কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। অথচ সাংবাদিক-কর্মচারিদের ওয়েজ বোর্ডের বেতন স্কেলের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে। এমনকি কোনো নিয়োগপত্র দেয়নি। আজকের কর্মসূচি থেকে বন্ধ পত্রিকা খুলে দেয়া, নিয়োগপত্র প্রদান, ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নসহ সমস্ত বকেয়া বেতন-ভাতা ও সার্ভিস বেনিফিট দিতে হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এসব দাবি দাওয়া মানা না হলে আগামী শনিবার বিকাল ৪টায় ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপরও দাবি মানা না হলে শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।