বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন , ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে দেশের যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছিল, তা ‘ভুয়া’ । এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন না তোলার জন্য পুরো বিশ্বকে দায়ী করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার কয়েক সপ্তাহের আন্দোলনের মুখে গত আগস্টে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তারপর দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেন ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শেখ হাসিনা গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যান এবং তারপর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. ইউনূস।
রয়টার্স বলেছে, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশের অর্থনীতি ও বিশাল গার্মেন্টস শিল্পকে ঘুরে দাঁড় করানোর কৃতিত্ব দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে। যদিও সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে দমন করার অভিযোগ করেছেন।
২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, হত্যা, দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য তাকে হস্তান্তরে দিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।তবে শেখ হাসিনা ও তার দল কোনও ধরনের ভুল করার কথা অস্বীকার করেছে। এছাড়া নয়াদিল্লি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
আরও পড়ুন-বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশে ইনভেস্ট করতে চায়: প্রেস সচিব
সুইজারল্যান্ডের আলপাইন রিসোর্টে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) দাভোসে সবাইকে বলছিলেন কীভাবে একটি দেশ চালাতে হয়। কিন্তু কেউই সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। এটি মোটেও ভালো বিশ্ব ব্যবস্থা নয়।’তিনি বলেন, ‘এর জন্য পুরো বিশ্ব দায়ী। যে কারণে বিশ্বের জন্য একটি ভালো শিক্ষা এটি।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। এটা একেবারে ভুয়া প্রবৃদ্ধির হার।’কেন তিনি এই প্রবৃদ্ধির হারকে ভুয়া বলে মনে করেন সে বিষয়ে রয়টার্সকে বিস্তারিত কিছু বলেননি ড. ইউনূস। তবে ব্যাপক-ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির গুরুত্ব ও সম্পদের বৈষম্য কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।১৭ কোটি মানুষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন-বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত ৩৬৭ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের আগে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার সময় এই হার ছিল প্রায় ৫ শতাংশ।২০২৩ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসাবে তকমা দিয়েছিল।
ওই সময় বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর ২০১৫ সালে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।